আমাদের গ্রামটা সুন্দরবনের কাছে। নাম রাজাপুর। বাগেরহাট জেলার শরণখোলা থানায় পড়েছে। একটু প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছেছিল বেশ দেরিতে। এ অঞ্চলে ভালো পড়ালেখার সুযোগ তেমন ছিল না। তার ওপর ছোটবেলায় এক দুর্ঘটনায় পড়ে আমার ডান পায়ে একটা স্থায়ী সমস্যা তৈরি হয়। তখনই স্বাভাবিক গতিতে হাঁটা বা দৌড়ানোর সক্ষমতা হারিয়েছিলাম। সেই আমিই এখন দেশ থেকে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার দূরে অস্ট্রেলিয়ার একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াই। পেছনে ফিরে তাকালে অবাক লাগে, কীভাবে এতটা পথ পাড়ি দিলাম!

অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়া ছাত্র হয়েও এসএসসিতে রেজাল্ট যখন খারাপ হলো, খুব ভেঙে পড়েছিলাম। তলানিতে ঠেকেছিল আত্মবিশ্বাস। দ্রুত পেশাজীবনে পা রাখার তাড়নায় এক সহপাঠীর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হই। বিষয় ছিল কম্পিউটার প্রকৌশল। অথচ আমার নিজেরই তখন কোনো কম্পিউটার ছিল না। কলেজের ল্যাবেই বিকেল পর্যন্ত পড়ে থাকতাম। এই পরিশ্রম বৃথা যায়নি। প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মাইক্রোপ্রসেসর, ডিজিটাল সিস্টেমের ওপর দক্ষতা অর্জন করে ফেলি।

আর দশজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর মতো আমারও ইচ্ছা ছিল, ডিগ্রি নেওয়ার পর ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) পড়ব। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের অঞ্চলে সিডরের কারণে একটা বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা লাগে। অর্থের অভাবে মাঝপথেই থেমে যায় ডুয়েটের ভর্তি কোচিং। এই ট্রমা কাটিয়ে উঠে খুলনাতেই ‘ম্যানগ্রোভ ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হই।

মাত্র ৪৭ জন শিক্ষার্থী, আর অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। তবু কত বাঁকা কথা যে শুনতে হয়েছে। ‘কোচিং সেন্টার খুলেছ!’, ‘সময়ের অপচয় করছ’ ইত্যাদি কত কথা। জানিয়ে রাখি, আমাদের সেই প্রতিষ্ঠানই এখন বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হিসেবে বেশ পরিচিত। তিন হাজার শিক্ষার্থী এখানে পড়ে। বিভিন্ন পদে কাজ করার পর ২০১৫ সালে আমি ম্যানগ্রোভ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছিলাম।

ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের বিজনেস স্কুলের একটি প্রকল্পে এখনো গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করছি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ