মণিপুরে দুই গ্রামে কুকিদের বাড়িতে আগুন, হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিবাদে ইম্ফলে ধর্মঘট
Published: 25th, April 2025 GMT
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে এক তরুণের মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ শুক্রবার রাজধানী ইম্ফলের দুই জেলা ইম্ফল পূর্ব ও ইম্ফল পশ্চিমে ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। ফলে বাজার বন্ধ ছিল, বন্ধ ছিল সরকারি যানবাহন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। অনেক জায়গায় রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ইম্ফল উপত্যকায় শুক্রবার স্বাভাবিক জীবনযাপন যথেষ্টই প্রভাবিত হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, খোইসনাম সানাজাওবার নামে ২৭ বছর বয়সী এক তরুণের মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে এই ধর্মঘট চলছে। অন্যদিকে পূর্ব মণিপুরের মিয়ানমারঘেঁষা একটি জেলার অন্তত দুটি গ্রামে কুকি জনজাতিদের বাড়িঘর উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।
মণিপুরের পুরোনো স্বাধীনতাকামী নিষিদ্ধ ও সশস্ত্র সংগঠন কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টির (নংড্রেনখোম্বা) সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে খোইসনাম সানাজাওবাকে মার্চ মাসের শেষে আরও চারজনের সঙ্গে ইম্ফল পূর্ব জেলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই সংগঠন ও অন্যান্য ক্ষুদ্র ও সশস্ত্র কমিউনিস্ট সংগঠন মণিপুরে এখনো যথেষ্ট প্রভাবশালী। স্বাভাবিকভাবেই খোইসনামের মৃত্যু রাজ্যে আলোড়ন তুলেছে। এক সপ্তাহ ধরে সেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।
বিভিন্ন সংগঠন মিলে যে যৌথ সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা জানিয়েছে, খোইসনাম গ্রামরক্ষী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৭ এপ্রিল খোইসনামের ‘হেফাজতে মৃত্যু’–এর নিরপেক্ষ তদন্তসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাজ্যপালের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে তাদের ধর্মঘটের পথে যেতে হয়েছে। শুক্রবারের ধর্মঘট সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে বলে জানিয়ে মণিপুরের গণমাধ্যম লিখেছে, এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
মিয়ানামার সীমান্তে দুটি গ্রামে আগুন
গত কয়েক দিনে মণিপুরের অন্যান্য জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারঘেঁষা কামজঙ্গের অন্তত দুটি গ্রামে বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে গত বুধবার আগুন দেওয়া হয়েছে। গামপাল ও হাইইয়াং নামে এ দুটি গ্রামে মূলত কুকি আদিবাসীরা থাকলেও কামজঙ্গ নাগা অধ্যুষিত একটি জেলা।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, দুই গ্রামের মানুষ গত বুধবার সকালে যখন তাঁদের খেতে কাজ করছিলেন, তখন তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা এ কাজ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই অঞ্চলে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন।
উপজাতিদের একটি শীর্ষ সংগঠন কুকি-ইনপি (মণিপুর) ও কুকি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনসহ বেশ কয়েকটি কুকি-জো সংগঠন এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দুটি গ্রামের পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসন ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। তারা গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বাস্তুচ্যুত বা ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য, চিকিৎসাসহায়তা, আশ্রয়সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সহিংসতা রোধে ‘নিরপেক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীর’ পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে।
সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই জঘন্য হামলা’ নিরপরাধ কুকি বেসামরিক নাগরিকদের আতঙ্কিত করেছে। এই অঞ্চলে ইতিমধ্যেই ভঙ্গুর শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে আবারও বিঘ্নিত করেছে।
কামজঙ্গের জেলাশাসক রংনেমি রং পিটার বলেছেন, আইন মোতাবেক বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
মণিপুরে দুই বছর ধরে চলা সশস্ত্র সংঘাতের কারণে আড়াই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, গৃহহীন হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।