ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে এক তরুণের মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ শুক্রবার রাজধানী ইম্ফলের দুই জেলা ইম্ফল পূর্ব ও ইম্ফল পশ্চিমে ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। ফলে বাজার বন্ধ ছিল, বন্ধ ছিল সরকারি যানবাহন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। অনেক জায়গায় রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ইম্ফল উপত্যকায় শুক্রবার স্বাভাবিক জীবনযাপন যথেষ্টই প্রভাবিত হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, খোইসনাম সানাজাওবার নামে ২৭ বছর বয়সী এক তরুণের মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে এই ধর্মঘট চলছে। অন্যদিকে পূর্ব মণিপুরের মিয়ানমারঘেঁষা একটি জেলার অন্তত দুটি গ্রামে কুকি জনজাতিদের বাড়িঘর উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।

মণিপুরের পুরোনো স্বাধীনতাকামী নিষিদ্ধ ও সশস্ত্র সংগঠন কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টির (নংড্রেনখোম্বা) সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে খোইসনাম সানাজাওবাকে মার্চ মাসের শেষে আরও চারজনের সঙ্গে ইম্ফল পূর্ব জেলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই সংগঠন ও অন্যান্য ক্ষুদ্র ও সশস্ত্র কমিউনিস্ট সংগঠন মণিপুরে এখনো যথেষ্ট প্রভাবশালী। স্বাভাবিকভাবেই খোইসনামের মৃত্যু রাজ্যে আলোড়ন তুলেছে। এক সপ্তাহ ধরে সেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।

বিভিন্ন সংগঠন মিলে যে যৌথ সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা জানিয়েছে, খোইসনাম গ্রামরক্ষী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৭ এপ্রিল খোইসনামের ‘হেফাজতে মৃত্যু’–এর নিরপেক্ষ তদন্তসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাজ্যপালের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে তাদের ধর্মঘটের পথে যেতে হয়েছে। শুক্রবারের ধর্মঘট সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে বলে জানিয়ে মণিপুরের গণমাধ্যম লিখেছে, এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।

মিয়ানামার সীমান্তে দুটি গ্রামে আগুন

গত কয়েক দিনে মণিপুরের অন্যান্য জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারঘেঁষা কামজঙ্গের অন্তত দুটি গ্রামে বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে গত বুধবার আগুন দেওয়া হয়েছে। গামপাল ও হাইইয়াং নামে এ দুটি গ্রামে মূলত কুকি আদিবাসীরা থাকলেও কামজঙ্গ নাগা অধ্যুষিত একটি জেলা।

স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, দুই গ্রামের মানুষ গত বুধবার সকালে যখন তাঁদের খেতে কাজ করছিলেন, তখন তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা এ কাজ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই অঞ্চলে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন।

উপজাতিদের একটি শীর্ষ সংগঠন কুকি-ইনপি (মণিপুর) ও কুকি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনসহ বেশ কয়েকটি কুকি-জো সংগঠন এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দুটি গ্রামের পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসন ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। তারা গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বাস্তুচ্যুত বা ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য, চিকিৎসাসহায়তা, আশ্রয়সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সহিংসতা রোধে ‘নিরপেক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীর’ পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই জঘন্য হামলা’ নিরপরাধ কুকি বেসামরিক নাগরিকদের আতঙ্কিত করেছে। এই অঞ্চলে ইতিমধ্যেই ভঙ্গুর শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে আবারও বিঘ্নিত করেছে।

কামজঙ্গের জেলাশাসক রংনেমি রং পিটার বলেছেন, আইন মোতাবেক বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

মণিপুরে দুই বছর ধরে চলা সশস্ত্র সংঘাতের কারণে আড়াই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, গৃহহীন হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মণ প র র স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’

ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ