‘ভারতকে থামান’, জাতিসংঘকে শাহবাজ শরিফ
Published: 30th, April 2025 GMT
ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে নয়াদিল্লিকে দায়িত্বশীল আচরণ ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে অনুরোধ জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ জোর দিয়ে বলেছেন, ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু অববাহিকার পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা পাকিস্তানের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে এক ফোনালাপে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। দুই নেতার এ আলাপে দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের ওপর আলোকপাত করা হয়।
গুতেরেসের সঙ্গে আলাপে শাহবাজ বলেন, ভারতের কোনো দুর্ভাগ্যজনক আচরণের জবাবে পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা পূর্ণ শক্তি দিয়ে রক্ষা করবে।
ভারতের কোনো দুর্ভাগ্যজনক আচরণের জবাবে পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা পূর্ণ শক্তি দিয়ে রক্ষা করবে।শাহবাজ শরিফ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গত মঙ্গলবার থেকে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। ঘটনার পরপরই কোনো প্রমাণ ছাড়াই ভারত ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলাপে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানায়। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের বড় ত্যাগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
ভারতের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে শাহবাজ বলেন, পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানকে যুক্ত করার যেকোনো চেষ্টা অগ্রহণযোগ্য। পাশাপাশি তিনি ওই ঘটনায় নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
‘সন্ত্রাসবাদ’-এর অজুহাতে কাশ্মীরিদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে অবমূল্যায়ন করার ‘ভারতীয় চেষ্টায়’ গভীর উদ্বেগ জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতের ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসের’ বিষয়ে তুলে ধরেন তিনি।‘সন্ত্রাসবাদ’-এর অজুহাতে কাশ্মীরিদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে অবমূল্যায়ন করার ‘ভারতীয় চেষ্টায়’ গভীর উদ্বেগ জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতের ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসের’ বিষয়ে তুলে ধরেন তিনি।
গুতেরেসকে শাহবাজ বলেন, সিন্ধু অববাহিকার পানিকে অস্ত্র বানানোর ভারতের প্রয়াস গ্রহণযোগ্য নয়। এ অববাহিকার পানিকে ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবনীশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত কোনো দুর্ভাগ্যজনক আচরণ দেখালে, এর জবাবে পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি ভারতকে সংযত আচরণ করার পরামর্শ দেওয়ার ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রাসঙ্গিক প্রস্তাবসমূহ অনুযায়ী কাশ্মীর সমস্যার ন্যায়সংগত সমাধানে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শাহবাজ বলেন, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি দায়িত্বশীল সদস্য ও নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা ত্বরান্বিত করায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মহাসচিব গুতেরেস ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন, যা দুঃখজনক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টায় নিজের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখার প্রস্তাব দেন তিনি।স্টিফেন ডুজারিক, জাতিসংঘের মুখপাত্রএদিকে জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র বলেন, মহাসচিব গুতেরেস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শংকরের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব আলাপে গুতেরেস আইনি পন্থায় ন্যায়বিচার অনুসরণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
আরও পড়ুনসিমলা চুক্তি স্থগিত করার পাকিস্তানের হুমকি কি যুদ্ধ ঘোষণার শামিল২০ ঘণ্টা আগেজাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, মহাসচিব ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন, যা দুঃখজনক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টায় নিজের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখার প্রস্তাব দেন তিনি।
আরও পড়ুন৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে ভারতের হামলার পরিকল্পনার গোয়েন্দা তথ্য আছে৭ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনভারত-পাকিস্তানের প্রতি উত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়াতে ইসলামী
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাভাবিক বললেও, দুইজনের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের পর বিবৃতিতে দলটি বলেছে, ‘যৌথ বিবৃতি প্রদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।’
দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ‘১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাকে জামায়াত খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে জামায়াত বলেছে, ‘গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তার এই ঘোষণার পর লন্ডন সফরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে জামায়াত মনে করে। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। জামায়াত এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা মনে করি দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’
জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিরোধী নয় বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আমির দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে জানিয়েছিলেন ২০২৬ সালের রসজানের পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াত মনে করে সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা করে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের দিন জামায়াত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছিলেন, ‘জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’
জামায়াত নেতারা শুক্রবার রাতেই সমকালকে বলেছিলেন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।