সাগর উত্তাল, চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ
Published: 29th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চাকরি শেষ করে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘরে ফেরেন। চুলা জ্বালাতে গিয়ে দেখেন গ্যাস নেই। রাত ১০টায় তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। হঠাৎ গ্যাস চলে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন। রান্না হয়নি।
শুধু জামালখান নয়, নগরের অনেক এলাকায় রাত ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও গ্যাস ছিল না। মূলত নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল হয়ে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালে কারিগরি ত্রুটির ফলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ ছিল। সামিট এলএনজি টার্মিনালে ওই ত্রুটি হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রাত ৮টায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও এখনো অনেক এলাকায় চুলা জ্বলছে না। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতেও গ্যাসের চাপ কমে গেছে।
গ্রাহক ও কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, নগরের লালখান বাজার, জামালখান, হালিশহর, চেরাগীপাহাড়, আন্দরকিল্লা এলাকায় এখনো গ্যাস নেই। এ ছাড়া নগরের অন্যান্য এলাকায় চাপ একেবারে কম।
গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমেটেডের মহাব্যবস্থাপক মো.
আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। একটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। অন্যটি সামিট এলএনজি টার্মিনাল। এই দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দিনে প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়। টার্মিনাল থেকে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।
গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়ে কোম্পাানির উপমহাব্যবস্থাপক শফিউদ্দিন মো. ফরহাদ ওমর প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলের সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকের তুলনায় ৪-৫ ফুট উচ্চতার ঢেউ টার্মিনালে আছড়ে পড়ছে। এ কারণে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে যেকোনো সময় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হতে পারে।
শফিউদ্দিন মো. ফরহাদ ওমর বলেন, সন্ধ্যায় সামিট এলএনজি টার্মিনালে হঠাৎ কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ে। এ কারণে সরবরাহ একেবারে শূন্য হয়ে যায়। পরে রাত আটটার দিকে ত্রুটি সারিয়ে সরবারহ শুরু হয়। তবে পরিমাণে কম হলেও ধীরে ধীরে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় জানিয়েছে, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। আগামীকাল ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ ব য় গ য স সরবর হ স ম ট এলএনজ এল ক য় নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪