রক্ষার বদলে বছরের পর বছর নদী হত্যায় শত আয়োজন উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে। দখল প্রতিযোগিতায় যেন কেউ পিছিয়ে নেই। মুখে নদী রক্ষার কথা বললেও বাস্তবে সরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী সবাই মিলেমিশে নদী, খাল ও জলাধার দখলে ব্যস্ত। নদীখেকোদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ভৈরব নদও। চারদিক থেকে দখল-দূষণে নদটির টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে।

২০১৭ সালে বাগেরহাটে ভৈরব নদ রক্ষায় মহাআন্দোলন হয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযানে নামে। উচ্ছেদ শেষে স্থায়ীভাবে নদীর তীর রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও সামাজিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ অংশ নিয়ে শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন পেশাজীবী, ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ নদী রক্ষায় শপথ ও অঙ্গীকার করেন। নদী রক্ষায় সেই শপথও ভাঙছেন সবাই মিলেই।

সেই শপথের কথা তুলে ধরে স্থানীয় শহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্র– ওই শপথ কেউ মানেনি। এই সাড়ে সাত বছরের আমাদের নদী আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। 

ভৈরব নদ বাগেরহাট শহরের উত্তর দিক থেকে এসে সুপারিপট্টি খেয়াঘাটের কাছ দিয়ে পূর্ব দিকে চলে গেছে। দক্ষিণে প্রবাহিত এ নদের অংশ দড়াটানা নদী নামে পরিচিত। নদের পশ্চিম তীরে বাগেরহাট শহর ও জেলার প্রধান বাজার। এখান থেকে তীর ধরে গেলে উত্তর-দক্ষিণ দু’দিকেই কয়েকটি ময়লার স্তূপ চোখে পড়ে। একদিকে অবৈধ দোকানঘর, কাঁচাবাজার, ডেকোরেটরের পণ্যসহ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য ও আসবাব রেখে দখল করে রেখেছে পুরো তীর। অন্যদিকে, বাজার থেকে মুনিগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে কাঠ, ইট ও বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। সেই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন নালা থেকেও বর্জ্য যাচ্ছে নদীতে।

সরেজমিন দেখা যায়, শহরের ডাকবাংলো এলাকায় ভৈরব নদের প্রায় ২৫ ফুট ভেতরে স্থাপনা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভের নামে ওই অবকাঠামোর পর নদের পশ্চিম পারের বড় একটি এলাকায় চর পড়ে গেছে। ফলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে প্রবহমান নদ। দড়াটানা-ভৈরব নদের বিভিন্ন স্থানে এমন অসংখ্য স্থাপনার পাশাপাশি প্রতিনিয়তই চলছে দখল। প্রায় সাত বছর আগে দড়াটানা নদীর ভদ্রপাড়া খেয়াঘাট পারে নদীর মাঝে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। পাশের নদী বাঁকের বড় চরটি দখল করে বালু ফেলে উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে পার্ক। এতে নদীর এই অংশ হারিয়েছে প্লাবনভূমি।

পার্ক থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দক্ষিণে নতুন করে নদীর মাঝে সম্প্রতি একটি স্থাপনা তৈরি করেছে মৎস্য বিভাগ। সাসটেইনেবেল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের অধীনে জেটি নির্মাণের নামে নদীর প্রায় ২০ ফুট ভেতর পর্যন্ত পাইলিং করে আটকে দেওয়া হয়েছে প্রবাহ। নিয়ম অনুযায়ী, নদী বা তীরে কোনো ধরনের নির্মাণকাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা হয়েছে। তবে মৎস্য বিভাগের জেটি নির্মাণকাজে তা মানা হয়নি। 
প্রকল্পের কাজ শুরুর পরপরই মৎস্য বিভাগের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা দাবি করেন, এই প্রকল্প ঢাকা থেকে পাস হয়েছে। তারা এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানেন না। আর এই কাজে নদীর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।

বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, যেখানে জীবন্ত সত্তা হিসেবে মূল্যায়ন করে নদী সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে এই ধরনের কার্যক্রম সরকারের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভৈরব নদের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হবে। এমনিতেও দখল-দূষণ আর বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে নদটিকে প্রায় শেষ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি দপ্তর যারা নদী রক্ষা করবে, তারাই যদি দখল করতে থাকে, তাহলে কীভাবে নদী বাঁচবে। 

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, যেসব নদী-খাল দখল ও দূষণে হুমকির মুখে রয়েছে, আমরা সে বিষয়ে দ্রুত খোঁজ নেব এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট প রকল প ব যবস য় নদ র প ব নদ র শহর র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সিডনিতে তিন তারকার হলো দেখা

দূর প্রবাসের ব্যস্ত জীবনে হঠাৎ দেশের চেনা মুখের দেখা মিলে গেলে সেটি কেবল একটি সাধারণ সাক্ষাৎ থাকে না। বরং হয়ে ওঠে দেশের স্মৃতি টেনে আনা এক মুহূর্ত, হয়ে ওঠে একটুকরো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা হলো গত শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনির এডমন্ডসন পার্ক মলে।

বাংলাদেশের তিন অঙ্গনের তিন পরিচিত মুখ—ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস, গায়ক তাহসান খান ও অভিনেতা মাজনুন মিজান সেখানে হঠাৎ একত্র হলেন। ব্যস্ত নগরের ভিড়ে এই তিন তারকার দেখা হয়ে গেল এক ‘অপ্রত্যাশিত’ আড্ডায়।

তিন ভুবনের তারকারা
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার ইমরুল কায়েস সম্প্রতি পরিবার নিয়ে সিডনিতে স্থায়ী হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে বহু স্মরণীয় ইনিংস খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এখন নতুন করে জীবনের আরেক অধ্যায় শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। অভিনেতা মাজনুন মিজানও অনেক দিন ধরেই পরিবার নিয়ে সিডনিতে বসবাস করছেন।

ছোট পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেতা দেশে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। নাট্যাঙ্গনের পরিচিত মুখ হলেও সিডনিতে তিনি অনেকটা পর্দার আড়ালেই থাকেন, তবু প্রবাসী বাঙালিদের কাছে তিনি প্রিয়জন।
অন্যদিকে গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খান ছিলেন সফররত। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে কনসার্ট করছেন তিনি। ব্রিসবেন ও অ্যাডিলেডে সফল শো শেষে সিডনির কনসার্টেও হাজারো দর্শকের মন জয় করেছেন। এরপর সামনে রয়েছে মেলবোর্ন ও পার্থে তাঁর পরিবেশনা। সিডনিতে সফল কনসার্টের রেশ এখনো কাটেনি, এরই মধ্যে ঘটে গেল এই মিলন।

সিডনিতে গাইছেন তাহসান

সম্পর্কিত নিবন্ধ