ঘাটতির শঙ্কায় রাজস্ব আদায় নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের উদ্বেগ
Published: 3rd, April 2025 GMT
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাজস্ব আদায়ে গতি ফিরে এলেও বছর শেষে একটি বড় ধরণের রাজস্ব ঘাটতির সম্মুখীন হতে চলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথে একটি ঋণ চুক্তির মধ্যে রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় রাজস্ব আয়ের একটি টার্গেটও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের হার যেভাবে এগুচ্ছে তা এই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে না। ফলে ঋণের বাদবাকি কিস্তি সংস্থাটির কাছ থেকে পেতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে। তা স্বত্বেও গত আট মাসে ২ লাখ ৮০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮১৭ টাকা। কিন্তু আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব ঘাটতি ২১ শতাংশ কম ছিল।
অন্যদিকে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ৯৭১ কোাটি টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে টানা তিন মাস রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
এনবিআরের তথ্য অনুসারে, ফেব্রুয়ারি মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ, যা এর আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল প্রায় ৭ শতাংশ।
এ বিষয়ে এনবিআর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোন গবেষণা ছাড়াই প্রতিবছর একটি বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বছর শেষে এসে দেখা যায়, মূল্য লক্ষ্যমাত্রা তো দূরের কথা সংশোধিত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করাও সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন পণ্য দাম কমানোর জন্য এই সকল পণ্য’র ওপর কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে করে রাজস্ব আদায় কমে গেছে। তবে বছরের বাদবাকি সময়ে এই আদায় আরও বাড়বে বলে আমাদের ধারণা।”
এদিকে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায় হোক বা না হোক, আগামী তিন অর্থবছরের জন্য মোট ১৮ লাখ ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের একটি পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া হবে এনবিআরকে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে রাজস্বখাত থেকে আয় করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর থেকে আসবে পাঁচ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৫৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে এনবিআর থেকে আসবে পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে সাত লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর থেকে আদায়ের পরিকল্পনা প্রাক্কলন করা হয়েছে ছয় লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
এদিকে, বাজেট পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন করা সম্ভব হয় না। গত আট অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি। আর এই ধরণের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে একধরণের ‘সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।
ঢাকা/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমতি ছাড়াই গাসিক কর্মকর্তা কিবরিয়ার বিদেশ যাত্রা
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘন, তথ্য গোপন, অনুমতি ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ ও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর গত ১৫ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিক শাহেদ আলম নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গোলাম কিবরিয়া সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তথ্য গোপন করে বেসরকারি পাসপোর্ট (নং A০১২৬৬৬১২) সংগ্রহ করেছেন, যা সরকারি চাকরি বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি একাধিকবার কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
অভিযোগকারী দাবি করেন, তিনি ২০২৪ ও ২০২৫ সালের বিভিন্ন সময়ে কানাডা সফর করেছেন, যার কোনো অনুমোদন তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেননি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ ২০২৫ সালের ১৯ জুন কানাডা সফরের সময় তিনি প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, গোলাম কিবরিয়া নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে কানাডায় সেকেন্ড হোম এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগ করেছেন। তার নামে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা পাচারের দুর্নীতির মামলাও চলমান রয়েছে। এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনো পদে বহাল থেকে প্রভাব খাটাচ্ছেন এবং যেকোনো সময় বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অভিযোগকারী বলেন, “তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নিয়মিত বিদেশে যাচ্ছেন, যা সরকারি চাকরি বিধিমালার সরাসরি লঙ্ঘন এবং গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
সূত্র জানায়, গোলাম কিবরিয়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা। তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। তিনি দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে কানাডায় স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন। গাজীপুরবাসীর স্বার্থে এমন বেপরোয়া ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মুহাম্মদ সোহেল হাসান বলেন, “লিখিত অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করা হয়েছে। প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন। তথ্য গোপন করে বিদেশ যাত্রা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, প্রমাণ মিললে বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হবে।”
এ বিষয়ে জানতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে শোকজ করা হয়েছিল এবং তিনি জবাবও দিয়েছেন। শোকজের প্রতিবেদনটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।”
এ বিষয়ে গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/রেজাউল/এস