গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর হস্তান্তর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘর হস্তান্তর করেন তিনি।

এ সময় নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলা থেকে উপকারভোগীদের ভার্চুয়ালি চাবি হস্তান্তর করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বন্যা বেড়ে যাচ্ছিল। সবাই ত্রাণ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি, সাহায্যের জন্য সারাদেশ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এটা যে কত বড় বন্যা ছিল তা বুঝতে পেরেছি বন্যা চলে যাওয়ার অনেক পরে। বন্যায় যারা বাড়িঘর হারিয়েছিল, তাদের কোথাও যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। নানাভাবে প্রস্তাব আসছিল, বাড়ির জন্য টাকা দিতে হবে। টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আমি একটু শক্ত অবস্থান নিয়েছিলাম। টাকা দিতে গেলে এই টাকার ভাগ-বাটোয়ারা অনেক রকম হয়ে যাবে। যারা প্রাপ্য তাদের হাতে পৌঁছাবে না। তখন প্রস্তাব এসেছিল যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে করার, সেই প্রকল্পের বিষয়ে জানা ছিল না, তবে নামটা জানা ছিল। তখন ভাবলাম যে এটা কী করা যায়, পরে জানলাম এটা সেনাবাহিনী করবে। তখন স্বস্তি পেলাম, আসলে টাকাটা সঠিকভাবে ব্যবহার হবে।

তিনি বলেন, ভালো লাগছে যে, টাকাটার সঠিক ব্যবহার হয়েছে। ঘরটাও সঠিকভাবে নির্মাণ হয়েছে। অনেক সময় টাকা ব্যবহার করা হলেও গুণগতমান ঠিক হয় না। আজ গুণগতমানের ব্যাপারেও আশ্বস্ত হলাম। আমরা যে টাকা দিয়েছিলাম তার অর্ধেক টাকাতে কাজটা হয়েছে। উল্টো খবর। সাধারণত যে টাকা দেয়া হয়, তার দ্বিগুণ চাওয়া হয়। এখানে যা দেয়া আছে তার অর্ধেক ব্যবহার হয়েছে। একটা আনন্দের খবর।

ড.

ইউনূস বলেন, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা একটি সাহসী ও স্বনির্ভর জাতি গড়ে তুলতে পারব। দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যারা বাড়ি পেয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন। দেশের মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে সাহস জুগিয়েছে সে সাহস সবসময় মনের মধ্যে ধারণ করবেন।

এই‍ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই কাজে যারা নিরলস পরিশ্রম করে গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সদস্যগণ, এলজিইডির প্রকৌশলী ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা তাদের প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ।

প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি ছোট প্রকল্প। তিনশ ঘর নির্মাণ, কিন্তু এর মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ করার যে দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করলাম তা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ভবিষ্যতেও এধরনের দায়িত্ব দেওয়া হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পালন করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকবে। প্রকল্পের আওতায় ২৯৮টি ঘর ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় দুটি ঘর নির্মাণ করা যায়নি, সেগুলো খুব শিগগিরই নির্মাণ হয়ে যাবে।

গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান।

ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার চারজন উপকারভোগী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। যে সকল পরিবারের বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থাৎ যাদের ঘর নির্মাণের সামর্থ্য নাই এ রকম ৩০০টি পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনঃনির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। 

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রধানের পেশা, আয়, ঘর নির্মাণে আর্থিক অসামর্থ্য, দুঃস্থতা, ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ধরন ও স্থানীয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগী পরিবার বাছাই করা হয়। 

জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য এক বা একাধিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যৌথ জরিপের মাধ্যমে উপকারভোগীদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা হয়।

৩০০টি ঘরের মধ্যে ফেনী জেলায় ১১০টি, নোয়াখালী জেলায় ৯০টি, কুমিল্লা জেলায় ৭০টি ও চট্টগ্রাম জেলায় ৩০টি ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

ঘরগুলো যেন দুর্যোগ সহনীয় ও টেকসই হয় সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহযোগিতায় দুটি ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়। 

প্রতিটি ডিজাইনে ২টি মূল কক্ষসহ কমন স্পেস, টয়লেট, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। প্রথম ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৪৯২ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ ৭ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং দ্বিতীয় ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৫০০ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ ৭ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা। উপকারভোগীদের নিজ বসতভিটার স্থানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনো একজন উপকারভোগীর জন্য যেখানে যে ডিজাইন প্রযোজ্য হবে সেভাবেই গৃহগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। 

ঘরগুলো নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল হতে প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৩০০টি ঘর নির্মাণে প্রায় ২৪ কোটি ৯৮ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘর ন র ম ণ প রকল প র অন ষ ঠ ন ব যবহ র ড জ ইন পর ব র র জন য প রস ত

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ