সিলেটের চায়ের সুনাম দেশজুড়ে। প্রবাসীরাও বিদেশে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে এ চা নিয়ে যান। সিলেট বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালুর খবরে চাসহ স্থানীয় পণ্য রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তবে প্যাকেজিং হাউস না থাকায় আপাতত তা সম্ভব হচ্ছে না।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত রোববার প্রথম কার্গো ফ্লাইট উড়াল দিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার বিকেলে আরেকটি কার্গো যাবে। গার্মেন্ট পণ্যগুলোর গন্তব্য স্পেন।

এই খবরে আগ্রহ দেখাচ্ছেন স্থানীয় রপ্তানিকারকসহ প্রবাসীরা। যুক্তরাজ্য থেকে একাধিক ব্যবসায়ীসহ কমিউনিটি নেতারা সমকালকে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। কেবল যুক্তরাজ্যেই সিলেটের অন্তত ১০ লাখ প্রবাসী বসবাস করেন। এখানকার পণ্যের প্রতি তাদের আগ্রহ প্রবল। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।

এ সুযোগ আপাতত মিলছে না বলে জানিয়েছেন ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানির গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি করবে ফ্লাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ভয়েজার। প্যাকেজিং হাউস তৈরির বিষয়টি সরকারের প্রক্রিয়াধীন।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট চলবে। প্রয়োজনে বাড়ানো হবে।
এদিকে ওসমানী বিমানবন্দরে প্যাকেজিং হাউস স্থাপনের দাবি উঠছে। যদিও কয়েক বছর ধরে এ দাবি করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, প্যাকেজিং হাউস হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামাল রপ্তানি সহজ হবে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশন কমিটি সিলেটের চেয়ারম্যান হিজকিল গুলজার জানিয়েছেন, কার্গো ফ্লাইটের সুফল যাতে সিলেটের রপ্তানিকারকরা পান, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফ্লাইট চালু হওয়ায় এ অঞ্চলের রপ্তানিকারকরা স্বপ্ন দেখছেন। এবার তারা পণ্য যাতে পাঠাতে পারেন, সেই প্রত্যাশা করছেন।

যুক্তরাজ্যের ওল্ডহাম থেকে ব্যবসায়ী এমদাদুল হক সমকালকে জানান, তিনি সিলেট থেকে চা পাতা নিতে আগ্রহী। তাঁর মতো অনেকে আছেন, যারা কার্গো সুবিধার কথা শুনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা যদি সেই সুযোগ করে দেয়, তাহলে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বাড়বে।

সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ জানান, কার্গো ফ্লাইটে সিলেটের পণ্য যাওয়ার সুযোগ নেই। এখানে গার্মেন্টসসহ বড় শিল্পকারখানা নেই, যেখান থেকে পণ্য বিদেশ পাঠানো যাবে। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির ওপর জোর দিতে হবে। বিমানবন্দরে প্যাকেজিং হাউস করার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। সেটি স্থাপন হলে শাকসবজিসহ কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির দ্বার খুলবে।’

যুক্তরাজ্য ক্যাটারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি শাকুর আলী বলেন, ‘বিমানে বিভিন্ন সময় সিলেটের নানা পণ্য নিয়ে আসা হয়। কার্গো ফ্লাইট সম্প্রসারণ করতে হবে। শুধু গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি করলে চলবে না। সেখানে যুক্ত করতে হবে কাঁচামালও। যুক্তরাজ্যে সিলেটে উৎপাদিন পণ্যের বিশাল বাজার বিবেচনা করে সরকার উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক র গ ফ ল ইট ব যবস য় র ফ ল ইট

এছাড়াও পড়ুন:

গোদাগাড়ীতে সন্ত্রাসী হামলায় নারীসহ ৬ জন আহত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে একটি পরিবার। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন। এছাড়া তাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে। ধানের পালায় অগ্নিসংযোগ এবং খেতের পেয়ারা বাগান কেটে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পানিপার গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার (১১ জুন) প্রথমে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর দিন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আহত ছয়জন এখন গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

হাসপাতালে ভর্তিরা হলেন, চর আষাড়িয়াদহ পানিপার গ্রামের আল্লাম হোসেন, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবু, মেয়ে ফাতেমা বেগম, নাতি জিহাদ (১৪), ইয়াকুব আলী এবং তাদের প্রতিবেশী বকুল ওরফে কান্দু। তাদের মধ্যে আল্লামের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। ফাতেমার গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। এছাড়া তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়।

আরো পড়ুন:

বগুড়ায় আসামির ছুরিকাঘাতে ২ পুলিশ আহত

আড়াইহাজারে জামায়াতের পথসভায় বিএনপির হামলা, আহত ৫

আহতরা জানান, দিয়াড় মহব্বতপুর গ্রামের জামিলুর রহমানের কাছ থেকে আল্লাম হোসেনের স্ত্রী ও ছেলে গোলাম মোস্তফা ২০১৬ সালের ১৮ মে  শন্য দশমিক ৪৯৫০ একর ও তার আরেক ছেলে মুরশালীন ইসলাম ২০১৮ সালের ৯ মে শূন্য দশমিক ১১০০ একর জমি কেনেন। এর দলিলও করা হয়। জামিলুর রহমান আরএস রেকর্ডমূলে জমি বিক্রি করেন। পরে বিডিএস রেকর্ডে দলিলের কথা গোপন করে এসব জমি আবার নিজেদের নামে রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে তারা জমিগুলো আবার দখলের চেষ্টা করছিলেন।

তারা আরো জানান, জমি কেনার পর প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে পেয়ারা বাগান করা হয়। গত ১১ জুন সকালে জামিলুর রহমান ও তার ভাই আদিল হোসেনের নেতৃত্বে তাদের ছেলেরা গিয়ে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় আল্লাম হোসেন গ্রামের লোকজনের কাছে নালিশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরদিন জামিলুর রহমান, তার ভাই আদিল হোসেন এবং তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী ধারালো হাঁসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, বল্লম ও বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আল্লাম হোসেনের বাড়িতে হামলা চালান। বাড়িটিতে ভাঙচুর করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় ধানের পালায়। দুই দিনের হামলায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। 

আহত আল্লাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। ধানের পালার আগুন নেভাতে গেলে হামলাকারীরা তার নাতি জিহাদকে ধাক্কা দিয়ে আগুনের ভেতর ফেলে দেয়। এতে তার পা পুড়ে যায়। তার আরেক নাতি ইয়াকুবকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাদের বাঁচাতে গেলে মেয়ে ফাতেমার গলায় হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করা হয়। তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়। ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবুকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে প্রতিবেশী বকুলকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।

ভুক্তভোগী আল্লাম আরো জানান, হামলাকারীরা তাদের আহত অবস্থায় ফেলে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকারীরা এখনো তাদের বাড়ি ঘিরে রেখেছেন। জমির দাবি করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। হাসপাতাল থেকে তাদের ছুটি দেয়া হলে এ ঘটনায় তারা মামলা করবেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত জামিলুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ঘটনা তিনি শুনেছেন। আহতরা থানায় অভিযোগ করতে চেয়েছেন। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
 

ঢাকা/কেয়া/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ