সেদিন মাঠ থেকে কার্টে করে যেতে যেতে কাঁদছিলেন তিনি। তা কি শুধুই পেশিতে চোট পাওয়ার যন্ত্রণায়? নাকি অশুভ কোনো শঙ্কায়?
মনেপ্রাণে প্রচণ্ডভাবে নেইমার চাইছেন পরের বছর বিশ্বকাপটি খেলতে। ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনেরও তীব্র তাগিদ তাঁকে মাঠে ফেরানোর। যেভাবে বারবার তা পা দুটি বিশ্বাসঘাতকতা করছে, যেভাবে একটু ট্যাকলেই তিনি ভেঙে পড়ছেন– তাতে তাঁর বিশ্বকাপ যাত্রা নিশ্চিতভাবে হুমকির মুখে। গত ছয় মাসে তিন তিন বার দুই উরুতে চোট পেয়েছেন। যেখানে তাঁকে নিয়ে কোচের অনুশীলনে ব্যস্ত থাকার কথা সেখানে সান্তোসের মেডিকেল টিমকে কিনা উঠেপড়ে লেগে থাকতে হয় নেইমারকে ফিট রাখার কাজে।
পেশাদার ফুটবল দুনিয়ায় এতটা তুলতুলে শরীর নিয়ে কীভাবে ২০২৬ বিশ্বকাপে তিনি হলুদ জার্সি গায়ে জড়াবেন– তা নিয়ে কানাঘুষা আছে। শেষ কবে তিনি চোটমুক্ত হয়ে পুরো মৌসুম খেলেছিলেন তা জানতে গুগল করতে হয় সমর্থকদের। জানা যায়, এক মৌসুমে ৩৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি সেই ২০১৬-১৭ মৌসুমে। চোট আঘাতের এই চক্রে বারবার যেন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাঁর দুটি পা। এতে কি নেইমারেরও কোনো গাফিলিত নেই ? ব্রাজিলের ও’গ্লোবা দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকাল, যেখানে নেইমারের উচ্ছল জীবনযাপনের শৃঙ্খলা ভঙ্গকে অনেকটাই দায়ী করা হয়েছে।
গেলো মাসে যেমন, সান্তোসের হয়ে পাওলিস্তা ম্যাচের সময় গোড়ালিতে চোট পেয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে খেলতে দেখা গেছে তাঁকে। অথচ সেই ম্যাচ শেষ হতে না হতেই তাঁকে দেখা যায় সাও পাওলোর একটা কার্নিভালে বন্ধুদের সঙ্গে নাচতে। ওয়াল্টার কাসাগ্লান্দের মতো ব্রাজিলের বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার যা নিয়ে সমালোচনা করেন নেইমারকে। পরে অবশ্য নেইমার জানান তাঁর অতটা চোট লাগেনি ম্যাচে। এটি ঠিক যে নেইমারকে পেয়ে সান্তোসের আর্থিক লাভ হয়েছে অনেকটা। স্পন্সর এসেছে, ম্যাচের টিকিট বিক্রি বেড়েছে, জার্সি বিক্রিও তুঙ্গে। কিন্তু নেইমারকে মাঠে যেভাবে চাইছেন তাদের কোচ পেদ্রা কাইজিনহা সেভাবে তাঁকে মোটেই পাচ্ছেন না।
সান্তোসের হয়ে ৯ ম্যাচের মাত্র একটিতে পুরো ৯০ মিনিট নেইমারকে খেলাতে পেরেছেন কোচ। তবে তিনটি গোল আর তিনটি অ্যাসিস্ট করে চার ম্যাচে সেরা হয়েছেন। এই মুহূর্তে নেইমারের চোটের যে ধরন তাতে দুই থেকে ছয় সপ্তাহ লাগতে পারে তাঁর মাঠে ফেরার। ফেব্রুয়ারিতে যোগ দেওয়ার পরেই একবার চোট পেয়ে ৪২ দিনের বিরতিতে ছিলেন। তাছাড়া ২৫ জুন পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সান্তোসের চুক্তি। ক্রীড়া সাংবাদিক ফেব্রেজিও রামানোর মতে সেটা আর নবায়ন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
অথচ নেইমার চেয়েছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবল খেলে জাতীয় দলে ফিরবেন। জুনে ইকুয়েডর আর প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নেইমারকে খেলাতে চেয়েছিল ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা। তারা দেখতে চেয়েছিলেন নেইমারের ফিটনেসের ব্যাপারটি। দু’দিন পরপর চোটে পড়ছেন আর কয়েক মাস পর মাঠে ফিরে আহত হচ্ছেন! ধারাবাহিক ম্যাচ খেলার ফিটনেসের পরীক্ষায় কিছুতেই পাস করতে পারছেন না বছর তেত্রিশের এই লেফট উইঙ্গার। জাতীয় দলের মেডিকেল স্টাফরা গভীরভাবে তাঁর রিহ্যাব প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। জুনে নেইমারের ফেরার আশা ছেড়ে দিয়ে এখন সেপ্টেম্বরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ব্রাজিল ফুটবল সংস্থার মেডিকেল স্টাফ। যারা কিনা এই মুহূর্তে নেইমারের উরুর পেশির সুস্থতার ব্যাপারে সান্তোসের মেডিকেল বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে চলেছেন।
দুই হাঁটুর লিগামেন্ট অস্ত্রোপচারের পরে দারুণভাবে মাঠে ফিরে আসার উদাহরণ আছে ব্রাজিল ফুটবলে। রোনালদো নাজারিও চোট আঘাতের পর ফিরে এসেছিলেন পুরো ফর্মে। এছাড়াও গ্যাব্রিয়াল জেসুস ২০২২ সালে অস্ত্রোপচারের পর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠে। সেখানে নেইমার যদি মাঠে কিছু কৌশল ব্যাবহার করেন এবং শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে জীবনযাপন করেনা তাহলে তিনিও ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকে।
গত তিন বছরে নেইমারের যত ইনজুরি
অক্টোবর, ২০২৩ (ব্রাজিল): এসিয়েল অ্যান্ড মিনিসকাস টিয়ার
অক্টোবর, ২০২৪ (আল হিলাল): ডান পায়ে উরুর পেশিতে চোট
২ মার্চ, ২০২৫ (সান্তোস): বাম পায়ে উরুতে চোট
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ (সান্তোস): বাম পায়ে উরুতে চোট
বার্সেলেনা এবং পিএসজিতে দশ বছর খেলার সময় মোট ১১ বার গুরুতর ইনজুরিতে পড়েছিলেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে পায়ের পাতার হাড় ভেঙে যাওয়া, গোড়ালি মচকে যাওয়া, উরুর পেশিতে টান পড়া। সব মিলিয়ে চোট আঘাত নিয়ে তাঁকে প্রায় ৫০০ দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইনজ র ব র জ ল ফ টবল ব শ বক প
এছাড়াও পড়ুন:
জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা
জাপানে পড়াশোনা করার আগ্রহ থাকতে পারে অনেকের। এ আগ্রহে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ এক সুযোগ নিয়ে এসেছে দেশটির হোনজো ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ ২০২৬-এ আবেদন শুরু হয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ জাপানি বৃত্তির মাধ্যমে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যাবে। এতে রয়েছে আংশিক অর্থায়নের বৃত্তির পাশাপাশি মাসিক ভাতা, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই আন্তর্জাতিক বৃত্তি মূলত তাঁদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার লক্ষ্যেই প্রদান করা হয়। পাশাপাশি এটি জাপান এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে।
হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপের উদ্দেশ্য—১৯৯৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে হোনজো ফাউন্ডেশনকে আন্তর্জাতিক বৃত্তি সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন টাউন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মাসানরি হোনজো। তিনি ফাউন্ডেশনের প্রাথমিক মূলধন হিসেবে ২০ কোটি ইয়েন নগদ অর্থ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ শেয়ার দান করেন এ বৃত্তির জন্য। হোনজো ফাউন্ডেশন উন্নয়নশীল দেশের সেই সব শিক্ষার্থীকে সাহায্য করে, যাঁরা ভবিষ্যতে নিজেদের দেশকে উন্নয়নের পথে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি জাপানি শিক্ষার্থীরাও বিদেশে পড়াশোনার জন্য এ বৃত্তি পেয়ে থাকেন, যা বৈশ্বিক সংযোগ ও আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
আবেদনে যোগ্যতার শর্ত
হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে—
—জাপান ব্যতীত সব দেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
—আবেদনকারীকে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া কোনো গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে বা ভর্তির পরিকল্পনা থাকতে হবে।
—বর্তমান শিক্ষার্থী, যাঁরা এখনো ভর্তি হননি বা কর্মরত, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন, যদি তাঁরা এপ্রিল ২০২৬-এ ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করেন।
—যাঁরা ২০২৫ সালের শরৎকালীন সেমিস্টারে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরাও এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
—প্রফেশনাল গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণত যোগ্য নন, তবে বৈধ গবেষণা পরিকল্পনা জমা দিতে পারলে তাঁরা আবেদন করতে পারবেন।
বয়সসীমা—পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।
—মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর।
—পড়াশোনা শেষ করার পর নিজ দেশের উন্নয়নে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার থাকতে হবে।
—আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতি আগ্রহী হতে হবে এবং ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করতে হবে।
—দৈনন্দিন কথোপকথনের মতো জাপানি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে, কারণ, সাক্ষাৎকার কেবল জাপানি ভাষায় হবে।
বৃত্তির সুবিধা
হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক আর্থিক ও একাডেমিক সহায়তা প্রদান করে:
১। পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ।
২। মাসিক ভাতা।
—১ বা ২ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার ইয়েন।
—৩ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ১০ হাজার ইয়েন।
—৪ বা ৫ বছরের কোর্সের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন।
—জাপানে যাওয়ার জন্য ট্রাভেল গ্র্যান্ট দেওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।
—আর্থিক দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ।
—জাপানের সংস্কৃতিময় জীবনযাত্রা উপভোগের পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগ।
—বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্লোবাল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ।
হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তিতে শিক্ষার্থীরা পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ পাবেন এবং পাবেন মাসিক ভাতা।