ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুল্ক যুদ্ধে চীন কি মার্কিন ঋণ ব্যবহার করতে পারে
Published: 15th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন বাণিজ্য যুদ্ধের মুখোমুখি। যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে চীনে ১৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার।
এই ঘাটতি কমাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক নজিরবিহীনভাবে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন। এর জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর অস্বাভাবিক হারে নতুন শুল্ক আরোপ করলেও পরে ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করেছেন। কিন্তু চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক বহাল রেখেছেন। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ‘শেষ পর্যন্ত লড়তে’ প্রস্তুত এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন করছে।
চীন কীভাবে পাল্টা জবাব দিতে পারে
বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হচ্ছে মার্কিন ঋণ। চীন মার্কিন ঋণ বা ট্রেজারির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধারক; যার পরিমাণ ৭৬০ বিলিয়ন (৭৬ হাজার কোটি) ডলার। চীনের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ কিনতে পছন্দ করে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঋণ নেওয়ার জন্য ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে। চীন এসব বন্ড কেনে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে ঋণ দেয়। কারণ, মার্কিন ডলারকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য আদর্শ মুদ্রা হিসেবে ধরা হয়। সে কারণে, ঋণ কেনার এ বিনিয়োগ কম ঝুঁকিপূর্ণ।
তাত্ত্বিকভাবে চীন নিজের কাছে সঞ্চিত মার্কিন ট্রেজারি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যেমন তা বাজারে ছেড়ে দিয়ে। যার অর্থ হলো, সঞ্চিত ট্রেজারি বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে দেওয়া। আর নিজেদের কাছে থাকা বিশাল পরিমাণ ট্রেজারি বিক্রি করে মার্কিন ডলারের মূল্যহ্রাস ঘটাতে পারে চীন।মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের মতে, মার্কিন ঋণ কেনার ক্ষেত্রে চীন দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রথম অবস্থানে রয়েছে জাপান; যার দখলে রয়েছে এক ট্রিলিয়ন (১ লাখ কোটি) ডলারের ঋণ।
তাত্ত্বিকভাবে চীন নিজের কাছে সঞ্চিত মার্কিন ট্রেজারি বাজারে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এর অর্থ, সঞ্চিত ট্রেজারি বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে পারে। আর নিজের কাছে থাকা বিশাল পরিমাণ ট্রেজারি বিক্রি করে ডলারের মূল্যহ্রাস ঘটাতে পারে চীন।
অর্থনীতি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্রাউন্ডওয়ার্ক কলাবরেটিভের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান অ্যালেক্স জ্যাকেজ বলেন, ‘যখন শুল্কের বাধাগুলো এতটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে, আমরা আর একে অপরের বাজারে ঢুকতেই পারি না, তখন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না, যেমন মার্কিন ঋণ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে ডলারের মান কমিয়ে দেওয়া।’
ফেডারেল রিজার্ভ কী করবে সেটা নির্ধারণ করাও কঠিন। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই জানেন না, আগামী দিন বা সপ্তাহে কী করবেন।অ্যালেক্স জ্যাকেজ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্রাউন্ডওয়ার্ক কলাবরেটিভের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধানঅ্যালেক্স জ্যাকেজ আরও বলেন, এর ফলাফল শুধু দেশীয় নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের নিউ হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষণ, করনীতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক জেমস মোহস বলেন, চীন যদি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ঋণ কেনে, তবে পরিস্থিতি বেশি খারাপ হতে পারে।
জেমস মোহস আল জাজিরাকে বলেন, ‘যদি আরও ঋণ বিক্রি করতে হয়, তবে সেটা আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেবে। আর নিশ্চিতভাবেই এতে ডলারের মানও দুর্বল হবে।’
তবে চীন এ ট্রেজারি বিক্রির পথে হাঁটবে কি না, স্পষ্ট নয়। ডলারের মূল্যহ্রাস এবং ইউয়ানকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এ পদক্ষেপ চীনকেও সমানভাবে আঘাত করবে। এতে চীনের রপ্তানিপণ্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে এবং বৈশ্বিক ও স্থানীয় উৎপাদনে প্রভাব পড়বে।
চীন চায় না তার মুদ্রার মূল্য বাড়ুক। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য মার্কিন ডলারকে আদর্শ মুদ্রা হিসেবে ধরা হয়। এর অর্থ হলো—তারা নিজের মুদ্রার বদলে অন্য দেশের মুদ্রা (বিশেষ করে ডলার) থেকেই বেশি লাভ করতে পারে। তবে রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় ব্যাংক মিলিয়ে বিপুল অঙ্কের মার্কিন ঋণ নিজেদের হাতে রেখে চীন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ডলারের মানের ওপর একটি বড় নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ কীভাবে সাড়া দিতে পারে
চীন যদি এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ তাৎক্ষণিকভাবে আগ্রাসী কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং (কিউই) এর মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদক্ষেপের অধীন আর্থিক সম্পদ যেমন, সরকারি বন্ড কিনে অর্থনীতিতে অর্থ সঞ্চালন করে, সুদহার কমায় এবং অর্থনৈতিক গতি বাড়ায়—যেমনটি কোভিড-১৯ মহামারির সময় করা হয়েছিল।
তবে নিয়মিত শুল্ক পরিবর্তিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেওয়াও অনিশ্চিত। ফেডারেল রিজার্ভ ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা শিগগিরই সুদের হার কমাবে না। মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ‘মরগান স্ট্যানলি’ পূর্বাভাস দিয়েছে, ফেড এ বছর সুদহারে আর কোনো কাটছাঁট করবে না।
জ্যাকেজ বলেন, ‘ফেডারেল রিজার্ভ কী করবে সেটা নির্ধারণ করাও কঠিন। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই জানেন না, আগামী দিন বা সপ্তাহে কী করবেন।’
নিয়মিত শুল্ক পরিবর্তিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেওয়াও অনিশ্চিত। ফেডারেল রিজার্ভ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা শিগগিরই সুদহার কমাবে না। মরগান স্ট্যানলি পূর্বাভাস দিয়েছে, ফেড এ বছর সুদহারে আর কাটছাঁট করবে না।এমন অস্থিরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তারা তাঁদের খরচ কমাতে শুরু করেছেন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোক্তা মনোভাব সূচক অনুযায়ী, এ মাসে ব্যক্তিগত আয় থেকে শুরু করে মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে ভোক্তাদের আস্থা গতমাসের তুলনায় ১১ শতাংশ কমেছে।
এ ছাড়া অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ‘কনফারেন্স বোর্ড’ গতমাসের শেষের দিকে জানিয়েছে, মার্কিন ভোক্তাদের আস্থা ১২ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
জ্যাকেজ বলেন, ‘যদি প্রতিটি সংবাদের শিরোনাম নেতিবাচক হয় এবং চীন বা অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে এ ধরনের পদক্ষেপের হুমকি আসে, তবে ভোক্তারা খরচ করা বন্ধ করে দেবে।’
আরও পড়ুনছাড় সাময়িক, সেমিকন্ডাক্টরের ওপর শুল্ক আসছে: ট্রাম্পের হুমকি১৭ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্কযুদ্ধে কতটা বাড়বে আইফোনের দাম১১ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র ক ন ঋণ পদক ষ প পর ম ণ র জন য ঋণ ক ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।