নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় উপাসনালয়ের অভ্যন্তরে গর্ভগৃহের গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় উপাসনালয়ে পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড.
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ, প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান, কেন্দ্রীয় উপাসনালয়ের কমিটির সভাপতি অধ্যাপক দিব্যদুতি সরকার প্রমুখ।
আরো পড়ুন:
সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন নোবিপ্রবি উপাচার্য
নতুন চুক্তি করতে তুরস্ক সফরে নোবিপ্রবি উপাচার্য
কেন্দ্রীয় উপাসনালয়ের কমিটির সভাপতি অধ্যাপক দিব্যদুতি সরকার বলেন, “এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। অনতিবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানাই। এটি একমাত্র ত্রিধর্মী উপাসনালয়, যেখানে হিন্দু,বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা, কর্মচারী নিজ নিজ ধর্মচর্চা করে থাকেন।”
তিনি বলেন, “উপাসনালয়ের নিরাপত্তায় অনতিবিলম্বে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা হোক। মন্দিরে সিসিটিভি ও সার্বক্ষণিক আনসার সদস্য নিয়োজিত করার দাবি জানাই। এছাড়াও মন্দিরে সার্বক্ষণিক পুরোহিত ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।”
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ বলেন, “এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিদ্রুত মামলা করা হবে। এ ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রশাসন দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।”
তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধর্মের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অবস্থান করেন। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে।প্রশাসন এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কেন্দ্রীয় উপাসনালয়ে সিসিটিভি লাগানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উপাসনালয়ের নিরাপত্তা সার্বক্ষণিক আনসার নিয়োজিত করা হয়েছে। উপাসনালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দ্রতসময়ের মধ্যে মেরামতে ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে।”
উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক বলেন, “বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। নোবিপ্রবিতে কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার স্থান দেওয়া হবে না। এ ঘটনায় আমরা আইনগত ও প্রশাসনিক সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, “স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে। ভবিষ্যতে যদি কেউ এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে ক্যাম্পাস বা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের নোবিপ্রবিতে স্থান হবে না, বাংলাদেশেও স্থান হবে না।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে মন্দির পরিষ্কার করতে গিয়ে গর্ভগৃহের তালা খুলে মেঝেতে ভাঙা কাঁচের টুকরো দেখতে পান শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আনসার ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ব প রব ম হ ম মদ উপ চ র য ব যবস থ এ ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।