সিলেটের ‘আত্মগোপনে থাকা’ আওয়ামী লীগ নেতারা কে কোথায়
Published: 22nd, April 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই সিলেটের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে চলে যান। এসব নেতা বর্তমানে ভারত, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। বিদেশে অবস্থানকারী নেতাদের অনেকে নিয়মিত কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
দেশ-বিদেশে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের আটজন নেতা ও ছয়জন কর্মীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, সিলেটের শীর্ষ নেতাদের অল্প কয়েকজন দেশে আছেন। বাকিরা বিদেশে। তবে মধ্যম ও তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় সব নেতা এখনো দেশেই আত্মগোপনে আছেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো.
কোন নেতা কোথায়
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশ ছেড়েছেন। তিনি ঢাকা থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পৌঁছান।
৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়ে সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁরা কলকাতা, শিলংসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। কলকাতায় আছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী (নাদেল) এবং সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান।
দলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ভারতে আছেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ ও সহসভাপতি পিযুষ কান্তি দে, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস (মিঠু), সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদ, সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস (অনিক) প্রমুখ।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিলেটের অনেক নেতা যুক্তরাজ্যে চলে যান। তাঁদের মধ্যে সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী আছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানও যুক্তরাজ্যে আছেন। এই তিন নেতা ‘যুক্তরাজ্যের নাগরিক’ বলে একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যে অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও মধ্যনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা।
এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ ও আরমান আহমদ, সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সিলেট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলেন আহমদ, যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) শফিউল আলম যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, যাঁরা দেশের বাইরে আছেন, তাঁরা দেশে একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড, নাশকতার অভিযোগসহ হামলা, ভাঙচুর ও বিস্ফোরক মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁদের।
তাঁদের দাবি, দেশে থাকা সিলেটের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা লীগের অন্তত ১০০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার এড়াতে সবাই আত্মগোপনে আছেন। এর বাইরে হঠাৎ দেশে থাকা নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিদেশে আশ্রয় নেওয়া নেতাদের বেশির ভাগই ফেসবুকে দলের পক্ষে এবং দেশে সংঘটিত বিভিন্ন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সরব আছেন।
দেশে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, দেশে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা হঠাৎ বিক্ষোভ মিছিল করছেন। তবে এ কর্মসূচি পালন করে পরে অনেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। ২ এপ্রিল সকালে নগরে ছাত্রলীগ মিছিল বের করায় বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিকেলেই সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীসহ পাঁচজন নেতার বাসায় হামলা হয়। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে ওই নেতা অভিযোগ করেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলেছে, বিদেশে অবস্থান নিলেও অনেক নেতা দেশে থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁরা দলীয় নির্দেশনাও দিচ্ছেন। বিশেষ করে সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দেশে-বিদেশে থাকা নেতা-কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছেন। তিনি গত ঈদে কারাবন্দী নেতাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি দেশে থেকে সংকটে পড়া নেতা-কর্মীদেরও নানাভাবে সহায়তা করছেন। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী, হাবিবুর রহমান ও রনজিত চন্দ্র সরকারও তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় সহায়তা করছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ ন করছ ন র রহম ন র আওয় ম কর ম র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’
তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’
সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’
বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউটকমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।
পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।
আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।
আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে