পবিপ্রবির শিক্ষার্থীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, বলছেন চিকিৎসকরা
Published: 17th, April 2025 GMT
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবির) শিক্ষার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আশিকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন সিনিয়র চিকিৎসকসহ ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। কোনোভাবে সহিংস আচরণের শিকার হয়ে থাকতে পারেন তিনি।
বুধবার বিকেলে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে এ প্রেস ব্রিফিং করেন চিকিৎসকরা। সেখানে বলা হয়, ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন। পরে সিনিয়র চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন। তবে রোগীর মুখ দিয়ে রক্তপাত হচ্ছিল, যা তাদের মতে অভ্যন্তরীণ আঘাতের ফল। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তিনি কোনোভাবে সহিংস আচরণের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। তাই ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) এ এম এস শামীম আল আজাদ, আবাসিক চিকিৎসক মশিউর রহমান, চিকিৎসক শাহরিয়ার আনজুম শুভ, ইন্টার্ন চিকিৎসক সাদিয়া রহমান রিমি, অনন্যা আক্তার ইলমিসহ অন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এদিকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট এ এস এম শামীম আল আজাদকে ওএসডি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পদায়ন (বদলি) করা হয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে আগামী সাত দিনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য চিকিৎসক আজাদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কী কারণে তাঁকে বদলি করা হয়েছে, তা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসক শামীম আল আজাদের বদলির চিঠি পেয়েছেন। তবে, কী কারণে তাঁকে বদলি করা হয়েছে তা জানেন না তিনি। তবে হাসপাতালে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি পুকুরে ডুবে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আশিক। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। চিকিৎসকের অবহেলায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ন চ ক ৎসকর
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’