বিএনপি বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, আজ আলোচনা শেষের আশা
Published: 22nd, April 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় বিএনপি বিশ্বাসী। সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জের বিষয়টি এবং সুপ্রিম কোর্টে একটি সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—সেসব বাস্তবায়নে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তৃতীয় দফার বৈঠক শুরুর আগে বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বেলা ১১টার পর এ বৈঠক শুরু হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে তাঁরা সুপারিশগুলো দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩৫টি দল মতামত দিয়েছে।
বিএনপিসহ ১৫টি দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। বাকি দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা হবে। বিএনপির সঙ্গে আজকে আলোচনার সমাপ্তি টানা যাবে বলে আশা করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদও একই আশার কথা জানান। তিনি বলেন, বিএনপি আশা করছে, আজকে এ পর্যায়ের আলোচনা শেষ করতে পারবে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের প্রায় শেষ পর্যায় নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি। আজ সংবিধানের বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, প্রশাসন, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা শেষ করা যাবে বলেন তিনি।
বিএনপির খুব দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে না বলেও জানান তিনি। রাষ্ট্র, প্রজাতন্ত্র ও সংবিধানের বিষয় নিয়ে তাড়াহুড়া করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান। ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই কমিশনে যেসব সিদ্ধান্ত হবে, তা জাতীয় জীবনে মহান ভূমিকা রাখবে বলে জানান সালাহউদ্দিন। তাই সময় বেশি নিলেও বিএনপি বিস্তারিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংবিধানে বিচার বিভাগের অংশটিতে ২০টির মতো আর্টিকেল নিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে আলোচনা শেষ করার আশা করছে বিএনপি। বিচার বিভাগের সব উদ্যোগ যেন সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় যায়, সেই আহ্বান জানানো হবে বলেও জানান।
আজকের বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সংস্থাপন সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বৈঠকে রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলছে। গত বৃহস্পতিবার দলটির সঙ্গে দিনব্যাপী বৈঠক শেষে আলোচনা মুলতবি করা হয়েছিল। গত রোববার দ্বিতীয় দিনের আলোচনা হয়।
আরও পড়ুনএকজন কতবার প্রধানমন্ত্রী, আলোচনায় নতুন প্রস্তাব২০ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির তৃতীয় দফার বৈঠক শুরু১ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তরে মহেশখালীর সোনাদিয়া উপকূলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ভেসে আসে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মৃত ব্যক্তি কোনো জেলে হতে পারেন। তবে আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁর পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। মরদেহটি বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।
হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল হাসান বলেন, মহেশখালী থানার পুলিশ সোনাদিয়া উপকূল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। বিকেল চারটা পর্যন্ত পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
এ বিষয়ে বেসরকারি উদ্ধারকারী সংস্থা সি সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সোনাদিয়া উপকূলে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। মরদেহটি পচে বিকৃত হয়ে গেছে। মাথার চুল উঠে গেছে। সাধারণত মৃত্যুর ২ থেকে ৪ দিন পর সাগরে ভেসে থাকলে এমন অবস্থা হয়। তবে এটি নিখোঁজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের মরদেহ নয়। কারণ, অরিত্রর বয়স ২২ বছর।
ইমতিয়াজ আহমদ জানান, ৭ জুলাই সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন অরিত্র। এর পর থেকে বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চল ও মোহনায় তাঁর সন্ধানে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। কোথাও লাশ ভেসে উঠলেই যাচাই করা হচ্ছে সেটি অরিত্রর কি না।
সাত দিন আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মেঘনা মোহনায় এক ব্যক্তির লাশ ভেসে ওঠে। সেটিও অরিত্র ভেবে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু সেটিও তাঁর লাশ ছিল না। ওই মৃত ব্যক্তির বয়স ছিল ৩২ বছর। পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি। কিন্তু অরিত্রর গায়ে ছিল নীল গেঞ্জি ও থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট।
এখনো নিখোঁজ অরিত্র
৭ জুলাই সকাল পৌনে সাতটার দিকে কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নামেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী—অরিত্র হাসান, কে এম সাদমান রহমান ও আসিফ আহমেদ। তাঁদের মধ্যে প্রথমে সাদমান রহমানের লাশ উদ্ধার হয় হিমছড়ি সৈকত থেকেই। পরদিন সকালে নাজিরারটেক শুঁটকিমহাল সৈকতে পাওয়া যায় আসিফ আহমেদের লাশ। কিন্তু ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো খোঁজ নেই অরিত্রর।
সি সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, অরিত্রকে খুঁজতে কক্সবাজার উপকূলের ১২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়েছে। মহেশখালী, সোনাদিয়া, নুনিয়াছড়া উপকূল, বিভিন্ন মোহনা এবং সাগর চ্যানেলেও তল্লাশি চালানো হয়। অভিযান পরিচালনায় ছিলেন বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, পর্যটন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিচের কর্মীরা।
ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ণিমার জোয়ারের টানে অরিত্রের মরদেহ গভীর সাগরে ভেসে গেছে। গত তিন দশকে ৭০ জনের বেশি পর্যটক সৈকতে ডুবে মারা গেলেও তাঁদের কারও লাশ তিন দিনের বেশি নিখোঁজ ছিল না। শুধু অরিত্রর ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।
পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীদের মতে, চলতি জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে পাঁচটি নিম্নচাপ ও লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টিতে সৈকতে একাধিক গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের ধারণা, অরিত্রের লাশ হয়তো এসব গুপ্তখালের তলদেশে বালুচাপায় আটকে আছে অথবা গভীর সাগরে হারিয়ে গেছে।
তাঁরা জানান, বিমানবাহিনীর ড্রোন দিয়ে সাত দিন ধরে সাগরের গভীর পর্যন্ত অনুসন্ধান চালানো হয়। তাতেও কোনো ফল মেলেনি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জানানো হয়েছে—লাশ ভেসে উঠলে যেন সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয়।
অরিত্রর বাবা সাকিব হাসান ঢাকায় একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক। ছেলের নিখোঁজ হওয়ার পরপরই স্ত্রী ও স্বজনদের নিয়ে কক্সবাজারে ছুটে আসেন। টানা ১৯ দিন ধরে বিভিন্ন সৈকত চষে বেড়িয়েছেন। কখনো কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, কখনো নিঃশব্দে তাকিয়ে থেকেছেন সাগরের দিকে।
সাকিব হাসান বলেন, ‘শুনেছি, সাগর যা নেয়, তা ফিরিয়ে দেয়। তবে অরিত্রর ক্ষেত্রে এমন ব্যতিক্রম হলো কেন? আমরা যেকোনো অবস্থায় ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।’
অরিত্রর মা জেসমিন আক্তার এখনো অপেক্ষায় আছেন—যদি কোনো এক ঢেউয়ে ভেসে আসে অরিত্র।