পশুপাখি, নদী-জলাশয়-বন সুরক্ষায় প্রহরী পাখিচিত্রীরা
Published: 29th, April 2025 GMT
পাখিচিত্রীরা পশুপাখিদের প্রতি অপরাপর নাগরিকের চেয়ে বেশি সংবেদশীল। আমাদের পাখিচিত্রীরা প্রত্যেকে একেকটি তথ্যভান্ডার। দেশে কোন বছর কোথায় কোন কোন পাখি আসে, কোন পাখি কত বছর পর এল—সবকিছু পাখিচিত্রীদের জানা। কোন পাখি কোন মৌসুমে বাচ্চা দেয়, কী খায়, কোন পাখি কোন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে—এগুলোর সঙ্গে পাখিচিত্রীরা দারুণভাবে পরিচিত। প্রচণ্ড ঝড়ের সময় মাঝসমুদ্রের কোন পাখি নদীতে আসে—এ খবরও আছে পাখিচিত্রীদের কাছে।
গণমাধ্যমে যাঁরা পাখি নিয়ে ফিচার লিখছেন, তাঁরা প্রায় সবাই ছবি তোলার সঙ্গে যুক্ত। পাখিচিত্রীরা কেবলই পাখি নিয়ে কাজ করেন, তা নয়; বন্য যেকোনো পশু নিয়েও তাঁদের আগ্রহে কোনো কমতি নেই। সুন্দরবন, পার্বত্য এলাকা, হবিগঞ্জ সাতছড়ি উদ্যান, জাতীয় উদ্যানসহ দেশের কোন বনে কোন পশু আছে—এ খবরও পাওয়া যাবে। সেই অর্থে পাখির সব আলোকচিত্রী মূলত ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার বা বন্য পশুপাখির আলোকচিত্রী। পাখিচিত্রীরা সচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করছেন।
তবে এমন ঘটনাও আছে, কেউ কেউ পাখির ভালো ছবি তোলার জন্য পাখিকে চরম মাত্রায় বিরক্ত করেন। যদিও এই সংখ্যা কম; তবু এ প্রবণতা থেকে পাখিচিত্রীদের বের হতে হবে। পাখিচিত্রী ছাড়াও কেউ আছেন, যাঁরা পাখির ছবি তোলেন, কেউ আছেন কেবল পাখি দেখেন। তাঁরাও পাখির নিরাপদ আবাস চান।
দেশে পাখি শিকার অনেকাংশে কমে গেছে প্রধানত পাখিচিত্রীদের কারণে। এমনও দৃষ্টান্ত আছে, আগে পাখি শিকার করত, পরে পাখির ছবি তুলতে গিয়ে পাখি সুরক্ষার কর্মীতে পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশে যে ৭৩২ ধরনের পাখি দেখার রেকর্ড অছে, তা মূলত পাখিচিত্রীদের দেওয়া তথ্যের মাধ্যমে নির্ধারতি হয়েছে। পাখিচিত্রীরা জীবনের অনেক বড় অংশ পাখির অনুসন্ধানে ব্যয় করছেন।
শীত মৌসুমে রাজশাহীতে পদ্মায় প্রতিবছর হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আসে। আগে সেখানে অনেক পাখি শিকার করা হতো। যখন থেকে পাখিচিত্রীরা নিয়মিত পদ্মায় যাওয়া-আসা শুরু করলেন, তখন থেকে পাখির খুনিদের আসা বন্ধ হলো। কেবল যে পাখিচিত্রীরা এখানে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তা নয়, তাঁরা যেসব নৌকায় যাতায়াত করেন, ওই সব নৌকার মাঝিরাও খুব সক্রিয় থাকেন।
বাংলাদেশের বিরলতম পাখি মার্গেঞ্জার। ২০২৪ সালের শেষ দিনে রংপুরে তোলা৷.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নাগরিক সেবা চালাবেন ইশরাক
মেয়রের দায়িত্ব বুঝে না পেলেও নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নাগরিক সেবা চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তবে শপথের দাবিতে নগর ভবন চত্বরে বিরতিহীন কর্মসূচি চলবে। কর্মসূচি চলাকালে নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা থাকবে। জরুরি নাগরিক সেবাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্যরা কেউ ভবনে ঢুকতে পারবেন না।
ঈদুল আজহার বিরতির পর গতকাল রোববার ঢাকাবাসীর চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইশরাক হোসেন এসব কথা বলেন। তবে মেয়রের শপথ ছাড়া সংস্থার কার্যক্রম তদারকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
ইশরাক বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদসহ দৈনন্দিন জরুরি সেবা চালু থাকবে। অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কর্মকর্তারা অফিস করতে পারবেন না। নগর ভবনের প্রধান ফটকের তালা খোলা হবে না, এটা আন্দোলনের প্রতীক। জনগণের দৈনন্দিন সেবা আমাদের তত্ত্বাবধানে চালু থাকবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণেই আমাকে শপথ পড়ানো হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে আইন অমান্য করেছেন।
এনসিপির সমালোচনা করে ইশরাক বলেন, এনসিপির একটি বিপথগামী ক্ষুদ্র অংশ নির্বাচন কমিশনের সামনে মব সৃষ্টি করে ভীতি দেখায়। পরে নির্বাচন কমিশন আর এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না। তারা নির্বাচন কমিশনকে বাইরে থেকে প্রভাবিত করছে। আদালত আর সংবিধানও মানতে চাইছে না। নাগরিক সেবা বন্ধ থাকায় মশার উৎপাত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইশরাক বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগ, স্বাস্থ্য ও কনজারভেন্সি বিভাগের সঙ্গে নগর ভবনে মঙ্গল ও বুধবার মিটিং করব।
নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নাগরিক সেবা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ইশরাক আদালতের রায় পেলেও অফিসিয়ালি দায়িত্ব পাননি। তাহলে তিনি কীভাবে সংস্থার কার্যক্রম তদারকি করবেন? এটা এক ধরনের মব জাস্টিসের মতো অবস্থা। বিষয়টি সরকারকেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ এক মাস ধরে ডিএসসিসির মতো একটি সেবা সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারে না। এ জন্য জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে, এর দায় কে নেবে?
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ও বিআইপির সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। ইশরাকের শপথের বিষয়টি এখন আদালত ও নির্বাচন কমিশনের বিষয়। তবে তাঁর কারণে দেশের বিদ্যমান আইনকে অবজ্ঞা করে যদি রাজধানীর ৯০ শতাংশের নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হয়, তাহলে এই দায় বিএনপির ওপরেই বর্তাবে।