টানা পৌনে ৯ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর ছয় দফা দাবি পূরণে ঢাকাসহ সারাদেশে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রেলপথ ব্লকেডের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার রাতে ঘোষিত কর্মসূচিতে বলা হয়, যেসব পলিটেকনিকের পাশে রেলস্টেশন বা রেললাইন নেই, তারা মহাসড়কে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবে। একই সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনেরও ডাক দিয়েছেন তারা।
কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা ও গুলি ছোড়ার প্রতিবাদ এবং ছয় দফা দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি শেষে এ ঘোষণা দেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী। তিনি বলেন, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার আমরা সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন করব। সেই সঙ্গে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে রেলপথ ব্লকেড করা হবে।
এদিকে আজ অনুষ্ঠিত হবে এসএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির ফলে যানজটসহ বিভিন্ন বিড়ম্বনায় পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে বদলির দাবি। পরে রাতে তাঁকে সরিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, দিনভর আমরা ঢাকাসহ সারাদেশে সড়ক অবরোধ করেছি। আজকে মানুষের যে ভোগান্তি, সেটাই সামনে আসছে; সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি, অথচ আমাদের ভাইদের গুলি করা হয়েছে, রক্ত ঝরেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর যদি কোনো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা গুলি খেয়ে থাকে, সেটা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও অধ্যক্ষের নির্দেশে হামলা করা হয়েছে। সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা অধ্যক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছি।
ছাত্র আন্দোলনের এ প্রতিনিধি বলেন, দেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনেক। আমরা সরকারকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবেন না। যদি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন, তাহলে সামাল দিতে পারবেন না। দাবি আদায় করেই আমরা রাজপথ ছাড়ব।
এর আগে গতকাল সকাল ১০টার দিকে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি আদায়ে সাতরাস্তা মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ঢাকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সারাদেশে জেলায় জেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি
তাদের প্রথম দাবি– জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন এবং মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
তৃতীয়: উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (দশম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ: কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এ পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
পঞ্চম: কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ
শিক্ষার্থীদের দিনভর সড়ক অবরোধের মুখে গতকাল বিকেল সোয়া ৪টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে যান কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। মহাপরিচালক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে পদোন্নতিতে ‘ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের’ কোনো কোটা রাখা হবে না বলেও জানান।
তবে শিক্ষার্থীরা চান বাস্তবায়ন। ঘোষণা বা শুধু আশ্বাসে সড়ক অবরোধ তুলে না নিয়ে বরং মহাপরিচালককেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা অধিদপ্তরে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মকর্তাকে মহাপরিচালক নিয়োগের দাবি জানান। আশ্বাসের পরও শিক্ষার্থীরা রাস্তা না ছাড়ায় সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান কর্মকর্তারা।
কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা কী বলছেন
আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান সমকালকে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের কেউ ভুল বুঝিয়ে পথে নামিয়েছে। হাইকোর্টের রায় নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা সত্য নয়। ৩০ শতাংশ পদোন্নতি দেওয়ার কোনো বিষয় রায়ে নেই। তবুও আমরা আপিল করেছি। ইতোমধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর নামে কোনো পদ থাকবে না।
ছাত্র প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা পলিটেকনিকের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তবে বৈঠকে আমরা একমত হতে পারিনি। তারা লিখিতভাবে আমাদের দাবিগুলো মেনে নেননি। তাই আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
ঢাকা পলিটেকনিকের অধ্যক্ষকে বদলি
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান খানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে, একই প্রজ্ঞাপনে সাহেলা পারভীনকে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির চারটি পূরণে সরকার সম্পূর্ণ একমত। দুটি দাবি পূরণে আইনগত বাধা আছে। তার একটি হলো সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করা; কারণ সরকারি পদে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী পদায়ন হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা। কারণ, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে চার বছর চাকরিকাল পার করার পর তাদের সবাইকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার আইনগত কোনো সুযোগ নেই।
সচিবের বক্তব্য
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবি পূরণের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ আম দ র সরক র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের শয্যাসংখ্যা ৫২। তবে গত সোমবার হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সাতটি শয্যা খালি দেখা গেছে। একই চিত্র সার্জারি ওয়ার্ডেরও। নগরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে রোগীর চাপ থাকে শয্যার দেড় গুণ, সেখানে জেনারেল হাসপাতালে এই সংখ্যা অর্ধেক। বছরে সাড়ে তিন লাখের মতো রোগী এখানে সেবা নিলেও তাঁদের মাত্র আড়াই শতাংশ ভর্তি হন এখানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। প্রতি মাসে শয্যা অনুপাতে আবাসিক রোগী ভর্তি গড়ে ৪৭ শতাংশ; অর্থাৎ মোট শয্যার অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই হার আরও কম; ৩৭ শতাংশ।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণ জানা গেছে। সেগুলো হলো হাসপাতালের অবস্থান, নিরাপত্তাঝুঁকি, রাতের বেলায় ওষুধ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাতায়াতব্যবস্থা না থাকা। হাসপাতালটিতে জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় নার্সদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে রোগীরা এখানে থাকতে চান না।
ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। মোহাম্মদ একরাম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচট্টগ্রাম নগরে সরকারি দুই হাসপাতালের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০ হলেও প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ১২০ থেকে ১৪০ জন রোগী থাকেন।
রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা চিকিৎসা নেন, তার অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। দূরের রোগীরা এখানে আসতে চান না। কারণ, পাহাড়ের ওপর হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাতে পাহাড়ের পথ ধরে মাদকসেবীরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে অবস্থান করে। ছিনতাই ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণেই রোগীরা অন্যত্র চলে যান।
চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ২৫টি শয্যা সংরক্ষিত আছে। এসব শয্যায় অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবন দুটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে গেছে। ফাটল ধরেছে কিছু স্থানে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন গুটিকয় নার্স। প্রসূতি বিভাগে নার্সের উপস্থিতি বেশি। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ব্লকের অন্তত ৫টি বেড খালি। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। রোগী বেশি মেডিসিন বিভাগে।
হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায়ই অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না।চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রংমহল পাহাড়ের ওপর। এর পেছনের দিকে কাটা পাহাড় লেন। আগে এ সড়ক দিয়েই হাসপাতালে ঢুকতে হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ এ পাহাড়ি পথ ধরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢোকে। নিরাপত্তা না থাকায় মাদকসেবীরাও পাহাড়ে ওঠে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।
শুরুতে এটি কেবল একটি ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতাল ১৯৮৬ সালে ৮০ শয্যা এবং পরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে যায় ১০০ শয্যার। সেই পুরোনো জনবল কাঠামোতেই সর্বশেষ ২০১২ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার সেবা শুরু হয়। তবে এখনো জনবল সে–ই অর্ধেক।
হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা ২৫০টি হলেও এখানে চিকিৎসক ও নার্স আছেন প্রয়োজনের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্ট মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ জন চিকিৎসক আছেন। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৬৫ থেকে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, যে সংখ্যক রোগী এখানে আসেন, এর জন্য ১০০ জনের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। নেই পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফও।
এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায় সময় অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে সংকট সত্ত্বেও বহির্বিভাগের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রোগীরা। তবে বিভিন্ন সময় এসে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭২ জন রোগী। জরুরি সেবা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে সেবা চলছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতালে বিভিন্ন চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা বাড়লেও সেখানে পদ বাড়ানো হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ৩০ জন আনসার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।