নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ নিয়ে রিটের ওপর আদেশ ২৬ মে
Published: 19th, May 2025 GMT
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের কিছু সুপারিশ নিয়ে করা রিটের ওপর আদেশের জন্য ২৬ মে দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার শুনানি নিয়ে আদেশের এই দিন ধার্য করেন।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রওশন আলী আবেদনকারী হয়ে ৪ মে রিটটি দায়ের করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো.
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব প্রথম আলোকে বলেন, শুনানি নিয়ে আদালত ২৬ মে আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
রিট আবেদনকারীর ভাষ্য, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনটি সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ও আলোচিত হয়েছে। প্রতিবেদনের বিভিন্ন সুপারিশ ইসলামি শরিয়তের বিধানের পরিপন্থী। দেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থী। দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয়ভাবে স্পর্শকাতর। তাই এ বিষয়ে রিট করা হয়।
রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিভিন্ন অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত ১১.৩.১(ক), ৩.২.৩, ৩.২.৩.১.১ (ক, গ), ১০, ১২.৩.১.১ (জ), ৪.১, ১০.২, ৩.২.১.১.৩ (ক), ৩.২.২.১.৪ (খ) এবং ৬.৩.১ (ক) সুপারিশ বাস্তবায়ন ও কার্যকর করায় পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উল্লেখিত সুপারিশ বাস্তবায়ন ও কার্যকর করা থেকে বিরত রাখতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সংস্কারের জন্য প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে রিটে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইনসচিব, ধর্মসচিব এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রেফারেন্স ও মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি ১৬ জুলাই
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ওপর শুনানির জন্য ১৬ জুলাই দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মঙ্গলবার শুনানির জন্য এই দিন রাখেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত ডিসেম্বরে রিট করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। এই লিভ টু আপিলে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি) মঞ্জুর করার প্রার্থনা রয়েছে। লিভ টু আপিলটি গত ১১ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। লিভ টু আপিলটি মঙ্গলবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ৯৯ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
লিভ টু আপিলের বিষয়টি সকালে আদালতে উত্থাপন করেন বলে জানান লিভ টু আপিলকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আদালত ১৬ জুলাই কার্যতালিকার শীর্ষ বিষয়টি থাকবে বলে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে ‘সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের’ বিষয়ে বলা আছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।’
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথের আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান। রাষ্ট্রপতির বিশেষ রেফারেন্সের (১/২৪) পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট মতামত দেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনা হয়। মতামতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন।