করিডর ও বন্দর ইস্যুতে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা সিপিবির
Published: 18th, May 2025 GMT
মিয়ানমারের রাখাইনে সহায়তার নামে ‘মানবিক করিডর’ এবং চট্টগ্রাম বন্দরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২৩ ও ২৪ মে দুই দিনব্যাপী সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
আজ রোববার সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দৃশ্যমান উদ্যোগ না নিয়ে রাষ্ট্রীয় এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বা নিতে যাচ্ছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাখাইনে করিডর এবং নিজস্ব সক্ষমতা ও লাভজনক থাকার পরও বিদেশি কোম্পানিকে বন্দর লিজ দেওয়া দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।
বিবৃতিতে করিডর, বন্দর বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দেশ-মানুষের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এ ছাড়া বিবৃতিতে যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করা, সাম্রাজ্যবাদী ‘প্রক্সি ওয়ার’–এর মধ্যে দেশকে জড়িয়ে ফেলাসহ দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী যেকোনো কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দল, সংগঠন ও সচেতন মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানায় সিপিবি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সবার
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। সিইসির তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী যাত্রায় প্রবেশ করল।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের জোয়াল ভেঙে দেশকে গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে যাওয়ার যে বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই হবে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাঁর ভাষণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেন। প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। নির্বাচনের যে রোডম্যাপ তিনি ঘোষণা করেছেন, সে অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এরপর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, বাছাই, আপিল নিষ্পত্তি শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে আগামী ২১ জানুয়ারি। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী বুধবার দুপুরে বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস, আইনবিধি সংস্কার, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ ও বড় কাজগুলো শেষ করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনসংক্রান্ত কেনাকাটা, পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধন শেষ করেছে। বর্তমানে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধনের কাজ চলছে।
ইতিমধ্যে প্রশাসন ও পুলিশে বড় রদবদল হয়েছে। সব মিলিয়ে তফসিল–পূর্ব ইসির প্রস্তুতিকে সন্তোষজনকই বলা যায়। তবে আমাদের নির্বাচনী ইতিহাস বলে, তফসিল ঘোষণার পরই মূল চ্যালেঞ্জটা দেখা যায়। এবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য নিয়ন্ত্রণও আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের সময় পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। পুলিশ এখনো পুরোপুরি আগের সক্রিয়তায় ফিরতে পারেনি। যদিও তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে সশস্ত্র বাহিনীসহ সব কটি বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ সংখ্যা নিশ্চিত করেই বিপুল কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁরা কতটা সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন, তা অনেকখানি নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিচক্ষণ ও বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর। ইতিমধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে (আরপিও) সংশোধন আনা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন আগের চেয়ে ক্ষমতায়িত হয়েছে। আমরা আশা করি, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা প্রয়োগে সাহসী ও নিরপেক্ষ থাকবে।
জাতি আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছালেও যাত্রাটা মোটেই সহজ ছিল না। পরপর তিনটি জালিয়াতির নির্বাচন ও কর্তৃত্ববাদী শাসনে শেখ হাসিনা সরকারের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে নেমেছিল। গত বছরের জুলাই ও আগস্টে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়, দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ নির্বাচনী যাত্রায় প্রবেশ করল। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
অর্থনীতি, বিনিয়োগ, জাতীয় নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সবকিছুর বিবেচনায় ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দায়িত্ব যেমন অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের, একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর। সশস্ত্র বাহিনীরও এ ক্ষেত্রে গুরুদায়িত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি।