ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরা টিকতে না পারলেও কীভাবে সরকারি দায়িত্বে টিকে আছে বিড়াল ‘ল্যারি ক্যাট’
Published: 27th, May 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ২০১১ সাল থেকে ৫ জন প্রধানমন্ত্রী এলেন-গেলেন। বর্তমানে ষষ্ঠজন দায়িত্ব পালন করছেন। তবে একের পর এক প্রধানমন্ত্রী যাওয়া-আসা করলেও একটি বিড়াল ১৪ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ এ কার্যালয়ে স্বপদে থেকে গেছে।
ল্যারি দ্য ক্যাট নামে পরিচিত এ বিড়ালের পদের নাম ‘চিফ মাউজার টু দ্য ক্যাবিনেট অফিস’। এটি একটি সরকারি পদ। ইঁদুর ধরা বা তাড়া করা এটির প্রধান কাজ।
কে এই ল্যারি
ফার্স্ট পোস্টের তথ্য বলছে, ২০০৭ সালে রাস্তায় জন্মেছিল ল্যারি। এরপর ‘ব্যাটারসি ডগস অ্যান্ড ক্যাটস হোম’-এ এটির আশ্রয় হয়েছিল। ২০১১ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মেয়াদকালে লন্ডনের আশ্রয়কেন্দ্রটি থেকে একে ডাউনিং স্ট্রিটে আনা হয়। শুরুতে পারিবারিক পোষা প্রাণী হিসেবে আনা হলেও সেখানে সে দ্রুত সরকারি দায়িত্ব পায়।
যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অতিথিদের স্বাগত জানানো, নিরাপত্তা যাচাই ও পুরোনো আসবাবে ঘুমানো আরামদায়ক হবে কি না, পরীক্ষা করার মতো কাজগুলো করে থাকে ল্যারি।
২০০৭ সালে রাস্তায় জন্মেছিল ল্যারি। এরপর ‘ব্যাটারসি ডগস অ্যান্ড ক্যাটস হোম’-এ তার আশ্রয় হয়েছিল। ২০১১ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মেয়াদকালে লন্ডনের ‘ব্যাটারসি ডগস অ্যান্ড ক্যাটস হোম’ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে এটিকে ডাউনিং স্ট্রিটে আনা হয়। শুরুতে পারিবারিক পোষা প্রাণী হিসেবে আনা হলেও সেখানে সে দ্রুত সরকারি দায়িত্ব পায়।২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিদায়ের আগে পার্লামেন্টে দেওয়া শেষ বক্তব্যে ক্যামেরন বলেছিলেন, ল্যারি ব্যক্তিগত পোষা প্রাণী নয়; বরং সরকারি চাকরিজীবী। আর সে কারণে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যিনিই দায়িত্ব নেন না কেন, ল্যারি ডাউনিং স্ট্রিটে থাকবে। ফার্স্ট পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ল্যারির অনানুষ্ঠানিক টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২২ সালে দেওয়া একটি পোস্টে বলা হয়েছিল, ‘আমি এখানে স্থায়ীভাবে থাকি, রাজনীতিকেরা অস্থায়ী বাসিন্দা।’
ক্ষমতার নীরব প্রত্যক্ষদর্শী
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ল্যারির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সে ছয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অধীন কাজ করেছে। তাঁরা হলেন ডেভিড ক্যামেরন, থেরেসা মে, বরিস জনসন, লিজ ট্রাস (মেয়াদ ছিল মাত্র ৪৫ দিন), ঋষি সুনাক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। কিয়ার ২০২৪ সালের মে মাসে দায়িত্ব নিয়েছেন। ল্যারি যাঁদের অধীন কাজ করেছে, তাঁদের মধ্যে স্টারমারই একমাত্র লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী। ল্যারির আগের সব ‘বস’ই ছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির।
দায়িত্ব পালনকালে বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে ল্যারিকে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করতে দেখা গেছে। বলা হয়ে থাকে, সে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি সদয় ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সে খুব একটা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাতে পারেনি। ২০১৯ সালে ট্রাম্প যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে থেরেসা মের সঙ্গে বৈঠক করার সময় ল্যারি তাঁর (ট্রাম্পের) সুরক্ষিত ক্যাডিলাক গাড়ির নিচে ঢুকে পড়েছিল। এমন অবস্থায় বৈঠক শেষ হওয়ার পরও ট্রাম্পের রওনা করতে কিছু সময় দেরি হয়ে যায়।
১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ডায়াসের (মঞ্চের) সামনে ল্যারি দ্য ক্যাট.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।