ভিউ ব্যবসায়ী সাংবাদিক পরীমনিকে তাদের রুটিরুজির অংশ বানিয়েছে: সাদী
Published: 7th, April 2025 GMT
ভিউ ব্যবসায়ী সাংবাদিক পরীমণিকে তাদের রুটিরুজির অংশ বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কণ্ঠশিল্পী শেখ সাদি। সম্প্রতি পরীমণির বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলেছেন পিংকি আক্তার নামের এক গৃহকর্মী। এ নিয়ে ঢাকার ভাটারা থানায় অভিযোগও করেছেন সেই গৃহকর্মী। পরীমণি ও গৃহকর্মীর এই ইস্যুতে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। এমন অবস্থায় নায়িকার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর কথিত প্রেমিক তরুণ গায়ক শেখ সাদী। পিংকি আক্তারকে তিনি মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে ভিউ ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের সমালোচনা করেছেন এই গায়ক।
বেশ কয়েক মাস ধরেই নায়িকা পরীমণির সঙ্গে নাম জড়িয়েছেন শেখ সাদী। প্রায় সময় তাদের একসঙ্গে দেখা মেলে। দুজনের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, তাঁরা দুজন প্রেমের সম্পর্কে আছেন। পরীমণি ও শেখ সাদীর প্রসঙ্গটি প্রথম আলোচনায় আসে কয়েক মাস আগে, ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। এদিন পরীমণি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে এলে জামিনদার হন শেখ সাদী। এর পর থেকে পরীমণি ও শেখ সাদী দারুণভাবে চর্চায় আসেন।
শেখ সাদী নিজের ফেসবুক পোস্টে কয়েকটি প্রশ্ন রেখে লিখেছেন, ‘একটু ভাবেন তো, অনলাইনে আপনার ছবি পোস্ট করে একজন জানাল, আপনি একজন রেপিস্ট! যার কোনো প্রমাণ নেই এবং ঘটনাটা অবাস্তব। এটা দেখার পর নিশ্চয়ই আপনার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠবে। ধরুন, এই পরিস্থিতিতে আপনি কোনোভাবেই সে পোস্ট সরাতে পারছেন না। মানুষ আপনার বাবা-মাকে ট্যাগ করছে। আপনার আত্মীয়স্বজনকে ট্যাগ করছে। আপনার পাশের বাসায় থাকা লোকটাও তা শেয়ার করে ছি ছি করছে। কিন্তু আপনার কিচ্ছু করার নাই। আপনি কয়জনকে বোঝাবেন? মিডিয়ার এই ভিউ ব্যবসার ফাঁদে বন্দী হয়ে যদি আপনার সম্মানহানি হয়, আপনার করারও কিছু থাকে না। তখন আসলে আপনার পরিস্থিতিটা কী হতে পারে, একবার কি ভেবেছেন?’
পরীমণির সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করে ফেসবুক পোস্টে শেখ সাদী লিখেছেন, ‘আপনাদের জীবনে এমনকি কখনো হয় নাই যে আপনি কোনো কাজ ঠিকমতো করার পরও আপনার প্রতি ক্ষোভ বা জেদের বশবর্তী হয়ে মিথ্যা ছড়ানো হয়েছে? সত্য জানার আগেই মিডিয়ার কিছু ক্ষোভ বা বানোয়াট গল্পকে আপনি সত্য ধরে নিয়ে পরীকে বুলিং করছেন। একবারও কি মনে হলো না, সে একজন প্রতারক বা বড় মাপের মিথ্যাবাদী? সেটা যাচাই ছাড়াই সস্তা ভিউয়ের জন্য এসব প্রচার করলেন। এখানে তো আমার বা সৌরভের কথা আসার প্রশ্নই আসে না। তাই এটা পরিষ্কার যে উক্ত ঘটনার মূল উদ্দেশ্য পরীকে হেয় করা। আর পরীর সঙ্গে আমি ও আমার পরিবার, মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি, যেটা আমি আর আমার পরিবার ডিজার্ভ করি না। পরী আপনাদের ভালোবাসার জন্যই আজ একজন সুপারস্টার। কিন্তু তার উপহারস্বরূপ যেকোনো বিষয়ে তার ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে তাঁকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়! কিছু ভিউ ব্যবসায়ী সাংবাদিক পরীর জীবনের খবরকে বানিয়েছে তাদের রুটিরুজি অংশ! তারা ভুলে যায়, নায়িকা চরিত্রের বাইরেও পরী একজন নারী, একজন মা ও সবার ঊর্ধ্বে সে একজন মানুষ।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ উ ব যবস য় আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব
ট
১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালিন বাকশাল সরকার চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। এতে হাজারো সাংবাদিক রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। জনগন সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর জানা থেকে বঞ্চিত হয়। গোটা দেশে যেন অন্ধকার নেমে আসে। জবরদস্তিমূলকভাবে তখন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবীদেরকে বাকশালে যোগদানে বাধ্য করা হয়।
অনেক সাংবাদিক সেদিন জীবন-জীবিকার ভয়ে বাকশালের ফরম পূরণ করেন। তাই সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। আজ দিবস আর কালো নেই। তথ্য প্রবাহের যুগে এখন মন খূলে লেখা যায়, প্রচার করা যায়। বিশেষ করে গেলো বছরের ৫ আগষ্টে ফ্যাসিবাদের পতনের পর গনমাধ্যমে অনেকটা স্বাধীনতা বেড়েছে। গণভবনের তেল তেলা তোষামদি প্রশ্ন এখন আর চলে না। বলা চলে গণমাধ্যম বিগত ১৬ বছরের চাইতে এখন বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে একটা প্রশ্ন রয়েই গেছে তা হলো পেশাদার কিছু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে । এসব মামলা বেশির ভাগই আক্রোশের কারনে হয়েছে। বাদীকে না জানিয়ে একটা মহল মামলায় সাংবাদিকের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটা নিন্দনীয়। একজন সাংবাদিক মানুষ খুনের মামলার আসামী এটা মেনে নেয়া দুস্কর ।
৫ আগষ্টে আগে যারা তোষামদি করতো , সঠিক সংবাদ লিখতে কিংবা প্রচার করতো পারতো না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দোহাই দিয়ে যারা গনমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করে রেখেছিল তাদের ভয়ে আতংকে থাকতো। তাদের অনেকে এখন গনমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে মিথ্যা প্রপ্রাগান্ডা চড়াচ্ছে। গনহত্যাার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি একটা দলের প্রতি বিশেষ দরদ দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য চড়াচ্ছে। অনেকে তাদের ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। যাচাই বাছাই ছাড়া মিথ্যা তথ্য শেয়ার করছে। তাদের এখনই থামা দরকার। সত্য প্রকাশ করা একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব । এ পেশাগত দায়িত্বের কেউ অপব্যবহার করলে মুলত তিনিই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। একসময় তার মিথ্যা সংবাদ পরিবেশের কারনে কেউ তার পাশে আর থাকবেন না। তাকে পেশাদার সাংবাদিক নয়, একজন দালাল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আস্তুাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।
পেছনের কথায় ফিরে আসি, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সংবাদ পত্রের কালো দিবস পেরিয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভাবনীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর সাংবাদিকদের লেখার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত করেন।
জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সব কালাকানুন শিথিল করে দেশের সব জায়গা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহ প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, প্রকাশিত সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখা সরকারেরই দায়িত্ব বলেই তিনি মনে করতেন। তিনি রাজশাহী থেকে ‘দৈনিক বার্তা’ নামে একটি প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এ পত্রিকা ঘিরে সমগ্র উত্তরাঞ্চলে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। বহু সাংবাদিকের কর্মসংস্থান হয়।ডিক্লারেশনের শর্ত শিথিল করার কারণে সে সময় ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয়, জেলা এমনকি থানা পর্যায় থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। এসব পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে জিয়াউর রহমান সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টননীতিও শিথিল করেন। বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বণ্টন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন। একই সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞাপনের ৬০ ভাগ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় এবং বাকি ৪০ ভাগ মফস্বল থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সারা দেশে সংবাদপত্র প্রকাশনায় নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হাঁটে দলটি। গত প্রায় ১৫ বছরে আমার দেশ, দিনকাল, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবিসহ জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দিয়েছিল । ৬০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে। একের পর এক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কথায় সাংবাদিক গ্রেফতার তখন নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয়ে একদল চাটুকার আওয়ামীলীগের দু:শাসনের মদদ দিয়ে জাতির উপর জুলুমের মাত্রা আরো বাড়িয়েছিল। ছাত্রজনতার বিপ্লবে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ পতনে মানুষ যেমন স্বস্তি ফিরে পেয়েছে তেমনি গণমাধ্যম ফিরেছে অবাধ স্বাধীনতায়।
লেখক : সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)