যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন বাণিজ্য যুদ্ধের মুখোমুখি। যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে চীনে ১৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার।

এই ঘাটতি কমাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক নজিরবিহীনভাবে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন। এর জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর অস্বাভাবিক হারে নতুন শুল্ক আরোপ করলেও পরে ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করেছেন। কিন্তু চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক বহাল রেখেছেন। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ‘শেষ পর্যন্ত লড়তে’ প্রস্তুত এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন করছে।

চীন কীভাবে পাল্টা জবাব দিতে পারে

বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হচ্ছে মার্কিন ঋণ। চীন মার্কিন ঋণ বা ট্রেজারির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধারক; যার পরিমাণ ৭৬০ বিলিয়ন (৭৬ হাজার কোটি) ডলার। চীনের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ কিনতে পছন্দ করে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঋণ নেওয়ার জন্য ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে। চীন এসব বন্ড কেনে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে ঋণ দেয়। কারণ, মার্কিন ডলারকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য আদর্শ মুদ্রা হিসেবে ধরা হয়। সে কারণে, ঋণ কেনার এ বিনিয়োগ কম ঝুঁকিপূর্ণ।

তাত্ত্বিকভাবে চীন নিজের কাছে সঞ্চিত মার্কিন ট্রেজারি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যেমন তা বাজারে ছেড়ে দিয়ে। যার অর্থ হলো, সঞ্চিত ট্রেজারি বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে দেওয়া। আর নিজেদের কাছে থাকা বিশাল পরিমাণ ট্রেজারি বিক্রি করে মার্কিন ডলারের মূল্যহ্রাস ঘটাতে পারে চীন।

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের মতে, মার্কিন ঋণ কেনার ক্ষেত্রে চীন দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রথম অবস্থানে রয়েছে জাপান; যার দখলে রয়েছে এক ট্রিলিয়ন (১ লাখ কোটি) ডলারের ঋণ।

তাত্ত্বিকভাবে চীন নিজের কাছে সঞ্চিত মার্কিন ট্রেজারি বাজারে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এর অর্থ, সঞ্চিত ট্রেজারি বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে পারে। আর নিজের কাছে থাকা বিশাল পরিমাণ ট্রেজারি বিক্রি করে ডলারের মূল্যহ্রাস ঘটাতে পারে চীন।

অর্থনীতি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্রাউন্ডওয়ার্ক কলাবরেটিভের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান অ্যালেক্স জ্যাকেজ বলেন, ‘যখন শুল্কের বাধাগুলো এতটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে, আমরা আর একে অপরের বাজারে ঢুকতেই পারি না, তখন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না, যেমন মার্কিন ঋণ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে ডলারের মান কমিয়ে দেওয়া।’

ফেডারেল রিজার্ভ কী করবে সেটা নির্ধারণ করাও কঠিন। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই জানেন না, আগামী দিন বা সপ্তাহে কী করবেন।অ্যালেক্স জ্যাকেজ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্রাউন্ডওয়ার্ক কলাবরেটিভের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান

অ্যালেক্স জ্যাকেজ আরও বলেন, এর ফলাফল শুধু দেশীয় নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলতে পারে।  

যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের নিউ হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষণ, করনীতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক জেমস মোহস বলেন, চীন যদি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ঋণ কেনে, তবে পরিস্থিতি বেশি খারাপ হতে পারে।

জেমস মোহস আল জাজিরাকে বলেন, ‘যদি আরও ঋণ বিক্রি করতে হয়, তবে সেটা আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেবে। আর নিশ্চিতভাবেই এতে ডলারের মানও দুর্বল হবে।’

তবে চীন এ ট্রেজারি বিক্রির পথে হাঁটবে কি না, স্পষ্ট নয়। ডলারের মূল্যহ্রাস এবং ইউয়ানকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এ পদক্ষেপ চীনকেও সমানভাবে আঘাত করবে। এতে চীনের রপ্তানিপণ্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে এবং বৈশ্বিক ও স্থানীয় উৎপাদনে প্রভাব পড়বে।

চীন চায় না তার মুদ্রার মূল্য বাড়ুক। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য মার্কিন ডলারকে আদর্শ মুদ্রা হিসেবে ধরা হয়। এর অর্থ হলো—তারা নিজের মুদ্রার বদলে অন্য দেশের মুদ্রা (বিশেষ করে ডলার) থেকেই বেশি লাভ করতে পারে। তবে রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় ব্যাংক মিলিয়ে বিপুল অঙ্কের মার্কিন ঋণ নিজেদের হাতে রেখে চীন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ডলারের মানের ওপর একটি বড় নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ কীভাবে সাড়া দিতে পারে

চীন যদি এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ তাৎক্ষণিকভাবে আগ্রাসী কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং (কিউই) এর মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদক্ষেপের অধীন আর্থিক সম্পদ যেমন, সরকারি বন্ড কিনে অর্থনীতিতে অর্থ সঞ্চালন করে, সুদহার কমায় এবং অর্থনৈতিক গতি বাড়ায়—যেমনটি কোভিড-১৯ মহামারির সময় করা হয়েছিল।

তবে নিয়মিত শুল্ক পরিবর্তিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেওয়াও অনিশ্চিত। ফেডারেল রিজার্ভ ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা শিগগিরই সুদের হার কমাবে না। মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ‘মরগান স্ট্যানলি’ পূর্বাভাস দিয়েছে, ফেড এ বছর সুদহারে আর কোনো কাটছাঁট করবে না।

জ্যাকেজ বলেন, ‘ফেডারেল রিজার্ভ কী করবে সেটা নির্ধারণ করাও কঠিন। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই জানেন না, আগামী দিন বা সপ্তাহে কী করবেন।’

নিয়মিত শুল্ক পরিবর্তিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেওয়াও অনিশ্চিত। ফেডারেল রিজার্ভ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা শিগগিরই সুদহার কমাবে না। মরগান স্ট্যানলি পূর্বাভাস দিয়েছে, ফেড এ বছর সুদহারে আর কাটছাঁট করবে না।

এমন অস্থিরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তারা তাঁদের খরচ কমাতে শুরু করেছেন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোক্তা মনোভাব সূচক অনুযায়ী, এ মাসে ব্যক্তিগত আয় থেকে শুরু করে মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে ভোক্তাদের আস্থা গতমাসের তুলনায় ১১ শতাংশ কমেছে।

এ ছাড়া অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ‘কনফারেন্স বোর্ড’ গতমাসের শেষের দিকে জানিয়েছে, মার্কিন ভোক্তাদের আস্থা ১২ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

জ্যাকেজ বলেন, ‘যদি প্রতিটি সংবাদের শিরোনাম নেতিবাচক হয় এবং চীন বা অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে এ ধরনের পদক্ষেপের হুমকি আসে, তবে ভোক্তারা খরচ করা বন্ধ করে দেবে।’

আরও পড়ুনছাড় সাময়িক, সেমিকন্ডাক্টরের ওপর শুল্ক আসছে: ট্রাম্পের হুমকি১৭ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্কযুদ্ধে কতটা বাড়বে আইফোনের দাম১১ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র ক ন ঋণ পদক ষ প পর ম ণ র জন য ঋণ ক ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ