মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় গ্রাহকদের জামানতের বিপুল অর্থ নিয়ে একটি এনজিওর (বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা) মালিক ও কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই টাকা না পেয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা এনজিওর মালিকের বাড়ির আসবাব ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছেন।

এ ছাড়া জামানতের টাকার দাবিতে তাঁরা মানববন্ধন করেছেন। আজ রোববার সকালে উপজেলার জামশা ইউনিয়নের উত্তর জামশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালে দক্ষিণ জামশা গ্রামে ‘গ্রাম মানবিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি’ নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয় জামশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুজ্জামান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আমজাদ হোসেন, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মানিক মিয়া উজ্জ্বল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মো.

হাবিবুল্লাহ যৌথভাবে এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন।

ভুক্তভোগী গ্রাহক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এনজিওর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছ থেকে জামানত সংগ্রহ করেন। এনজিওটি উপজেলার জামশা, জামির্ত্তা, চারিগ্রাম, বলধারা, তালেবপুর ও জয়মন্টপ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সহস্রাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা জামানত সংগ্রহ করে। জামানতের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও গ্রাহকদের টাকা না দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এ নিয়ে টাকা পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও পরে এনজিওর মালিক আওয়ামী লীগের নেতা আমজাদ হোসেনের বাড়িতে আসবাব ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা।

আজ সকাল ১০টার দিকে উত্তর জামশা এলাকায় আমজাদ হোসেনের বাড়ির কাছে কয়েক শ গ্রাহক জামানতের টাকা পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেন। এরপর বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা আমজাদের বাড়িতে আলমারি, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন।

উত্তর জামশা গ্রামের গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার (৩৪) কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা জামানত হিসেবে ওই এনজিওতে জমা রাখেন। তিন বছর পার হলেও তিনি কোনো টাকা পাননি। ফাতেমা বলেন, ‘আমার সহায়–সম্বল যা আছিল, তা বিক্রি করে ওই এনজিওতে রাখছিলাম। টাকা ফেরত পাওনের জন্য এনজিওর লোকদের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি, কোনো টাকা দ্যায় নাই। পোলাপান নিয়্যা কীভাবে আমার দিন যায়, রাত পোহায়, আমি জানি আর আল্লাহ জানে।’

চারিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাবিনা বেগমের (৪৫) স্বামী ও ছেলে দুজনই প্রবাসী। ২০১৮ সালে তিন বছরের জন্য এনজিওটিতে জামানত হিসেবে ১০ লাখ টাকা রাখেন। কয়েক মাস লভ্যাংশ দিলেও তা দেওয়া বন্ধ করা হয়। পরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে সংস্থাটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এনজিওর মালিকেরা আত্মগোপনে চলে যান। অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কাউকেই এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এনজিওটির পরিচালক গাজী কামরুজ্জামানের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, টাকাপয়সার জন্য বাড়িতে প্রতিনিয়তই লোকজন আসেন। তাঁর স্বামী তাঁকে জানিয়েছেন, গ্রাহকদের জামানতের টাকা বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করা হয়েছে। তিন থেকে চার বছরের ভেতর গ্রাহকের সব টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা ফারহানা ফেরদৌসী বলেন, কোনো সমবায় সমিতি গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত সংগ্রহ করতে পারবে না। সমিতির নিবন্ধন থাকলে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারবে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা অভিযোগ করলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম নত র ট ক গ র হক র র জন য আমজ দ এনজ ও উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার তিন ছাত্রদল নেতার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন

বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘গুমের শিকার’ হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রদল নেতার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারাও।

আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে ছাত্রদল ও শিক্ষকনেতারা মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আসাদুজ্জামান রানা ও আল আমিনের সন্ধান দাবি করেন। একই সঙ্গে তাঁরা ‘গুমের শিকার’ সব নেতা-কর্মী ও নাগরিককে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নির্যাতন, হামলা ও হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন বক্তারা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জকসু) ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কোবরা বলেন, ‘আজ ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন। কতজনের বিচার চাইব আমরা?’

খাদিজাতুল কোবরা আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশে আমরা আমাদের ভাইদের সন্ধানে দাঁড়িয়েছি। আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে কেউ গুম হবে না, সবাই ন্যায্য বিচার পাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আমলে অনেক বিএনপি নেতা গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের হাতে হামলার শিকার হয়েছে। আমাদের অনেক ভাই গুম হয়েছে, অনেককে ফিরে পেয়েছি। কিন্তু আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তিন ভাইকে এখনো আমরা খুঁজে পাইনি।’

মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর আমরা মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছি। প্রশাসনের যারা গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার চাই। যারা হয়রানির শিকার তাদের সহমর্মিতা জানাচ্ছি। সামনের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল কাজ করবে।’

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্‌দীন বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে গুম ও খুন একটি নৈমিত্তিক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জুলাইয়ের পর আমরা এখনো অনেকের সন্ধান পাইনি। আমাদের ক্যাম্পাসের ৩ ছাত্রদল নেতাসহ আরও অনেকে গুমের তালিকায় রয়েছে।’

রইছ উদ্‌দীন প্রশ্ন রাখেন, ‘১০ ডিসেম্বর আসে, আর আমরা মানববন্ধন করে তাদের সন্ধান চাই, স্মরণ করি, আবার পরদিন ভুলে যাই। তাদের পরিবারের এখন কী অবস্থা, আমরা কি তা জানি?’

এ সময় রইছ উদ্‌দীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা গুম হয়েছে, সব ক্যাম্পাসে তদন্ত কমিটি হয়েছে। দুঃখজনক বিষয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি। আমি এই দিনে আহ্বান জানাচ্ছি, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা গুম হয়েছে, তাদের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হোক।’

মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদচারী–সেতু নির্মাণের দাবিতে গাজীপুরে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ
  • শিবচরে শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
  • রংপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার তিন ছাত্রদল নেতার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন