বান্দরবানে ঈদের টানা ছুটিতে আগামীকাল বুধবার থেকে হাজারো পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর ঈদের পরের দিন থেকে পর্যটকেরা ভ্রমণে আসেন শৈল শহরটিতে। এবারও সেভাবেই হোটেল-মোটেলে বুকিং হয়েছে। পর্যটকদের বরণে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল-রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন।

জেলা শহর ও শহরতলির আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র ও আবাসিক হোটেল-রিসোর্টগুলোয় গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের আগমন উপলক্ষে পরিচ্ছন্নতার কাজসহ নানা ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আজ মঙ্গলবার থেকে কিছু পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। পরিবহন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আজ সকাল থেকে দেবতাখুম, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ও নীলগিরিতে প্রায় দেড় শ গাড়ি নিয়ে পর্যটকেরা জেলা সদর থেকে বের হয়েছেন। আগামীকাল তিন থেকে চার গুণ বাড়তে পারে। আবাসিক হোটেলে-মোটেল ও অবকাশযাপনকেন্দ্রগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। পর্যটননির্ভর পরিবারগুলোও পর্যটকের আশায় ফলমূল, কোমরতাঁতের কাপড় ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন।

বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের শৈলপ্রপাতের কোমরতাঁতের কাপড় বিক্রি করেন জুলি বম। তিনি জানান,পবিত্র রমজান মাসে পর্যটকের আগমন কম ছিল। আজ থেকে বিক্রি বেড়েছে। আগামীকাল আরও বাড়বে বলে আশা করছেন। মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রের প্রবেশমুখের দোকানি মহিউদ্দিন বললেন, পানির বোতল, স্মারকপণ্য (হস্তশিল্পের সামগ্রী ), পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী কাপড় ও জুমের বিন্নি ধানের চালের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বেশি। এ জন্য এসব পণ্য দোকানে রেখেছেন।

বাসস্টেশন এলাকার হিলভিউ হোটেলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ পারভেজ জানালেন, চাঁদরাত থেকেই পর্যটকেরা হোটেল বুকিং দিতে শুরু করেছেন। তাঁদের হোটেলে প্রায় সব কক্ষের আগাম ভাড়া হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনের জন্য কয়েকটি কক্ষ খালি রাখা হয়েছে।

হোটেল-রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন জানান, জেলা শহর ও শহরতলিতে ৭৩টি এবং উপজেলা শহরে, বিশেষ করে লামা ও আলীকদমে আরও সমসংখ্যক হোটেল, মোটেল, অবকাশযাপনকেন্দ্র রয়েছে। এসব হোটেলে একসঙ্গে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার পর্যটকের আবাসনসুবিধা দেওয়া সম্ভব। এগুলোর কক্ষ ইতিমধ্যে আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে পর্যটক আসা শুরু হবে।

কোথায় ভ্রমণ করবেন

জেলা শহরে প্রবেশমুখে অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র। বৃক্ষরাজির সবুজে ঘেরা, নীলজলের হ্রদ ও ঝুলন্ত সেতুতে সময়টা কাটবে দারুণ। তারপর পড়ন্ত বিকেলে নীলাচলের পাহাড়চূড়ায় গিয়ে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখা যেতে পারে। জেলার শৈলপ্রপাতে গেলে একসঙ্গে দেখা যাবে ঝরনার সৌন্দর্য ও বম জনগোষ্ঠীর জীবনধারা। শৈলপ্রপাত থেকে পাহাড়ি সড়ক ধরে যেতে থাকলে চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরি পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে পাহাড়ি মানুষের জীবনের সরলতা ও পাহাড়ের উদারতা দেখা যাবে। তবে চিম্বুক ও নীলগিরি পাহাড়ে স্থানীয় চাঁদের গাড়িতে (ফোর হুইল জিপ) করে যাওয়াই নিরাপদ। কারণ সমতলের চালকেরা পাহাড়ি সড়কে যানবাহন চালাতে অভ্যস্ত নন। বাসস্টেশন এলাকায় চাঁদের গাড়ির ভাড়াও নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। কারও নৌকাভ্রমণের শখ থাকলে জেলা শহরের ক্যচিংঘাটায় গেলে সহজে ভ্রমণসেবা পাওয়া যাবে।

পাহা্ড় থেকে দেখা বান্দরবানের শ্যামল নিসর্গ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন

এছাড়াও পড়ুন:

হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামের কাছে এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর শহরটিতে এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অবশ্য সেখানে অল্প অল্প করে পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন।

গত সপ্তাহে শহরের প্রধান মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, খালি হয়ে গিয়েছিল হোটেলগুলো। এখন সেখানে আবার অল্প অল্প করে প্রাণ ফিরছে।

গত মঙ্গলবার পেহেলগাম থেকে তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়চূড়ার উপত্যকা বৈসারানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় একদল বন্দুকধারী। এই বৈসারানকে অনেক সময় ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়।

বৈসারানের হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এবং ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কাশ্মীরের দুই অংশ দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তরে পুরো অঞ্চলকে দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।

দিল্লি এ হামলার কোনো সামরিক জবাব দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

পেহেলগামের মতো এলাকার অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। হামলার জেরে সেখানে বহু মানুষের জীবিকা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’১৮ ঘণ্টা আগেহামলার পরদিন (২৩ এপ্রিল) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেহেলগামের বৈসারান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাপ্তাই হ্রদের ‘দ্বীপে’ রিসোর্ট-কটেজ, টানছে পর্যটক
  • পুরীর আদলে পশ্চিমবঙ্গের দীঘায় জগন্নাথ মন্দির, উদ্বোধন আজ
  • ভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট
  • হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা
  • কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো গোলাগুলি