বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৬৪ জেলা থেকে ২ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হবে। বাংলাদেশ পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলাভিত্তিক শূন্য পদ অনুসারে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী নেওয়া হবে ঢাকা জেলা থেকে—১৬৭ জন। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১০৬ জনকে নেওয়া হবে।

এ ছাড়া গাজীপুর জেলায় নেওয়া হবে ৪৭ জন, মানিকগঞ্জে ১৯, মুন্সিগঞ্জে ২০, নারায়ণগঞ্জে ৪১, নরসিংদীতে ৩১, ফরিদপুরে ২৭, গোপালগঞ্জে ১৬, মাদারীপুরে ১৬, রাজবাড়ীতে ১৫, শরীয়তপুরে ১৬, কিশোরগঞ্জে ৪১, টাঙ্গাইলে ৫০, ময়মনসিংহে ৭১, জামালপুরে ৩২, নেত্রকোনায় ৩১, শেরপুরে ১৯, বান্দরবানে ৫, কক্সবাজারে ৩২ জন।

আরও পড়ুনজীবন বীমা করপোরেশনে বড় নিয়োগ, নেবে ৫৪০ জন১৮ ঘণ্টা আগে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নেওয়া হবে ৩৯ জন, চাঁদপুরে ৩৪, কুমিল্লায় ৭৫, খাগড়াছড়িতে ৯, ফেনীতে ২০, লক্ষ্মীপুরে ২৪, নোয়াখালীতে ৪৩, রাঙামাটিতে ৮, রাজশাহীতে ৩৬, জয়পুরহাটে ১৩, পাবনায় ৩৫, সিরাজগঞ্জে ৪৩, নওগাঁয় ৩৬, নাটোরে ২৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৩, বগুড়ায় ৪৭, রংপুরে ৪০, দিনাজপুরে ৪২, গাইবান্ধায় ৩৩, কুড়িগ্রামে ২৯, লালমনিরহাটে ১৭, নীলফামারীতে ২৫, পঞ্চগড়ে ১৪, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৯, খুলনায় ৩২, যশোরে ৩৮, ঝিনাইদহে ২৫, মাগুরায় ১৩, নড়াইলে ১০, বাগেরহাটে ২০, সাতক্ষীরায় ২৮, চুয়াডাঙ্গায় ১৬, কুষ্টিয়ায় ২৭, মেহেরপুরে ৯, বরিশালে ৩২, ভোলায় ২৫, ঝালকাঠিতে ৯, পিরোজপুরে ১৫, বরগুনায় ১২, পটুয়াখালীতে ২১, সিলেটে ৪৮, মৌলভীবাজারে ২৭, সুনামগঞ্জে ৩৪ ও হবিগঞ্জে ২৯ জন কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হবে।

এই দুই হাজার কনস্টেবল নিয়োগে আবেদন শেষ হয়েছে গত ১৮ মার্চ। আবেদন শেষে বিভিন্ন জেলার প্রার্থীদের শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই, শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা এবং মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা আলাদাভাবে নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই ও শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিধিমালায় থাকছে না নারী ও পোষ্য কোটা১১ এপ্রিল ২০২৫

যেসব জেলায় পরীক্ষা বাকি আছে সেগুলোর সময়সূচি—

নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কক্সবাজার, মেহেরপুর, নাটোর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, শেরপুর, ভোলা, বরগুনা, ময়মনসিংহ গাজীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও বান্দরবান জেলার প্রার্থীদের শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই ও শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষা ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এই জেলার প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে ১৩ মে এবং মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে ২২ মে।

নোয়াখালী, বাগেরহাট, যশোর, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, মৌলভীবাজার, নরসিংদী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, মাগুরা, পাবনা, রংপুর, পিরোজপুর ও বরিশাল জেলার প্রার্থীদের শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই ও শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষা ১৯, ২০ ও ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এই জেলার প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে ২০ মে এবং মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে ২৯ মে।

আবেদনকারী প্রার্থীদের এসব তারিখ অনুসরণ করে নির্ধারিত সময়ে নিজ নিজ জেলার পুলিশ লাইনস মাঠে উপস্থিত থাকতে হবে।

আরও পড়ুনআইপিসিসি বৃত্তি, ৫ থেকে ১৫ পৃষ্ঠার গবেষণাপ্রস্তাবে বছরে মিলবে ১৫০০০ ইউরো২২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক গজপত র য চ ই পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

নারীর আর্থসামাজিক ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তি: ক্ষুদ্রঋণ ও জলবায়ু সহনশীলতা পরিপ্রেক্ষিত

আলোচনা:

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান,

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)

আজ একটি ছোট প্রকল্প থেকে অনেকগুলো বিষয়ের অবতারণা হয়েছে। আমাদের ক্ষুদ্রঋণ খাতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বেশ কিছু বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সব অংশীজন মিলে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, এ বিষয়ে কিছু বলার সুযোগও তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্রঋণ খাতের নিজের দিকে তাকানোর একটা বাধ্যবাধকতাও তৈরি হয়েছে।

ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে একটি দৃঢ় ধারণা রয়েছে যে নারীর ক্ষমতায়নে অনেক অর্জন হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই। এখনো অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। অনেক নারী এখনো নিজে ঋণের অর্থ ব্যবহার করতে জানেন না, তাই করেন না; অর্থাৎ তাঁদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বা পেশাগত জ্ঞান নেই। আবার অনেকে জানেন, কিন্তু সামাজিক বাধার কারণে করতে পারছেন না।

ক্ষুদ্রঋণের মূল উদ্দেশ্য ছিল, প্রান্তিক নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে, যিনি দ্রুত ঋণ ফেরত দিতে পারছেন, কেবল তাঁর দিকে মনোযোগ দেওয়া। তাঁকে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে যাঁরা সফল হবেন, শুধু তাঁদের উন্নয়নে আরও সহায়তা করলে হবে না; যাঁরা সফল হতে চান, তাঁদের কথাও মনে রাখতে হবে। এটাই কিন্তু ক্ষুদ্রঋণব্যবস্থার মূল দর্শন ছিল। তাঁদের জন্য বাড়তি কিছু সহায়তা প্রয়োজন।

আমরা কেবল অন্তর্ভুক্তি চাই না, আমরা ক্ষমতায়নও চাই। ক্ষমতায়নের এজেন্ডা খুব জোরালোভাবে সামনে আনা প্রয়োজন। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে ঋণের পাশাপাশি অনুদান দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ অনুদান আসতে পারে তিন জায়গা থেকে—বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল, ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ এবং জাকাত তহবিল।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন

এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান,

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি

বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ খাত নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদান রাখছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নারীরা শুধু আয় বৃদ্ধিই করছেন না; বরং পরিবার, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তবে এই অগ্রগতি দুর্যোগকবলিত ও বিচ্ছিন্ন কিছু এলাকায় যথাযথভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে এখনো যথাযথভাবে পৌঁছায়নি। এ জন্য আমাদের আরও লক্ষ্যভিত্তিক এবং সহনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করি।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত নারীদের ওপর দ্বিগুণ প্রভাব ফেলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাই জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে নারীর আর্থসামাজিক ক্ষমতায়ন, অন্তর্ভুক্তি এবং জলবায়ু সহনশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসব ইস্যু শুধু সামাজিক নায্যতার প্রশ্ন নয়; বরং টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য উপাদান।

গণ উন্নয়ন কেন্দ্র উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় বাস্তবায়িত আইটিএল প্রকল্পটির কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীদের জীবনযাত্রার উন্নয়নে যে অবদান রেখেছে, তা আমাদের অনুকরণীয় হতে পারে।

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু সহনশীল অর্থায়নের উন্নয়নে নীতি প্রণয়নে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জিও-এনজিও ও সব অংশীজনের সমন্বিত প্রয়াসই এই লক্ষ্য পূরণে সফলতা আনবে।

আমি সময়োপযোগী এই গোলটেবিল আয়োজনের জন্য প্রথম আলো, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র ও ক্রিশ্চিয়ান এইডকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

নুজহাত জাবিন

কান্ট্রি ডিরেক্টর,

ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ

জলবায়ু পরিবর্তন জেন্ডার-নিরপেক্ষ নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীরা অস্বাভাবিকভাবে বেশি বোঝা বহন করে, বিশেষ করে বর্ধিত দৈনন্দিন গৃহস্থালির কাজের ক্ষেত্রে। জলবায়ু সহনশীলতার ক্ষেত্রে আমাদের এসব অসমতার বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।

আমাদের এ প্রকল্পে জেন্ডার ট্রান্সফরমেটিভ পদ্ধতিতে কাজ করা হয়েছে। প্রাথমিক ফলাফলগুলো বেশ ইতিবাচক। সেখানে আমরা দেখেছি যে লক্ষ্যভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ ও দক্ষতা উন্নয়নের সমন্বয়ে আমরা যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছি, তা বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। এই জায়গায় ঋণগুলো কীভাবে ব্যবহার করবে, সে বিষয়ে নারীদের কিছু প্রশিক্ষণ দিলে আরও ইতিবাচক প্রভাব রাখা সম্ভব। অর্থাৎ ক্ষুদ্রঋণ ও অনুদানের পাশাপাশি যদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাতে কম বিনিয়োগে বেশি লাভ হয়। এতে দরিদ্র পরিবারটি বুঝতে পারে তারা কোন পরিস্থিতিতে কী করবে।

সাধারণভাবে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। খরা, বন্যা, নদীভাঙন-জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একেক এলাকায় একেক রকম পরিস্থিতি হয়। ফলে সব এলাকার জন্য

একই রকম ব্যবস্থা প্রযোজ্য নয়। প্রকল্পের শিক্ষা থেকে কীভাবে সামনে এগোনো যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।

এম. আবদুস্ সালাম

নির্বাহী প্রধান,

গণ উন্নয়ন কেন্দ্র

গণ উন্নয়ন কেন্দ্র বাস্তবায়িত আইটিএল প্রকল্পটি কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার দুর্যোগপ্রবণ এলাকার ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারী সদস্যদের সঙ্গে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। প্রকল্প গ্রহণ করে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই ক্রিশ্চিয়ান এইডকে। ধন্যবাদ জানাই দৈনিক প্রথম আলোকে, এমন সময়োপযোগী বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনায় আমরা যৌথ অংশী হওয়ার জন্য।

আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও গ্রামীণ ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের নারীরা এখনো পিছিয়ে। তাই নারীর মতামত ও নেতৃত্বে অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও জলবায়ু-সংবেদনশীল ঋণ প্রদানে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। আমাদের কর্ম এলাকার ফলাফলে দেখেছি, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম এই ব্যবধান কমাতে পারে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ক্ষুদ্রঋণ শুধু পারিবারিক আয় বাড়ায় না, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ, সামাজিক মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়।

আমরা চাই, নারীর ক্ষমতায়ন হোক টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব। এই প্রকল্পের গবেষণার ফল ও কাজের অভিজ্ঞতা ও সুপারিশগুলো নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা

সহযোগী অধ্যাপক,

নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আলোচনায় একজন সুবিধাভোগী বলেছেন, আগে তাঁর স্বামী বাইরে কাজ করলেও এখন তিনি ও তাঁর স্বামী একত্রে কাজ করেন। বিষয়টি ভালো লাগার মতো একটি বিষয়। দুজন মানুষ একই সঙ্গে আয় করলে পরিবারের মধ্যে যে বন্ধন তৈরি হয়, সেটি প্রচার করা জরুরি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে কোনো সমজাতীয়ভাবে (হোমোজেনাসলি) বিবেচনা করা যাবে না। কারণ বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় বা লবণাক্তপ্রবণ এলাকার নারীর ওপর রয়েছে এর প্রভাব এবং পরিসরও ভিন্ন ভিন্ন।

দেশে ক্ষুদ্রঋণের প্রথম ও প্রধানতম টার্গেট গ্রুপ হচ্ছে নারী। আমার মতে, ঋণ দিয়ে এমন কাজে নারীকে যুক্ত করতে হবে, যাতে পাবলিক পরিসরে নারীর দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি পায়। নারীর সত্যিকারের ক্ষমতায়নের জন্য তাঁকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে।

অতীতে আমরা দেখেছি, যেকোনো বড় দুর্যোগে নারীর মৃত্যু হয় কয়েক গুণ বেশি। এ জায়গায় আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। এসবের কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারীর পোশাক। নারীরা সাধারণত যে ধরনের পোশাক পরেন, তা পরে সাঁতার কাটা যায় না। ফলে তাঁদের মৃত্যু বেশি হয়। আমার প্রস্তাব হচ্ছে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোয় নারী স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করতে উদ্যোগ নিতে হবে। দুর্যোগের সময় সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মানবতার কাজে উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

চাঁদ মিয়া

প্রভাষক,

নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গুণগত ও পরিমাণগত পদ্ধতির সমন্বয়ে গবেষণাটি করা হয়। এতে প্রশিক্ষণ, ঋণ ও অনুদান সহায়তা পাওয়া ৩৪৩ নারী অংশ নেন । তাঁদের গড় বয়স ছিল ৩৫ বছর।  জরিপে অংশ নেওয়া ২৬ শতাংশের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। ৩২ শতাংশ প্রাথমিক ও ৪৬ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে ঝরে পড়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঋণ ও অনুদান পাওয়া টাকা দিয়ে নারীদের প্রায় ৮৬ শতাংশ ছোট ব্যবসা শুরু করেছেন। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কেউ একটি, কেউ একাধিক কাজে যুক্ত হয়েছেন। নারীরা ৪৮ শতাংশ হাঁস-মুরগি, পশু পালনে, ৪৬ শতাংশ ছোট ব্যবসা এবং প্রায় ৪২ শতাংশ কৃষিকাজে বিনিয়োগ করেছেন। তাঁদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও সঞ্চয়, যে কাজ করছেন, সে বিষয়ে জ্ঞান বেড়েছে। কেউ কেউ ব্যাংকে টাকা জমিয়েছেন। তাঁরা প্রতিদিনের আয় ও ব্যয়ের খরচ ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রশিক্ষণের ফলে তাঁদের পশুপালন বা কৃষিকাজের ব্যবহারিক জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁরা জলবায়ুসহিষ্ণু কৃষি বিশেষ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন না, এমন ফসল চাষ করা শিখেছেন। এর ফলে তাঁদের আয় বেড়েছে।

এ প্রকল্পের নারীরা বিভিন্ন ধরনের কমিউনিটি গ্রুপ ও ইউনিয়ন পরিষদের কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন, সেখানে তাঁরা তাঁদের কথা তুলে ধরছেন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন।

মিজানুর রহমান ভূঁইয়া

কান্ট্রি ডিরেক্টর,

স্ট্রমি ফাউন্ডেশন

প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন সময় হয়েছে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা রাখার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা ঝুঁকি স্থানান্তর করে চলে আসেন। যাঁদের জমি আছে, তাঁরা বর্গাচাষ করেন। যাঁদের সুযোগ আছে, তাঁরা সন্তানের লেখাপড়া বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য শহরে চলে আসেন। ঝুঁকিটা কিন্তু স্থানান্তরিত হয়ে নারীর কাছে চলে আসে। ঋণ নিয়ে অনেকে কৃষি খাতে বা গবাদিপশু পালনে খরচ করছেন।

আমরা জলবায়ুগত দিক থেকে খুবই নাজুক এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। সেখানে মোটাদাগে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখলে বন্যা একটি ইস্যু, নদীভাঙন আরেকটি ইস্যু। বন্যায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের ঋণের একটা অংশ চলে যায়। বন্যায় ঘরবাড়ি বা শৌচাগারের মতো অবকাঠামোর ক্ষতি হয়।

এখানেও তার ঋণের একটা অংশ চলে যায়। তখন তার দৈনন্দিন জীবনব্যবস্থা অনেক কঠিন হয়ে যায়। তাই লস অ্যান্ড ড্যামেজ, এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।

মো. শামসুদ্দোহা

নির্বাহী পরিচালক,

সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট  (সিপিআরডি)

আমাদের এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ঝুঁকিগুলো তৈরি হচ্ছে, তার ফলে যেসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তারা কীভাবে এ ক্ষতিকে মোকাবিলা করবে, তার সুরাহা করা। এ জন্য আমরা একটি টেকসই আর্থিক মডেল তৈরি করার চেষ্টা করি। এর সঙ্গে যুক্ত হয় জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিষয়টি।

আমরা যে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করছি, তারা উত্তরাঞ্চলের। বিগত এক বছরে যারা বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের মধ্য থেকেই আমরা উপকারভোগী নির্বাচন করেছি। আমরা ক্ষুদ্রঋণকে ব্যবসার পরিবর্তে প্যাকেজ আকারে দেখার চেষ্টা করেছি, যেখানে কিছু টাকা অনুদান হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে। আমাদের এ প্রকল্পের ৭০ শতাংশ অর্থই হচ্ছে অনুদান।

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে তহবিল সহায়তা দিতে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল গঠন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক এ তহবিলের একটা অংশ অনুদান হিসেবে কীভাবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণ করা যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। এ জায়গায় সমন্বয় জরুরি।

মিফতা নাঈম হুদা

নির্বাহী পরিচালক,

সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন অ্যান্ড প্র্যাকটিসেস

আইটিএল প্রকল্পটি ছিল একটি পাইলট প্রকল্প। এখন কৌতূহল হচ্ছে, এর পরবর্তী ধাপ দেখার বিষয়ে। আমরা প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে সফলতার মুখ দেখতে পেয়েছি। এ বিষয়গুলো আমরা অন্য সহযোগীদের সঙ্গে ভিন্ন জায়গায় আরও অনুলিপি তৈরি করতে চাই।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় এখানে ক্ষুদ্রঋণ এখনো অনেক সাশ্রয়ী। বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ক্ষুদ্রঋণের ধারণা অনুলিপি করেছে। ক্ষুদ্রঋণের প্রথাগত ধারণার বাইরে গিয়ে আমাদের সামনে এগোতে হবে। ডিজিটাল উদ্যোগসহ কিছু জায়গায় আমরা সম্ভবত পিছিয়ে পড়েছি।

আমরা একটা বিশেষ সময় অতিক্রম করছি। প্রতিবছরই আমরা কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছি। গত বছরই আমরা একটা বন্যা মোকাবিলা করেছি। তখন দেখা গেছে, কোনো বাড়িতে চার-পাঁচবার ত্রাণ পৌঁছেছে, আবার কোথাও একবারও পৌঁছায়নি। এ ধরনের উদ্যোগগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে কার্যকর করতে হবে। শুরুতে জটিলতা থাকলেও ধীরে ধীরে এটি কিন্তু বেশ কার্যকর হবে।

নিগার দিল নাহার

অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন স্পেশালিস্ট,

ডব্লিউএফপি

ক্ষুদ্রঋণ একসময় কিছু ঋণগ্রহীতার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আজকের আলোচ্য আইটিএল প্রকল্পে ঋণের পাশাপাশি বড় একটা অংশ অনুদানও দেওয়া হয়েছে। এটি চমৎকার একটি উদ্যোগ। কিন্তু অনুদান ধীরে ধীরে কমে আসছে। এই জায়গায় বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করা যেতে পারে। বিশেষ করে জলবায়ু ইনস্যুরেন্সের ক্ষেত্রে। এখানে বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে ঝুঁকি স্থানান্তর করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের মধ্যে জলবায়ু ঝুঁকিজনিত ইনস্যুরেন্সকে যোগ করেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে দুর্যোগ বাড়ছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এসবের মাত্রাও প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এ জায়গায় অন্য কোনো দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভিন্ন কোনো জীবিকার ব্যবস্থা করার বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। এটি করা গেলে একজন নারী যে কাজে অভ্যস্ত, তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে নতুন বিকল্প কোনো জীবিকায় যেতে পারেন। ভিন্ন ধরনের কাজের জন্য নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। এতে দুর্যোগের শিকার হওয়ার পর নারী একটি কাজে ব্যর্থ হলে অন্য কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে।

তৌহিদ আহমেদ

পরিচালক,

মমতা

প্রান্তিক পর্যায়ের আইটিএল প্রকল্পটি খুবই প্রশংসনীয় একটি পাইলট প্রকল্প। নারীদের মাধ্যমে আর্থসামাজিক পরিবর্তনের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুদ্রঋণ সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছি। ক্ষুদ্রঋণের ধারণা এখন অনেক বেশি বিকশিত হচ্ছে। আলোচ্য প্রকল্পটি একটি ভালো উদাহরণ, যদিও এখানে কিছু অংশ অনুদান রয়েছে।

বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকা রয়েছে, যেগুলো দুর্যোগপ্রবণ। সুতরাং এ প্রকল্পের কিছু শিক্ষা নিয়ে ও ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে আমরা ক্ষুদ্রঋণের কার্যকর কিছু মাত্রার নকশা করতে পারি, যা টেকসই হবে। আলোচনায় লস অ্যান্ড ড্যামেজ রিকোভারি ফান্ডের কথা এসেছে। এর বাইরে আমরা নিজেরাও একটা তহবিল করতে পারি। এ থেকে অনুদান দিয়ে যাতে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় নারীদের উদ্যোগগুলো বাঁচিয়ে রাখা যায়। কারণ, প্রতিটি উদ্যোগই একটা বড় ধরনের প্রেরণা। তাঁরা সমাজে একটা পথ তৈরি করেছেন এবং অন্যদের পথ দেখিয়েছেন। এ রকম কিছু সফল নারী আজ আমাদের তাঁদের গল্প শোনালেন। এ প্রকল্প থেকে আমরা আরও অনেক বেশি কিছু শিখতে পারব বলে প্রত্যাশা করি।

আবু সায়েম মো. জান্নাতুন নুর

পরিচালক,

গণ উন্নয়ন কেন্দ্র

নারীর আর্থসামাজিক ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্রঋণ একটি কার্যকর  হাতিয়ার। তবে এটি শুধু ঋণ প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে কাঙ্ক্ষিত প্রভাব তৈরি হয় না। প্রয়োজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাজারে নারীদের প্রবেশাধিকার, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

আমরা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখেছি, জলবায়ুর পরর্বিতনের প্রভাবে গ্রামীণ নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েন। তাই জলবায়ু সহনশীলতা তৈরিতে নারীদের নেতৃত্ব ও মতামত প্রদানে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করা জরুরি। ক্ষুদ্রঋণ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি নারীদের জলবায়ু সহনশীল জীবিকার পথ সৃষ্টিতে যুক্ত করা হলে টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি হবে।

পিছিয়ে পড়া কমিউনিটির নারীদের জীবন–জীবিকার টেকসই উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে প্রযুক্তি ও আর্থিক সম্পদে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে আইটিএল প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমি মনে করি, এ ধরনের প্রকল্প আমাদের মতো ক্ষুদ্রঋণ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে পারে।

শারমিন নাহার

সমন্বয়কারী,

সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (ন্যাপ) ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে কোন এলাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা দেখা জরুরি।

বেসরকারি খাত যেন এখানে যুক্ত হতে পারে, সে জন্য আমাদের উপযুক্ত একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে।এ জন্য আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করা জরুরি। বিশেষ করে অর্থায়ন নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এই জায়গায় ভূমিকা রাখতে পারেন।

আমাদের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিকভাবে অন্য অর্থায়ন তহবিলগুলো আমাদের জন্য ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ফলে আমাদের শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না, এ জন্য এখনই বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার সুযোগগুলো তৈরি করতে হবে।

এজেদা বেগম

দলনেতা,

আইটিএল প্রকল্প, রৌমারী, কুড়িগ্রাম

২০২২ সালে আইটিএল প্রকল্পে যুক্ত হবার পর থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন, সমবায় অফিস, কৃষি অফিস ও উপজেলা পর্যায়ে সকল অফিসেই আমার যোগাযোগ রয়েছে। তবে কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ একটু বেশি। সেখানে দায়িত্বে থাকা স্যার খুব আন্তরিক। তিনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে আমাদের নাম দেন। কৃষি অফিস থেকে আমরা সার ও বীজ সহায়তা পাই। আমি আমার গ্রামের ফুড ব্যাংকের সভাপতি। আমি নিজে ষাঁড় লালনপালন করি। আগে আমার পরিবারে আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। এখন আমি অনেকটা সচ্ছল।

গ্রামের সবাই আমার প্রশংসা করে। বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ থেকে শুরু করে সব জায়গায় আমি কথা বলি, প্রতিবাদ করি। জনপ্রতিনিধিরাও আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন। আমি আশা করি আমার মতো আরো অনেক নারী এরকম প্রকল্পে যুক্ত হয়ে সাবলম্বী হবে।

আইরিছ খাতুন

দলনেতা,

আইটিএল প্রকল্প, রৌমারী, কুড়িগ্রাম

২০২২ সালে আমি আইটিএল প্রকল্পে যুক্ত হই। আমি ৪১ হাজার ৯০০ টাকা অনুদান পাই ্এবং তা থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি তাঁত স্থাপন করি। বাকি টাকা দিয়ে সুতা তৈরির মেশিন কিনি। আমি প্রতিদিন একটি করে শাড়ি তৈরিকরতে পারি, যা থেকে আমার এক হাজার টাকার মতো আয় হয়। আমার স্বামী আগে ইটভাটায় কাজ করত, এখন আমরা স্বামী–স্ত্রী একসঙ্গে কাজ করি। আমাদের মাসিক আয় ২৫–৩০ হাজার টাকা। এখন আমি আমার সন্তানদের পুষ্টিকর খাবার দিতে পারি, স্কুলে পড়াতে পারি। আমার থাকার ঘর উন্নত করেছি।

আমি এখন অন্য নারীদেরও সহায়তা করি। ৪০ জনের মতো নারীকে আমি মনিপুরি শাড়ি তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমার দেখাদেখি তারাও ভালো উপার্জন করছে। সমাজের উন্নয়নে কাজ করার জন্য মহিলা অধিদপ্তর থেকে আমাকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। গ্রামের প্রতিটি মানুষই এখন আমাকে সম্মান করে।

রমেছা খাতুন

দলনেতা,

আইটিএল প্রকল্প, রৌমারী, কুড়িগ্রাম

আমি বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। প্রতিবছর বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ায় অভাবে দিন কাটত। বন্যার সময় নদী ভাঙ্গনের ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতাম। আমাদের আয় কমে যেত। আমাদের ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে যেত। প্রশিক্ষণের পর আমরা নতুন এক রকম ধান উৎপাদন করতে শিখেছি৷ আমাদের  আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমি ২০২২ সালে আইটিএল প্রকল্পে যুক্ত হই৷ এর আগে আমরা সেবামূলক কাজ করলেও সংসারে কোনো দাম পাইনি। এই প্রকল্পে আমি ও আমার স্বামী প্রশিক্ষণ নিয়েছি৷ আগে আমার স্বামী একা একা কাজ করলেও এখন আমরা দু'জনে মিলে কাজ করি। আগে আমাদের সংসারে অনেক অভাব থাকলেও এখন আমরা মোটামুটি স্বচ্ছল হয়েছি।

আগে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে আমার সংকোচবোধ হতো। প্রকল্পে প্রশিক্ষণের পর আমার সাহস ও আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। এখন আমি সবার সামনে কথা বলতে পারি, সরকারি অফিসে গিয়ে সেবা আদায় করে আনতে পারি।

ছন্দা রানী

প্রোগ্রাম সাপোর্ট অফিসার,

ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ

ঋণ যদিও দেওয়া হচ্ছে নারীদের নামে ও নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে আমরা এর বিপরীত চিত্র দেখতে পেয়েছি। প্রকল্প এলাকাগুলোয় দেখেছি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীকে ঋণ নিয়ে তা স্বামীর হাতে দিতে হচ্ছে, সে ঋণে তাঁর কোনো অধিকার নেই, তাঁকেই আবার সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

আমরা দেখেছি পারিবারিক সহায়তা পেলে নারী পরিবারের বোঝা থেকে পরিবারের সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। ইমাম, শিক্ষক, ইউপি চেয়ারম্যান—এসব প্রভাবশালী ব্যক্তি যদি নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে কথা বলেন, তাহলে সমাজের মনোভাব দ্রুত বদলাবে।

নারীর মালিকানা খুবই জরুরি একটি বিষয়। তাই নারীর হাতেই যাতে ঋণের অর্থ যায় এবং তাঁর মালিকানাতেই সেই অর্থ বিনিয়োগ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি তিনি কোন খাতে বিনিয়োগ করবেন, সে বিষয়ে তাঁকে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।

কৃষিবিদ মো. মুনীর হোসেন

প্রোগ্রাম ম্যানেজার,

গণ উন্নয়ন কেন্দ্র

নারীর আর্থসামাজিক ক্ষমতায়নে আইটিএল প্রকল্প উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন, নারীর অংশগ্রহণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সম্পদ নিয়ন্ত্রণের ওপর উপকারভোগীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আইটিএল প্রকল্পটি ক্রিশ্চিয়ান এইডের সহায়তায় গণ উন্নয়ন কেন্দ্র সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে প্রকল্প এলাকায় জেন্ডার সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে গৃহস্থালি পর্যায়ে সাম্যপূর্ণ সম্পর্ক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়েছে। ৩২ জন নারী ইউনিয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখছেন। কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২৭০ জন সদস্য সফলভাবে সবজি চাষ, বন্যা সহনশীল ফসল চাষ করে নিজেদের পরিবর্তিত জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের অভিযোজিত করেছেন এবং পরিবারের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।

সুপারিশ

ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।

নারীর ক্ষমতায়ন হতে হবে টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব।

দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোয় নারী স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করতে হবে।

বিকল্প জীবিকার জন্য ভিন্ন ধরনের কাজে নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।

জলবায়ু সহনশীলতা তৈরিতে নারীদের নেতৃত্ব ও মতামত প্রদানে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করা জরুরি।

‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের একটা অংশ অনুদান হিসেবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণ করতে হবে।

ঋণগ্রহীতাদের প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা প্রয়োজন।

সরকারি–বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করে, এমন কমিউনিটিতে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

অংশগ্রহণকারী:

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি।

নুজহাত জাবিন, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ।

এম. আবদুস্ সালাম, নির্বাহী প্রধান, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র।

ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

চাঁদ মিয়া, প্রভাষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, কান্ট্রি ডিরেক্টর, স্ট্রমি ফাউন্ডেশন ।

মো. শামসুদ্দোহা, নির্বাহী পরিচালক , সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট  (সিপিআরডি)।

মিফতা নাঈম হুদা, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন অ্যান্ড প্র্যাকটিসেস।

নিগার দিল নাহার, অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন স্পেশালিস্ট, ডব্লিউএফপি।

তৌহিদ আহমেদ, পরিচালক, মমতা।

আবু সায়েম মো. জান্নাতুন নুর, পরিচালক,গণ উন্নয়ন কেন্দ্র।

শারমিন নাহার, সমন্বয়কারী, সেন্টার ফর ক্ল্যাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

এজেদা বেগম, দলনেতা, আইটিএল প্রকল্প, রৌমারী, কুড়িগ্রাম।

আইরিছ খাতুন, দলনেতা, আইটিএল প্রকল্প, রৌমারী, কুড়িগ্রাম।

রমেছা খাতুন, দলনেতা, আইটিএল প্রকল্প, রৌমারী, কুড়িগ্রাম।

ছন্দা রানী, প্রোগ্রাম সাপোর্ট অফিসার, ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ।

কৃষিবিদ মো. মুনীর হোসেন,প্রোগ্রাম ম্যানেজার, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র।

সঞ্চালনা:

ফিরোজ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীর আর্থসামাজিক ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তি: ক্ষুদ্রঋণ ও জলবায়ু সহনশীলতা পরিপ্রেক্ষিত