যে প্রলোভনে মিয়ানমারে দুই বছর জেল খাটলেন ২০ কিশোর–তরুণ
Published: 15th, April 2025 GMT
কারও বয়স ১৬, কারও ১৮ ছুঁই ছুঁই। দালালের প্রলোভনে পড়ে মালয়েশিয়ায় ভালো বেতনে চাকরি আর উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁরা। পরিবারকে না জানিয়েই রওনা দিয়েছিলেন অবৈধ বিপদসংকুল সাগরপথে। কিন্তু মিয়ানমারে পৌঁছেই আটক হন তাঁরা। তারপর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ২২ মাস কারাভোগ করেন।
অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০২৩ সালের জুনে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক এসব কিশোর–তরুণ আজ মঙ্গলবার সকালে নৌবাহিনীর জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে সন্ধ্যায় বাসে তাঁদের নেওয়া হয় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে। সেখানে অপেক্ষারত পরিবারের সদস্যদের কাছে তুলে দেওয়া হয় এসব কিশোর–তরুণকে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সামনে বাস থেকে একে একে নামেন তরুণেরা। ছেলে কিংবা ভাইকে এত মাস পর কাছে পেয়ে দৌড়ে যান স্বজনেরা। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জানা গেছে, অসাধু দালালেরা এসব কিশোর–তরুণকে মালয়েশিয়ায় পাচারের চেষ্টা করেছিল। পথে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তাঁরা আটক হন। তাঁদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব যাচাইয়ের পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে সরকার। এরপর বাংলাদেশ দূতাবাস তাঁদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে।
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফিরে আসা কিশোর–তরুণেরা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা। মালয়েশিয়া যাত্রার কথা কেউ পরিবারকে জানাননি। প্রায় এক মাস পর স্বজনেরা জানতে পারেন তাঁরা আটক হয়েছেন। এক বছর আগে সরকারের কাছে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে কাগজপত্র জমা দেয় পরিবার।
ফিরে আসা এক কিশোরের বোনের স্বামী আবদুল্লাহ বলেন, ‘পরিবারকে না জানিয়েই আমার শ্যালক দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিল। সে মিয়ানমারে আটক হয়। প্রায় এক মাস পর আমরা জানতে পারি। এখন সে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে।’
কিশোর–তরুণদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.
এর আগে গত রোববার মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন শহরের এমআইটিটি বন্দর থেকে ২০ বাংলাদেশি নাগরিক বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস সমুদ্র অভিযানে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা করেন। আজ সকালে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র
এছাড়াও পড়ুন:
বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: ‘তফসিল হয়েছে, তবে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের বাম দলগুলো।
তারা দাবি করছেন, তারিখ ঘোষণার পরও মাঠে এখনো কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি,বরং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তাই ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত ও দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন জরুরি।
আরো পড়ুন:
অসত্য তথ্য ছড়ানোও শাস্তিযোগ্য অপরাধ: সিইসি
তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “১৭ বছর পর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে এই তফসিল। জনগণও নিজেদের দল ও প্রতীকে ভোট দেওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি মনে করেন, “একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট-বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে নতুন অভিযাত্রার ইঙ্গিত হলেও সামনে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে।”
“একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন, তা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের আস্থা ফেরানো জরুরি। ভোটে টাকার খেলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে”, বলেন সাইফুল হক।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স তফসিল ঘোষণায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এখন থেকে প্রতিটি মুহূর্তে ইসি ও সরকারকে এমন সব পদক্ষেপ নিতে হবে, যা দেখলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে, এবার সত্যিকার অর্থে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।”
তিনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “প্রার্থী হওয়া ও ভোট দেওয়ার সমান সুযোগ সবার জন্য নিশ্চিত করতে ইসিকে আরো সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদকে পুনর্গঠন করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতার বার্তা আরো দৃশ্যমান করতে হবে।”
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “বহুল প্রত্যাশিত তফসিল ঘোষণায় স্বস্তি এসেছে, তবে অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ এখনো মসৃণ নয়।”
“নির্বাচনকে টাকার প্রভাব, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা এবং প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত করতে হবে। সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে”, যোগ করেন তিনি।
সরকার, ইসি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা এবং জরুরি উদ্যোগ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ।
ঢাকা/এএএম/রাসেল