স্বৈরাচারী সরকার দেশের উৎপাদনশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে গেছে
Published: 27th, April 2025 GMT
সিলেট থেকে বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পর দেশের দ্বিতীয় বিমানবন্দর হিসেবে সিলেট থেকে কার্গো বিমান চলাচল শুরু হয়েছে।
রবিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ৮টা ১৫ মিনিটে ৬০ টন গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে কার্গো বিমানের একটি ফ্লাইট সিলেট থেকে স্পেনের উদ্দেশে উড়াল দেয়।
এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই কার্গো ফ্লাইট উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে নদীতে বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৩
বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও বশিরউদ্দীন
উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “সিলেটে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মাইলফলক।”
সিলেট বিমানবন্দর প্রথম কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ অনুসারে, ভারতে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হওয়ার পর আমরা সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী দিনে আমরা পরিবহন খরচ কমানোর পরিকল্পনা করেছি। পতিত স্বৈরাচারী সরকার দেশের উৎপাদনশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে গেছে। আমরা সেই দায়ভার বহন করছি।”
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে বিমানভাড়া কমানোর ওপর জোর দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছি।”
সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিলেট থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু করতে কার্গো কমপ্লেক্স ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে দক্ষ জনবল ও অত্যাধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সংস্থাপন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের র্যাপিড স্ক্যানিং মেশিন থেকে শুরু করে সব যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়েছে। জনবল নিয়োগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
কার্গো ফ্লাইট উদ্বোধনের সময় মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম মুশফিকুল ফজল আনসারী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব নাসরিন জাহান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো.
ঢাকা/নূর/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট উপদ ষ ট র বহন
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম অধিকার ও সুস্থ কর্মপরিবেশ
আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মেহনতি মানুষদের স্মরণ করিবার দিন। তৎসহিত সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্য মর্যাদাকর জীবন নিশ্চিতকরণের সংগ্রামে নূতন শপথ গ্রহণের দিন।
মে দিবস বিশ্বের শ্রমিকদের সংহতি যদ্রূপ বৃদ্ধি করিয়াছে, তদ্রূপ তাহাদিগকে অধিকার সচেতনও করিয়াছে; প্রেরণা জোগাইয়া চলিয়াছে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে। মে দিবস বাংলাদেশসহ বিশ্বের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়া স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশসমূহের জন্য বিপুল প্রেরণার উৎসরূপে কাজ করিয়াছে।
তাহারই প্রতিফলনস্বরূপ এই সকল দেশে ছুটিসহকারে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। উন্নত দেশসমূহ এই দিবসে পৃথক ছুটির ব্যবস্থা না করিলেও উহার প্রভাব উপেক্ষা করিতে পারে নাই। তাই ভিন্ন প্রকারে সেই সকল দেশেও দিবসটি পালিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে আজিকে শ্রমমান লইয়া যে আলোচনা হয়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রমিকের বহু অধিকার আজিকে যে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বহু দেশে কার্যকর হইয়াছে, উহারও পশ্চাতে রহিয়াছে মে দিবসের চেতনা। তবে ইহা সত্য, বাংলাদেশে ঘটা করিয়া দিবসটি পালিত হইলেও মজুরি ও কর্মপরিবেশ প্রশ্নে খামতি সীমাহীন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহে শ্রমিকদের জন্য এক প্রকার আইনি আশ্রয় থাকিলেও বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে উহার লেশমাত্র নাই। শেষোক্ত খাতে কোটি কোটি শ্রমিক উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য অধিকার হইতে বঞ্চিত।
এই বৎসর শ্রমিক দিবস এমন সময়ে উপস্থিত, যখন গণঅভ্যুত্থানের ফসলস্বরূপ দেশে নূতন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে। সেই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসাবে শ্রম খাতের সংস্কারেও উদ্যোগী। তাহাদের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে প্রতিবেদনও দাখিল করিয়াছে, যথায় দেশের সাড়ে সাত কোটি শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত একগুচ্ছ সুপারিশ রহিয়াছে। প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়োজিত সকল শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ ন্যূনতম মানদণ্ডরূপে বিবেচিত হইবে– কমিশনের এই সুপারিশ যুগান্তকারী বলিয়া আমরা মনে করি। উপরন্তু কমিশন ইহাও বলিয়াছে, কোনো খাতের মজুরি কাঠামো নির্ধারণে পরিবারে একক উপার্জনকারী হিসাবে বিবেচনায় লইয়া এমন পরিমাণ নির্ধারণ করিতে হইবে, যাহাতে শ্রমিক তাঁহার পরিবারের প্রয়োজন মিটাইতে পারেন।
বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বৎসর অন্তর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপৎকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন করিবার শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস এবং স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত সুপারিশসমূহও প্রণিধানযোগ্য। একটা সময় ছিল যখন শ্রমিক আন্দোলন বলিতে কারখানা ভাঙচুর ও সম্পদ ধ্বংস বোঝাইত। পরিণামে নিজের রুটি-রুজি লইয়া শ্রমিকদেরই টানাপোড়েনে পড়িতে হইত। ইহার সমাধান দিয়াছিল ট্রেড ইউনিয়ন প্রথা। দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার বিগত দশকসমূহে ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করে। উহার সহিত সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলনও বিরল হইয়া পড়ে।
আমাদের বিশ্বাস, শ্রম সংস্কার কমিশনের ট্রেড ইউনিয়ন-সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ আলোর মুখ দেখিলে শ্রমিক-মালিক উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা হইবে। সর্বোপরি দেশের বিকাশমান শিল্প খাত হইবে লাভবান। উৎপাদন ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তিরূপে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে উদ্যোক্তার যদ্রূপ অবদান, তদ্রূপ শ্রমিকেরও অবদান ব্যাপক। তাই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণে আর কোনো অবহেলা নহে। এইবারের মে দিবসে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করিবে– ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সমকালের পক্ষ হইতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে মে দিবসের অভিনন্দন জানাই।