সরকারি চাকুরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া ঘিরিয়া সচিবালয়ে যেই পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক হইলেও বিস্ময়কর নহে। উদ্বেগের কারণ, অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় কয়েক দিন যাবৎ প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। এহেন অচলাবস্থায় একদিকে সেবাপ্রত্যাশীরা বঞ্চিত হইতেছেন, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নমূলক ও প্রশাসনিক বহু সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ঝুলিয়া পড়িতেছে। এইরূপ পরিস্থিতি বিস্ময়কর নহে এই কারণে, অধ্যাদেশটিতে এমন কিছু ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে, যেইগুলি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য শঙ্কাজনক হইতে বাধ্য। ফলত, তাহারা আন্দোলনই শ্রেয়তর মনে করিয়াছেন। বস্তুত যেই প্রক্রিয়ায় অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত হইয়াছে, উহাও প্রশ্নবিদ্ধ। যেই কোনো সিদ্ধান্ত টেকসই করিবার অন্যতম উপায় হইল উহার চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়ায় অংশীজনের অভিমত গ্রহণ। অভিযোগ রহিয়াছে, আলোচ্য অধ্যাদেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতামত বহুলাংশে উপেক্ষিত। এই প্রেক্ষাপটে অধ্যাদেশটির বিরোধিতা বিস্ময়কর হইতে পারে না।  

স্বীকার্য, আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়া সুপারিশ প্রদানে সরকার ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করিয়াছে। কিন্তু যেই কার্যটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়নকালে প্রয়োজন ছিল, সেই কার্য এখন করিলে উপযুক্ত ফল আশা করা যায় না। কারণ ইতোমধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অধ্যাদেশ সম্পর্কে সন্দেহ ও শঙ্কা দানা বাঁধিয়াছে। যাহার পরিপ্রেক্ষিতে তাহারা সচিবালয় অচল করিয়া দিয়াছেন। মোদ্দা কথা, সময়ের কার্য সময়ে সম্পাদন না করিলে যে খেসারত দিতে হয়, আলোচ্য অধ্যাদেশ সরকারকে উহাই দিতে বাধ্য করিতেছে। প্রসংগত, সোমবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীরা উক্ত অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানাইয়াছেন। এমনকি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাহারা আন্দোলন চালাইয়া যাইবার ঘোষণাও দিয়াছেন।

প্রতিবেদন অনুসারে, উক্ত অধ্যাদেশে চার প্রকার অপরাধ ও তিন প্রকার শাস্তির কথা বলা হইয়াছে– সরকারি কর্মচারী এমন কার্য করিতে পারিবেন না, যাহাতে অন্য কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি হয় বা শৃঙ্খলা ব্যাহত হয় বা কার্যে বাধার সৃষ্টি হয়; অন্যদের সহিত সংঘবদ্ধভাবে বা পৃথকভাবে ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত কার্যে অনুপস্থিত থাকেন বা কর্তব্য-কার্যে ব্যর্থ হন; অন্য কর্মচারীকে কার্যে অনুপস্থিত ও বিরত থাকিতে বা কর্তব্য পালন না করিতে উস্কানি দান এবং যে কোনো কর্মচারীকে কার্যে অনুপস্থিত থাকিতে বা কার্য না করিতে প্ররোচিত করা হয়। বিশেষ এই বিধানে যুক্ত তিন ধরনের শাস্তি হইল– বরখাস্ত, অব্যাহতি এবং পদাবনতি বা বেতন হ্রাস। যদিও, সম্ভবত অংশীজনের প্রতিবাদের মুখে চূড়ান্ত অধ্যাদেশে কারণ দর্শাইবার বিষয়টি যুক্ত করিয়া একজন অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রাখা হইয়াছে; অপরাধের বিষয়গুলি নির্ধারণে এক প্রকার অস্পষ্টতা রহিয়া গিয়াছে, যাহা অপব্যবহার ও হয়রানির হাতিয়াররূপে কার্যে লাগিতে পারে। তদুপরি, সরকারি কর্মচারীগণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে ট্রেড ইউনিয়ন বলিয়া পরিচিত সংঘবদ্ধভাবে স্বীয় দাবি-দাওয়া উত্থাপন বা আদায়ের যে অধিকার ভোগ করিবার অধিকারী; আলোচ্য অধ্যাদেশের মাধ্যমে উহাও খর্ব করিবার প্রয়াস স্পষ্ট। আমরা মনে করি, সরকারের নীতিনির্ধারকদের কর্তব্য হইল আলোচনার মাধ্যমে অনতিবিলম্বে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধ্যাদেশ-সংক্রান্ত আপত্তিগুলি সুরাহা করা। বিদ্যমান পরিস্থিতি আর দীর্ঘায়িত হইতে দেওয়া যায় না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত প রক র সরক র হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন, তেহরান তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে ‘আরো শক্তিশালী করে’ পুনর্নির্মাণ করবে। রবিবার সরকারি সংবাদমাধ্যমকে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তার দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সন্ধান করছে না।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালিয়েছিল সেগুলো পুনরায় চালু করার চেষ্টা করলে তেহরান ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে হামলার নির্দেশ দেবেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “ভবন ও কারখানা ধ্বংস আমাদের জন্য কোনো সমস্যা তৈরি করবে না, আমরা আরো শক্তির সাথে পুনর্নির্মাণ করব।”

জুনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছিল। ওই সময় ওয়াশিংটন বলেছিল, স্থাপনাগুলো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যেএকটি কর্মসূচির অংশ ছিল। তবে তেহরান জানিয়েছিল, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক উদ্দেশ্যে।

ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের প্রসঙ্গে পেজেশকিয়ান বলেছেন, “এগুলো জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য, রোগের জন্য, জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ