কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ওরিয়ন গ্রুপের প্রস্তাবিত ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) এবং উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)। সহ-আয়োজক হিসেবে ছি‌ল বাংলাদেশ আইন বিষয়ক সমিতি (বেলা), প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), মহেশখালী জনসুরক্ষা মঞ্চ এবং সংশপ্তক।

সংবাদ সম্মেলনে বিডব্লিউজিইডি এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, ‘বিতর্কিত আইনের অধীন বাতিল প্রযুক্তি দিয়ে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের এই চুক্তি পুরোপুরি অবৈধ। এর ফলে জনগণের কাঁধে নতুন করে বাৎস‌রিক ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা চাপানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার ওরিয়ন গ্রুপকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৬৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ দেয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২ ঢাকা লিমিটেডের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষরিত হয়। পিপিএ অনুসারে, চুক্তি পরবর্তী ৪৫ মাস বা ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। কিন্তু ওরিয়ন গ্রুপ নির্ধারিত সময়ে উৎপাদন তো দূরের কথা, নির্মাণ কাজই শুরু করতে না পারায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিডিবি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মাতারবাড়ি এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। পাশাপাশি ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, পরপর কয়েকবার সময় পরিবর্তন করে অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাইতে আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এই ‘এক্সটেনশন’টা না দিলে- চুক্তিটি আপনা আপনিই বাতিল হয়ে যেতে পারত। বিডব্লিউজিইডির সমর্থনে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মাসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা, জ্বালানি উপদেষ্টা ও পরিবেশ উপদেষ্টার কা‌ছে এ দাবিটিই করা হয়।

সরকারি তিন ব্যাংক যৌথভাবে ওরিয়ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আহসান এইচ মনসুর এই ঋণের বিরোধিতা করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়নের পক্ষে মত দেন। ২০২৪ সালে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ঋণ বাতিল হলেও, কয়লা প্রকল্পের ঋণ এখনো বহাল রয়েছে।

হাসান মেহেদী বলেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কোনো ক্রমেই ২০২৬ সালের মধ্যে নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। এর পরে নির্মাণ করলে ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এছাড়া স্থান পরিবর্তনের কারণে ভূমি ইজারা ও জ্বালানি পরিবহণ খাতের খরচ পরিবর্তিত হবে, যা ২০১৬ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত টাকার তুলনায় কম হওয়া উচিৎ। শুধুমাত্র এ দুটি কারণেই এ বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) বাতিল করা দরকার।

গত ৪ মে প্রস্তাবিত ওরিয়ন ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি গণআবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া হয়েছে।  

পরিবেশ, জলবায়ু, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির ঝুঁকি বিবেচনায় বিডব্লিউজিইডির উদ্যেগে ওরিয়নের কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বাতিলের জোর দাবি জানিয়ে দেশের ১৪৪টি নাগরিক সংগঠন অর্থ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সিপিজিসিবিএল-এর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ‌ক্ষের কা‌ছে পৃথক পৃথক চারটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে।

গত ১ মার্চ স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করে মাতারবাড়িতে মানববন্ধন আয়োজন ক‌রে।  ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ইআইএ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ প রকল প উপদ ষ ট প রকল প পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

মেধাক্রম ৩২ হাজার: পোষ্য কোটায় ভর্তি হলেন ববি উপাচার্যের মেয়ে

পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলমমের মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের একটি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪০ এবং ফলাফলে মেধাক্রম ছিল ৩২ হাজার। তবে ওই অনুষদে কোটা ব্যাতিত মেধাতালিকার সর্বশেষ ৫০৩৫ মেধাক্রম পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

আরো পড়ুন:

বিভিন্ন দাবিতে ববি শিক্ষার্থীদের ফের মহাসড়ক অবরোধ

নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ও বিটেক ভবন ববি শিক্ষার্থীদের দখলে

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া তিনজন শিক্ষার্থীর পরিচয় জানা গেছে। এরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়ে যার প্রাপ্ত নম্বর ৪০, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের ছেলে (৩৯.৫০ নম্বর) ও ইলেকট্রিশিয়ান আরিফ হোসেন সুমনের ছেলে (৫৩.৫০ নম্বর)। চলতি বছর পোষ্য কোটাসহ বিভিন্ন কোটায় ভর্তি হয়েছেন মোট ২১ জন শিক্ষার্থী।

চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য কোটায় ভর্তি হন ১৮ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে প্রতিবন্ধী কোটায় তিনজন, হরিজন ও দলিত কোটায় একজন। ‘বি’ ইউনিটে মুক্তিযোদ্ধা (সন্তান) চারজন, প্রতিবন্ধী দুইজন, হরিজন ও দলিত একজন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী একজন। ‘সি’ ইউনিটে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী দুইজন, বিকেএসপি একজন, মুক্তিযোদ্ধা একজন, হরিজন ও দলিত একজন, প্রতিবন্ধী একজন।

গত বছর কোটা নিরসনে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রুপ নেয়।  পরে আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। কিন্তু তারপরেও কোটা পদ্ধতি বহাল রেখে উপাচার্য নিজ মেয়েকে কোটায় ভর্তি করানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

তারা জানান, পোষ্য কোটা হলো সবচেয়ে বড় অযোক্তিক কোটা। একজন উপাচার্যের সন্তান যদি মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হতে না পেরে কোটার সুযোগ নিয়ে ভর্তি হয়, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই এই অযোক্তিক কোটা বাতিল করা হোক এবং যোগ্যদের সুযোগ দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে ভর্তি টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, “গুচ্ছের নিয়ম অনুযায়ী ৩০ নম্বর পাস মার্ক অতিক্রম করলেই কোটা ব্যবহার করা যায়। উপাচার্যের মেয়ে শর্ত পূরণ করেই কোটার সুবিধা পেয়েছেন। এখানে নিয়মের বাহিরে কোনো বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়নি।”

ঢাকা/আরিফ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো আসাদুজ্জামান নূরকে
  • শোকজের সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুত করার দাবি ইবি অধ্যাপকের
  • জুলাই-আগস্টে রাজস্ব আদায়ে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক জহুরুল ইসলামকে চাকরি থেকে অপসারণ
  • মেধাক্রম ৩২ হাজার: পোষ্য কোটায় ভর্তি হলেন ববি উপাচার্যের মেয়ে
  • ইবির আইন বিভাগের শিক্ষককে চাকরিচ্যুত
  • গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রেই: মঈন
  • ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায় জমি কিনবে ক্রাউন সিমেন্ট
  • টিকটকের অ্যালগরিদমের নিয়ন্ত্রণ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে
  • কর্মী ভিসায় ট্রাম্পের ফি আরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কোন দেশ