আফ্রিকাকে আমি সবসময় ধারণ করেছি বুকের ভিতরে
Published: 30th, May 2025 GMT
কেনিয়ার ঔপন্যাসিক-প্রাবন্ধিক-নাট্যকার নগুগি থিয়োঙ্গো ছিলেন তার বাবার তৃতীয় স্ত্রীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। জন্ম ব্রিটিশ শাসিত কেনিয়ার কিয়াম্বু জেলার কামিরীথু গ্রামে। কেনিয়ায় ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে ১৯৬৩ সালে। বাবা থিয়োঙ্গো ওয়া নডুকু ছিলেন কৃষক, যিনি ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ ইম্পিরিয়াল এ্যাক্ট চালু হবার পর মেষপালক হতে বাধ্য হয়েছিলেন।
১৯৬৩ সালে উগান্ডার কাম্পালার মাকিরিরি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে বিএ পাস করার পর নগুগি স্বল্প সময়ের জন্য নাইরোবিতে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। তার আগে ১৯৬১ সালে তিনি বিয়ে করেন। পরের বছর তার নাটক The Black Hermit কাম্পালায় মঞ্চস্থ হয়। এর দু’বছর পর তিনি ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
ঔপন্যাসিক হিসেবে নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোর অভিষেক হয় ১৯৬৪ সালে Weep Not, Child উপন্যাসের মাধ্যমে। ইংল্যান্ডে প্রকাশিত কোনো পূর্ব-আফ্রিকানের লেখা এটাই প্রথম উপন্যাস। পরের বছর তিনি লেখেন The River Between। উপন্যাসের কাহিনী ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান ও অখ্রিষ্টান দুই তরুণ-তরুণীর বেদনাদগ্ধ প্রেম। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয় A Grain of Wheat.
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নগুগিকে নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদে পুনরায় যোগদানে বাধা দেওয়া হয়। তার পরিবারকে অনবরত প্রশাসনিক হেনস্তার মুখে পড়তে হয়। ১৯৭৮ সালে তার Petals of Blood প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটিতে তৎকালীন রাজনীতির নগ্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দুই বছর পর গিকুয়ু ভাষায় তার প্রথম আধুনিক উপন্যাস Caitanni Muthara-Ini (ক্রশে বিদ্ধ শয়তান) প্রকাশিত হয়। ১৯৮২ সালে তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে লন্ডনে চলে যান। ১৯৯২ সালে যোগ দেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে। ২০০৪ সালের মে মাসে সেইন্ট জন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল আলেক্সান্ডার পোজো নগুগির এই সাক্ষাৎকারটি নেন।
আফ্রিকান সাহিত্যের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, কেনিয়ান লেখক ও সমাজ-সমালোচক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো গত ২৮ মে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার বেডফোর্ডে মৃত্যুবরণ করেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন শরীফ আতিক-উজ-জামান।
প্রশ্ন: আপনার রচনার দিকে চোখ ফেরালে দেখা যায় যে, সেগুলোর বেশ বড় একটা অংশ শুধু শিল্পকে তুলে ধরছে না বরং সাহিত্যের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিকাশ ও অগ্রগতির বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসছে। অন্যভাবে বললে, একজন শিল্পী ও সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রতিটি উপন্যাসে আপনি এই দুইয়ের অবিচ্ছেদ্য প্রকৃতির স্পষ্ট রূপরেখা আরো উন্নতভাবে প্রকাশ করেছেন। এ সম্পর্কে আরো কিছু বলবেন কী?
উত্তর: সমস্ত শিল্পীদের মতো, আমি মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক ও মানবীয় গুণাবলীর ব্যাপারে আগ্রহী। এই বিষয়টিই আমি আমার রচনাতে তুলে ধরতে চেয়েছি। শূন্যের মাঝে মানুষের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না। তা গড়ে ওঠে পরিবেশ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও চেতনা সূত্রে। সমাজের এই বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো অবিচ্ছেদ্য। তারা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তার সবচেয়ে একান্ত সম্পর্কই সব থেকে পার্থিব। একজন শিল্পী হিসেবে আপনি খুঁটিনাটি সবকিছুই নিরীক্ষণ করবেন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সমস্ত আন্তঃসম্পর্ক উন্মোচন করতে, যাতে করে মানুষের আত্মার কুটিরে একটি জানালা উন্মুক্ত করা যায়।
প্রশ্ন: Caitaani Muthara-Ini (ক্রশে বিদ্ধ শয়তান) প্রকাশের ঘটনাটি অবশ্যই আপনার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল, কারণ সেইসময় আপনিই এককভাবে আপনার মাতৃভাষা গিকুয়ূতে লিখতে শুরু করেছেন। শৈল্পিক প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি পরিত্যাগের পর কীভাবে নন্দনতত্ত্ব, সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা পাল্টে গেল?
আমার জীবনে Caitaani Muthara-Ini-এর একটি প্রধান ভূমিকা আছে। কিন্তু গিকুয়ূতে এটাই আমার প্রথম রচনা নয়। এই সম্মান Ngaahika Ndenda (যখন চাইব বিয়ে করবো) নাটককে দিতে হবে। এটা আমি ও নগুগি ওয়া মিরী যৌথভাবে লিখেছিলাম। কিন্তু এর আরো উন্নতি ঘটেছিল লিমুরু ও কামিরীথু সম্প্রদায় ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের গ্রাম্য অংশগ্রহণকারীদের কল্যাণে। বেশ কয়েক বছর ধরে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার পর এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েই আমি গিকুয়ূ ভাষায় লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম। গ্রামে কাজ করতে গিয়েই নিরাপত্তা আইনে বছরখানেক বিনাবিচারে ফাটকবাস করতে হয়েছিল। সেইসময় আমি সাম্রাজ্যবাদের ভাষা ও বর্তমানে একটি উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রকের ভাষা হিসেবে ইংরেজির সাথে আফ্রিকান ভাষার সম্পর্কের বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি এবং শেষশেষ আর কখনো ইংরেজিতে না লেখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। Caitaani Muthara-Ini টয়লেট পেপারে লিখেছিলাম আর ঐ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর ওটাই ছিল প্রথম রচনা।
প্রশ্ন: একটি বিশেষ শ্রেণীর পাঠকের কাছে পৌঁছানোর জন্য ভাষা থেকে আপনি কী দিতে পারেন যা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা করে এসেছেন? একটি বিশাল পাঠককুলের কাছে রচনা বিপণনের উদ্যোগ কীভাবে নেওয়া সম্ভব?
আমরা আরভিংয়ের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক লেখনী ও অনুবাদ কেন্দ্রের বুদ্ধিজীবীরা যাকে বিলুপ্তপ্রায় ভাষা বলি, প্রান্তিক বলি না- তাদের অনুধাবন করতে হবে যে, তাদের প্রধান পাঠক হচ্ছে, যে ভাষায় তারা লিখছেন সেই ভাষা ও সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের স্বরূপ। এটা শুধু যারা নিজেদের মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা করতে পারে এবং সেই ভাষায় যাদের প্রবেশাধিকার আছে তাদের জন্য তা করতে পারে। পরবর্তীতে তা অনুবাদ, স্বয়ং অনুবাদ বা অন্যের দ্বারা অনুবাদের মাধ্যমে সেই ভাষাভাষীর বাইরের পাঠকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। একটি শিল্পসম্মত বই সবসময়ই বিপণনযোগ্য।
প্রশ্ন: যখন আপনি গিকুয়ূতে লেখা শুরু করলেন তখন স্বল্প পাঠকের জন্য ইংরেজি ভাষার বাজার পরিহারের জন্য আপনার পূর্বের পাঠকদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন দেখেছেন কী?
যখন ১৯৮৬ সালে Decolonizing the Mind বইটি প্রকাশের ভিতর দিয়ে ইংরেজি ও আফ্রিকান ভাষাভাষী পাঠকদের মাঝে আমার মোটামুটি একটি অবস্থান তৈরি হচ্ছিল আমি তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সমালোচকের হতাশাজনক ও উগ্র মন্তব্যের শিকার হয়েছিলাম। বইটিতে যে সমস্ত খোলাখুলি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে তাতে অধিক মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমনটি আশা করা যায় না। কিন্তু বইটি যে গুরুত্ব পেয়েছিল তা অধিক পাঠকের মনোযোগ ও বিতর্ককে স্বাগত জানিয়েছে। আমার তাত্ত্বিক বইগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
প্রশ্ন: আমি স্মরণ করতে পারি The River Between-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র ওইয়াকি তীব্র মনঃকষ্টে ভোগে যখন তাকে তার খ্রিষ্টান স্ত্রী ও নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বলা হয়। কিন্তু এটা আপনার রচনার বহুল ব্যবহৃত একটি বিষয়বস্তু যা নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি আপনার অতিগুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। লেখক হিসেবে আপনার কি মনে হয়, এখানে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো কোনো ব্যাপার আছে?
অবশ্যই। লেখক হিসেবে আপনাকে বিষয়টা পরিষ্কার অনুধাবন করতে হলে যথেষ্ট পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রয়োজন আছে। কিন্তু এই বিচ্ছিন্নতার উৎপত্তি হবে তার সম্পৃক্ততা থেকে। পানির স্রোত সম্পর্কে জানতে একজন লেখককে একইসঙ্গে নদীতে সাঁতার কাটতে হয় এবং কুলে বসে দেখতে হয়। আমি আমার সম্প্রদায়ের সৃষ্টি এবং আমি সেই সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কিছু অবদান রাখতে চাই।
প্রশ্ন: বিচ্ছিন্ন বা অবাঞ্ছিত হওয়ার ধারণা কি ইউরোপীয় বা পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে আমরা সেই শিল্পীকে সমাজে তার ভূমিকার নিঃসঙ্গ চিত্রায়ন ও হতাশাবাদী ধারণার মধ্য দিয়ে জানতে পারি?
কোনো কিছুকে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য বিচ্ছিন্ন হওয়া আর হতাশাবাদী ভাবনা এক জিনিস নয়। সেইজন্য বিচ্ছিন্নতার ধারণা পাশ্চাত্য ধারণা নয়। সব সমাজে নবীদের নিয়ে কথা হয় যারা বনজঙ্গল বা পাহাড়-পর্বতে চলে যেতেন ধ্যানের জন্য। তারা সম্প্রদায় বা সমাজের দ্রষ্টা। একজন লেখকও বিশেষ ধরনের দ্রষ্টা। মানুষের নিঃসঙ্গ হওয়ার ধারণা, হবসের মতে, যতটা না জাতিগত তারচেয়ে বেশি বুর্জোয়া চেতনাজাত।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন নন্দনতত্ত্ব, যা শিল্পে মানানসই তা পাঠক-সমাজ প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক? সুন্দরের কি সেই ক্ষমতা আছে যে, কাউকে তার সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন করার বদলে তার সঙ্গে তাকে সম্পৃক্ত করতে পারে?
সামাজিক শূন্যতার মাঝে নান্দনিকতার বিকাশ ঘটে না। জীবনের নান্দনিক চেতনা জীবনেরই সৃষ্টি যা জীবনে প্রতিফলিত হয়। একটি ফুল, যা অতি সুন্দর, তা একটি সমগ্র গাছের সৃষ্টি। কিন্তু একটি ফুল একটি বিশেষ গোত্রের বা একটি গাছের স্বতন্ত্র পরিচিতি গড়ে তোলে। নাজুক ফুলটি সেই গাছটির বংশগতি টিকিয়ে রাখতে নিজের মাঝে বীজ ধারণ করে। গাছটির একটি অতীত সৃষ্টি তার ভবিষ্যৎকেও ধরে রাখছে।
প্রশ্ন: ইরোকুইজ-ইন্ডিয়ানরা কীভাবে বামপন্থার চর্চা করতো সে সম্পর্কে আমি একবার মার্কসের মন্তব্য পড়েছিলাম। মার্কস দেখলেন যে, এটা ইউরোপীয় জীবনযাত্রার সাথে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ কারণ ইরোকুইজরা তাদের জমিজমা ও সম্পদ সমানভাগে ভাগ করে নেয়, যাকে তিনি ‘আদিম বামপন্থা’ বলে চিহ্নিত করেছেন যদিও আমার কাছে এটা তার তত্ত্বের কিছু বৈশিষ্ট্যের জীবন্ত উদাহরণ বলে মনে হয়। আমি বিস্মিত না হয়ে পারি না যে, তৃতীয় বিশ্বের সাথে আমেরিকা-ইউরোপের বিরোধের বড় একটি কারণ ‘সম্প্রদায়’ শব্দটির সঠিক অর্থ অনুধাবনে ব্যর্থতা। এ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
না, আমিও মনে করি না তৃতীয় বিশ্ব ও ইউরো-আমেরিকান সম্পর্ক খুব মধুর। যখন সমাজে শ্রেণীবিভক্তি থাকবে তখন বিশ্বের বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে পার্থক্য থাকবে। একটি বিভক্ত বিশ্বে যেখানে সংখ্যালঘু জাতিগুলো সংখ্যাগুরু জাতিগুলোকে শাসন করছে সেখানে দৃষ্টিভঙ্গির এই পার্থক্য থাকবে। কিন্তু জাতিগুলোর মাঝে, পাশ্চাত্য বা তৃতীয় বিশ্ব যাই হোক না কেন, ধনী ও দরিদ্রের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির মাঝেও পার্থক্য রয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি জোরের সঙ্গে বলেছেন যে, বিলুপ্তপ্রায় গোষ্ঠীগুলো উপনিবেশবাদের চাপিয়ে দেওয়া ভাষায় নয়, তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি পুনরায় আবিষ্কার করবে। আর তা করতে গিয়ে, ইংরেজি বা পশ্চিম থেকে সব কিছুর কেন্দ্র সরিয়ে প্রান্তে নিয়ে যেতে হবে। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কি সংস্কৃতিতে বা আত্ম-পরিচয়ে সংকরায়নের ধারণাকে সমর্থন করে?
এমে সোয়েজার জোরালোভাবে বিনিময়ের কথা বলেছেন যা তাঁর মতে সভ্যতার অক্সিজেন, সংক্ষিপ্ত পরিবর্তন নয় যা সভ্যতার কার্বন-ডাই-অক্সাইড। বিনিময় সমতার উপর ভিত্তি করে হবে। আমি অনেকগুলো নৃত্যকেন্দ্রের একত্রে নৃত্যের ধারণা পছন্দ করি যারা মানবকেন্দ্র থেকে সমদূরত্বে অবস্থান করবে। তারা একটা বৃত্তের মাঝে থাকবে। তারা সেই কেন্দ্র থেকে যেমন গ্রহণ করবে তেমনি প্রদানও করবে। ঠিক একটি বাইসাইকেলের চাকার স্পোকের মতো। মানব-স্পোকও একে অপরের কাছ থেকে গ্রহণ করবে।
প্রশ্ন: আমেরিকায় কারো সাংস্কৃতিক পরিচয় সনাক্তকরণের সমস্যা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী? অনেকের মতে, তারা তাদের নিজস্ব জাতিগত সংস্কৃতি ও আমেরিকার সংস্কৃতির মাঝে এক বিশ্লিষ্ট পরিচয়ে বসবাস করে। আপনি কি মনে করেন এই অবস্থা ভাষা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরো সমস্যা-সংকুল ও জটিল প্রশ্ন তৈরি করবে?
যুক্তরাষ্ট্রে আমি খুবই আকর্ষণীয় এক চিত্র দেখতে পাই। সব ধর্ম, সব সংস্কৃতি, বিশ্বের সব
ভাষা, সব জাতিসত্তার সমাবেশ ঘটেছে এখানে। কিন্তু একটি মিশ্রণের ধারণা দিয়ে এই বিষয়টিকে আড়াল করার একটা প্রবণতা রয়েছে। একটি আমেরিকান পরিচয়ের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ের সহ-অবস্থান দুর্বলতা নয়, বরং একটি বৃহৎ শক্তির উৎস হিসেবেই দেখতে হবে। আর বিশ্বময় আমেরিকার এটম বোমার পরিবর্তে এটাই রফতানি করা উচিৎ।
প্রশ্ন: Homecoming-এ দক্ষিণ আফ্রিকায় একাধারে ছাত্র ও শিক্ষক থাকাকালীন সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে ইংরেজি বিভাগ সম্পর্কে আপনার উদ্বেগ তুলে ধরেছেন। একটি পাঠ্যসূচিকে বহুমুখি করার সবচেয়ে নিরাপদ পথ হলো, একজন অ-পশ্চিমা লেখককে একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে ছুঁড়ে ফেলা। আপনাদের সময় যেমন এখনো তেমনই ঘটছে। আপনার Home-coming এ আপনি এই অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন ‘ইংরেজি পাঠক্রমে আফ্রিকান রচনা পাচার করাকে খানিকটা কৈফিয়ত দানের প্রচেষ্টারূপে’। ইংরেজি বিভাগ কি অনিয়মিত বিধিবহির্ভূত কোর্স ছাড়িয়ে যায় নাকি সেখানে সবসময় আলাদা (তবে সমমানের) বিভাগ বা কোর্স চালু আছে?
ইংরেজির বৈশ্বিক বিস্তৃতি এবং বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে এই ভাষায় সৃষ্ট মেধাবী মুখের কারণে ইংরেজি বিভাগ সেই বহুমুখিনতা দেখাতে পারছে। অবশ্য অন্যান্য ভাষা-বিভাগেরও বৈশ্বিক-মাত্রিকতা প্রদর্শনের জন্য তা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কারসাধিত ইংরেজি বিভাগের কার্যকরী প্রতিরূপ বা মডেল সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে কি?
না, নেই, কিন্তু আমার Moving the Center বইয়ের একটা প্রবন্ধে আমি বিভিন্ন ভাষা ও
সাহিত্য বিভাগের মাধ্যমে তুলনামূলক সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি প্রদানের কথা বলেছি। অনুবাদ এখন আগের চেয়ে বেশি তুলনামূলক রচনা পড়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। যে কোনো বিভাগের জন্য সংকীর্ণচিত্ততা মারাত্মক ক্ষতিকর এবং ইংরেজি বিভাগ যারা নতুন অভিবাসীদের দ্বারা সৃষ্ট মেধাবী মুখগুলোকে তাচ্ছিল্য করে নিজেদের ইংরেজি 'জাতীয়' সাহিত্যের জাদুঘর মনে করে তারা আসলে বন্ধ্যাত্বের দিকে এগুচ্ছে।
প্রশ্ন: সম্প্রতি ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, আপনার একটি নতুন উপন্যাস বের হচ্ছে। এ সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
উপন্যাসটির নাম ‘মুরোগি ওয়া কাগোগো’, গিকুয়ূ ভাষায় রচিত। এখনো বের হয়নি, তবে
আশা করছি এ বছরেই বের হবে। আর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করবে প্যানথিয়ন, সেটাও এবছরের শেষে বা আগামী বছরের প্রথম দিকে বের হবে। এটা একটা বিশাল উপন্যাস, বলাচলে একধরনের বৈশ্বিক উপন্যাস যেখানে বর্তমান বিশ্বের কথা বলা হয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে আমি এই উপন্যাস নিয়ে কাজ করছি। এর ব্যাপ্তিকাল দু'শো বছর।
প্রশ্ন: কেনিয়ার সমসাময়িক উপন্যাস সম্পর্কে আপনার ধারণা কী? গিকুয়ূ ভাষার সাম্প্রতিক কোনো রচনার কথা বলবেন কি যা আপনার উপর প্রভাব ফেলেছে ?
বেশ কয়েকজন লেখক আছেন যারা গিকুয়ূ ভাষায় লিখছেন। নারী লেখক ছিইথিরা মবুথিয়া তাদের একজন যিনি যথেষ্ট অতিপ্রজ। গিতাহি গিতিতি তেমন একজন যিনি ইংরেজির অধ্যাপক কিন্তু গিকুয়ূতে লিখছেন। আরো আছেন মওয়াঙ্গি মুতাহি, গিকুয়ূ ভাষায় লিখিত তার তিনখানা উপন্যাস ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। রয়েছেন কবি এবং বিজ্ঞানী গাতুয়া ওয়া মবুগুয়া। তিনি সম্প্রতি কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সফলতার সাথে শস্যবিজ্ঞান বিভাগের জন্য গিকুয়ূ ভাষায় একটি বৈজ্ঞানিক অভিসন্দর্ভ জমা দিয়েছেন। আরো অনেকে আছেন। এইসব লেখকদের বেশিরভাগই একদা নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গিকুয়ূ ভাষার জার্নাল মুতীরিতে লিখতেন যা এখন আরভিংয়ের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। গত গ্রীষ্মের L. A. Times - এ দেখলাম আপনি কেনিয়া ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন?
এখনই নয়। ২০০৪-এর আগস্টে যাচ্ছি, ১৯৮২ সালে নির্বাসিত হওয়ার পর এটাই আমার
প্রথম কেনিয়া সফর। ২২ বছরের নির্বাসিত জীবনের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু আত্মিক অর্থে আমি কখনো কেনিয়া ছাড়িনি। কেনিয়া ও আফ্রিকাকে আমি সবসময় ধারণ করেছি আমার বুকের ভিতরে। কিন্তু আমি অপেক্ষা করে আছি আমার প্রিয় মাতৃভূমির সাথে সশরীরে মিলিত হওয়ার জন্য।
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রক শ ত প ঠকদ র উপন য স র প রথম আম র ক ন র জন অন ব দ কর ছ ন জ বন র র জন য ক জ কর আপন র অবস থ ব ষয়ট র একট
এছাড়াও পড়ুন:
একজন ব্যক্তি ডিসেম্বরে নির্বাচন চান না: মির্জা আব্বাস
ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন দেশের ‘এক ব্যক্তিই চান না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে পুস্পমাল্য অর্পণের পরে জাপানে প্রধান উপদেষ্টার এক বক্তব্যের জবাবে তিনি এরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি, দেখলাম ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব (প্রধান উপদেষ্টা) জাপানে বসে বিএনপির বদনাম করছেন। একটু লজ্জাও লাগল না দেশের সম্পর্কে বিদেশে বসে বদনাম করতে।
তিনি বললেন, একটি দল নির্বাচন চায়। আর আমরা বলতে চাই, একটি লোক নির্বাচন চায় না। সে হলো ড. মুহাম্মদ ইউনূস উনি নির্বাচন চান না।
প্রসঙ্গত, গতকাল জাপানের টোকিও‘র ইম্পেরিয়াল হোটেলে ৩০তম নিক্কেই ফোরামে ‘ ফিউচার অব এশিয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘আমরা জনগণকে বলেছি, নির্বাচন এই বছরের শেষে ডিসেম্বরে অথবা সর্বোচ্চ জুনে অনুষ্ঠিত হবে। ‘তবে কিছু রাজনীতিবিদ নির্বাচনের জন্য জুন পর্যন্ত অপেক্ষা কেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন কেন নয় সেই প্রশ্নও তুলেছেন। দেশের সব রাজনৈতিক দল নয়, শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
মির্জা আব্বাস জোরালো কন্ঠে বলেন, বিএনপি বরাবরই নির্বাচন চেয়েছে ডিসেম্বরের মধ্যে এবং এই ডিসেম্বরের কথা কিন্তু ইউনূস সাহেব স্বয়ং বলেছেন। আমরা বলিনি। তারই (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস) এ প্রস্তাব। পরবর্তীতে তিনি শিফট করে চলে গেলেন জুন মাসে। জুন মাসে যদি নির্বাচনের কথা বলেন, এই নির্বাচন কখনো বাংলাদেশে হবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি করতে হয় ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে হবে জাতিকে বিভিন্ন কারণেই। আপনারা লক্ষ্য করেছেন সংস্কার করতে করতে বর্তমান সরকার বহু লোককে আমদানি করেছেন সংস্কার করার জন্যে। আমি আজকে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহু সংস্কার করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কিন্তু বিদেশ থেকে কোনো পরামর্শক আনেননি।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আধুনিক বাংলাদেশের জনক হিসেবে অভিহিত করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা এই শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে উনার (জিয়াউর রহমান) জন্য দোয়া কামনা করছি। আল্লাহতালা যেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বেহেস্তে নসিব করেন।
এর আগে মির্জা আব্বাস দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধি প্রাঙ্গণে আসেন। কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পরে কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন তারা এবং এরপর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন।
এসময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বেনজীর আহমেদ টিটো, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজসহ অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।