বাংলাদেশ যখন ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা লইয়া হিমশিম খাইতেছে, তখনই নূতন করিয়া আরও অনুপ্রবেশ আমাদের উদ্বেগকে বৃদ্ধি করিয়াছে। সোমবার সমকালে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হইতে গত শনিবার পর্যন্ত নূতন করিয়া ১ লক্ষ ১৩ সহস্র রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়াছে। শুধু উহাই নহে; বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন যৌথভাবে নবাগত রোহিঙ্গাদের আঙ্গুলের ছাপও গ্রহণ করিয়াছে। সরকার অবশ্য তাহাদের আইরিশের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের অনুমতি এখনও দেয় নাই। নবাগত রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করিতে হাইকমিশন প্রেরিত পত্রেরও উত্তর দেয় নাই। উপরন্তু, মৌখিকভাবে সংস্থাটিকে জানাইয়া দিয়াছে, বিদ্যমান বাস্তবতায় লক্ষাধিক নূতন রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থলের ব্যবস্থা সুকঠিন। তবে ২০১৭ সালে যেই মানবিক কারণে বাংলাদেশ মিয়ানমার জান্তার ভয়ংকর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের সীমান্ত অতিক্রম করিতে অনুমতি দিয়াছিল, সেই মানবিকতা এইবারও বৃহৎ দোহাই হইয়া উঠিতে পারে। ফলস্বরূপ, রোহিঙ্গাদের লইয়া বাংলাদেশ নূতন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িতে যাইতেছে।
বিপুলসংখ্যক নূতন রোহিঙ্গা এমন সময়ে অনুপ্রবেশ করিল যখন ইতোপূর্বে আগত রোহিঙ্গাদের স্বীয় দেশে প্রত্যাবাসন লইয়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহিত দেনদরবার চালাইতেছে। এই আশঙ্কা অমূলক নহে, নূতন আবাসস্থল নির্মাণের মাধ্যমে কার্যত প্রত্যাবাসনের পরিবর্তে আরও অধিক সংখ্যক রোহিঙ্গাকে এই দেশে স্বাগত জানানো হইবে। কারণ ইহাতে রাখাইনে অবস্থানকারী অপরাপর রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসিতে উৎসাহ পাইবে। পরিণামে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও জটিল হইয়া পড়িবে। প্রসংগত, রাখাইন রাজ্যে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রত্যাশী আরাকান আর্মির অব্যাহত আক্রমণের মুখে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় জান্তা সরকার পশ্চাদপসরণ করিলেও রোহিঙ্গারা শান্তিতে নাই। বরং সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য বিস্তারে অঙ্গীকারবদ্ধ আরাকান আর্মির আচরণে অতিষ্ঠ হইয়া নূতনভাবে বাংলাদেশে পালাইয়া আসিতেছে। এখন প্রায় প্রতিদিন শুধু নাফ নদ পারই নহে, পাহাড়ি পথেও রোহিঙ্গারা প্রবেশ করিতেছে।
আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর হইতে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ সংকট দেখা দিতেছে। যৌথ সাড়াদান কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কক্সবাজারে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য যেই আর্থিক সহায়তা দেয়, তাহা প্রতি বৎসর প্রতিশ্রুতির তুলনায় ক্রমহ্রাসমান। এই বাস্তবতায় নূতনভাবে রোহিঙ্গা প্রবেশ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করিতেছে।
স্মরণযোগ্য, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য নাই। বোঝার উপর হইতে শাকের আঁটি অপসারণের বিকল্প নাই। আশ্রিত জনগোষ্ঠীর কারণে বিশেষত পরিবেশ-প্রতিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নাজুকতা কী মাত্রায় বৃদ্ধি পাইয়াছে, তাহাও এখন অজানা নহে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহিত রোহিঙ্গাদের বিবিধ প্রকার সংঘাতমূলক ঘটনাও ঘটিতেছে। এই কথাও সর্বজনবিদিত, আশ্রয় শিবিরগুলি মিয়ানমার হইতে পাচারকৃত মাদক কারবারিদের আখড়ায় পরিণত হইয়াছে। কক্সবাজারের শিবিরগুলিতে মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠনের সমাজবিরোধী তৎপরতার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিতেছে। পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হস্তে যাইবার পর হইতে সীমান্ত নিরাপত্তাও ভঙ্গুর হইয়া পড়িয়াছে। এই অবস্থায় একটা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়া স্বাভাবিক। বাস্তবে সেই আশঙ্কাই ক্রমশ দৃঢ় হইতেছে।
আমরা মনে করি, সময় সমাগত বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করিবার। যত চাপই থাকুক; মানবিকতা প্রদর্শন করিতে গিয়া কোনোক্রমেই রাষ্ট্রের সংহতি ও নিরাপত্তাকে লঘু করিয়া দেখা যাইবে না। বরং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক মহলের উপর চাপ বৃদ্ধির কৌশল অন্বেষণ করিতে হইবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র খ ইন প রব শ র হইত
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত