হাতে ২০০ টাকা, পানি আর খাবার দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ
Published: 27th, May 2025 GMT
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ মঙ্গলবার ভোরে বড়াইবাড়ী সীমান্তের ১০৬৭ নম্বর সীমানা পিলারের ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’ এলাকা দিয়ে ওই নাগরিকদের ঠেলে পাঠানো হয়। ওই ১৪ জনের মধ্যে ৯ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী।
আরও পড়ুনকুড়িগ্রাম সীমান্তে ১৪ জনকে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা বিএসএফের, বিজিবির বাধা৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা ভারতের আসামের বাসিন্দা। ঠেলে পাঠানোর সময় তাঁদের প্রত্যেকের হাতে বাংলাদেশি ২০০ টাকা, একটি পানির বোতল ও খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দেয় বিএসএফ। পরে তাঁদের জোরপূর্বক ঠেলে এপাশে পাঠানো হয়। কেউ আসতে না চাইলে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
পুশ ইনের শিকার খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আসামের মিকিরভিটায় আমাদের মাটি (জমি) আছে, ঘরবাড়ি আছে। আমি সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। আমার মা-বাবা সেখানের আদি বাসিন্দা। আমার বড় ভাই ও মা সেখানকার ওয়ার্ড মেম্বার।’
খায়রুল আরও বলেন, ‘২৩ মে আমাকে এসপি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে ভারতের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। গতকাল (সোমবার) ওই ক্যাম্প থেকে ফজরের নামাজের আগে কাঁটাতার পার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সীমান্তে পাঠানোর আগে আমার সাথি ভাইবোনদের সবার হাতে ২০০ টাকা, পানির বোতল ও প্যাকেট খাবার দেওয়া হয়। কেউ আসতে রাজি না হলে মারধর করে।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে পুশ ইন করাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুশ ইন ঠেকাতে এলাকাবাসী ও বিজিবি সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিলে বিএসএফ চারটি গুলি করে। এ ছাড়া দুপুরে বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিএসএফ রাজি হয়নি। উল্টো বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন ওড়ানো, সীমান্তে ভারী অস্ত্র তাক করিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।
তবে বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে পুশ ইনের চেষ্টার ঘটনায় উত্তেজনার কথা স্বীকার করা হলেও গুলির কথা অস্বীকার করেছে। জামালপুর ৩৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) হাসানুর রহমান বলেন, পতাকা বৈঠকের কথা থাকলেও সেটি হয়নি। আটক ১৪ জনকে বড়াইবাড়ী ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাঁরা মূলত কোন দেশের নাগরিক সেটা যাচাই–বাছাই করে পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম–৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ২০০১ সালে ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী যুদ্ধে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএসএফ জোর করে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে। আমরা এলাকাবাসী ও বিজিবি বাধা দিতে গেলে বিএসএফ আমাদের ভয় দেখাতে রাবার বুলেট ছোড়ে। এ ছাড়া তারা ভারত ও বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন উড়িয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে। ওই সময়ে ভারতের সীমান্তে বেশ কিছু ভারী যানবাহন দেখা যায়। কিন্তু বিজিবি কেন এটি অস্বীকার করছে, আমার জানা নেই। বর্তমানে পুশ ইনের শিকার ওই ১৪ জন বড়াইবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পে রয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৪ ভারতীয় নাগরিকের হাতে বাংলাদেশি ২০০ করে টাকা ও পানির বোতল দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আমাকে টাকা দেখিয়েছেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এসএফ প শ ইন ১৪ জন
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাকিমপুর সীমান্ত থেকে আটক ১৫ বাংলাদেশিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাতক্ষীরার তলুইগাছা সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি
অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তথ্য সহায়তার আহ্বান বিজিবির
ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিদের মধ্যে আটজন নারী, দুইজন পুরুষ ও পাঁচজন শিশু। তারা সাতক্ষীরা সদর, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বাসিন্দা। তাদের রাতে সাতক্ষীরা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার হাকিমপুর সীমান্ত পার হওয়ার সময় বাংলাদেশি নাগরিকরা বিএসএফের কাছে আটক হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালী গ্রামের মো. শাহীন সানা, তার স্ত্রী নিলুফা ও কন্যা শাহিনা সুলতানা, একই উপজেলার নওয়াবেকি গ্রামের মিস সুরাইয়া ইয়াসমিন, মোছা. রাবিয়া বেগম, বড়কুপট গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, লিপিকা খাতুন, নাজমা খাতুন, জিম তরফদার, বয়ারসিং গ্রামের মোছা. ফারহানা আক্তার ও তার ছেলে ফারহান ঢালী, উত্তর আটুলিয়া গ্রামের সেমিনা খাতুন, আশাশুনি উপজেলার হিজলিয়া গ্রামের রাবিয়া খাতুন ও রিয়াদ হাসান এবং সদর উপজেলার পায়রাডাঙ্গা গ্রামের ফুলমতি খাতুন।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামিনুল হক বলেন, “ভারতের হাকিমপুর সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকরা বিএসএফের হাতে আটক হন। পরবর্তীতে বিএসএফের আমুদিয়া কোম্পানি কমান্ডার বিকাশ কুমার সাতক্ষীরার তলুইগাছা কোম্পানি কমান্ডার আবুল কাশেমের নিকট পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এসব বাংলাদেশিদের হন্তান্তর করেন।”
তিনি আরো বলেন, “বিজিবি ফেরত আনা নারী-পুরুষ ও শিশুদের সাতক্ষীরা থানায় হন্তান্তর করেছে। পরিচয় যাচাই শেষে তাদের পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হবে।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ