আগামী সোমবার অন্তর্বর্তী সরকার নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এবারের বাজেট বিভিন্ন কারণে ব্যতিক্রম। বাজেট উপস্থাপন ও পাস হয় জাতীয় সংসদে। এখন সংসদ নেই। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত রাজনৈতিক সরকারের পতন হওয়ায় দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এ কারণে এবারের বাজেট সংসদে উপস্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।
অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাজেট বক্তব্য ঘোষণা করবেন। সংসদ না থাকায় এবার রাষ্ট্রপতির জারি করা অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট পাস হবে।
সংসদ থাকলে বাজেটে বরাদ্দের অংশটি ব্যয় নির্দিষ্টকরণ বিল হিসেবে সংসদে উপস্থাপিত হয়। যখন এই বিল পাস হয় তখন তা আইনে পরিণত হয়। অন্যদিকে সরকারের কর আহরণ সম্পর্কিত প্রস্তাব অর্থবিল আকারে সংসদে উপস্থাপিত হয়, যা সংসদে আলোচনার পর অর্থ আইন হিসেবে পাস হয়।
এবার সংসদ না থাকায় দুই ক্ষেত্রেই অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবের পর মতামত দেওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে। মতামত নেওয়ার পর জুন মাসের শেষ দিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবের প্রয়োজনীয় সংশোধন হবে। এরপর চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি হবে।
বাজেটের বিভিন্ন পরিসংখ্যান সম্পর্কে অনেকের জানার আগ্রহ থাকে। কর নিয়ে আগ্রহ তুলনামূলক বেশি। বাজেটের পদক্ষেপের কারণে কোন পণ্যের দাম বাড়বে কিংবা কোন পণ্যের দাম কমবে– এমন খবর জানার জন্য অপেক্ষায় থাকেন অনেকে। যিনি আয়কর করদাতা তাঁর চিন্তা থাকে আগামীতে তাঁর আরও বেশি কর দিতে হবে কিনা।
বাজেট মূলত একটি অর্থবছরে সরকারের আয় এবং ব্যয়ের পরিকল্পনা। একজন ব্যক্তি যেমন আয় ও ব্যয়ের পরিকল্পনা করেন এবং বিভিন্ন খাত নির্দিষ্ট করেন, রাষ্ট্র ঠিক একইভাবে করে। ব্যক্তির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে ঋণ করেন। সরকারও তাই করে। আবার পরবর্তী সময়ে আয় থেকে ঋণ পরিশোধ করে। সরকারকে আয় করতে হয় জনগণের কাছ থেকে। আবার ব্যয়ও করতে হয় জনগণের কল্যাণে। অন্যদিকে ঋণ করে দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। বিদেশি সরকার ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও সরকার ঋণ করে।
বাজেট কেন দিতে হয়
দেশের সংবিধানেই বাজেট দেওয়ার বিধান রয়েছে। সংবিধানের ৮৭ অনুচ্ছেদে উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার যেসব কাজে অর্থ ব্যয় করবে এবং যেসব উৎস থেকে আয় বা প্রাপ্তি ঘটবে, তার কর্মপরিকল্পনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে বাজেটকে বলা হয়েছে বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে ওই বিবৃতিকে ‘বাজেট’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বাজেটের ক্ষেত্রে বছর বলতে অর্থবছর। অর্থবছরের শুরু ১ জুলাই এবং শেষ পরের বছরের ৩০ জুন। বাজেট প্রণয়নের আইনি কাঠামো দিতে ২০০৯ সালে কার্যকর হয় বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন।
যেভাবে তৈরি হয়
অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট তৈরি করে থাকে। এ জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে। মার্চ মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এবং মতামত নিয়ে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এবং পরের অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলনের প্রথম সংস্করণ
চূড়ান্ত করে। এর আগে জানুয়ারি মাসে প্রতিটি মন্ত্রণালয় পরবর্তী অর্থবছরের বাজেটের জন্য নিজেদের ব্যয় পরিকল্পনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। জুন মাসে নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশের সময় সরকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট দলিল প্রকাশ করে।
মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো
বাংলাদেশে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর মেয়াদ তিন বছর। এতে তিন বছরের ব্যয় পরিকল্পনা থাকে। এর মধ্যে নতুন অর্থবছরের বরাদ্দ থাকে এবং পরবর্তী দুই অর্থবছরের বরাদ্দের প্রক্ষেপণ থাকে। প্রক্ষেপণ পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন হয়। মধ্যমেয়াদে সরকারের কৌশলগত অগ্রাধিকার এবং সে লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি’ নামে একটি বাজেট দলিলে থাকে। এই দলিলে অর্থ মন্ত্রণালয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মধ্যমেয়াদি দৃশ্যকল্প উপস্থাপন করে। রাজস্ব আদায়ের দৃশ্যপট এবং আহরণ কৌশল জানায়। এ ছাড়া সরকারি ব্যয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা তুলে ধরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি সম্পর্কে সরকারের বিবৃতি থাকে।
বাজেট প্রাক্কলন
বাজেট প্রাক্কলন হলো একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন খাত থেকে সম্ভাব্য আয় ও ব্যয়ের প্রাক্কলন। বাজেটের দুটি অংশ থাকে। একটি হলো পরিচালন এবং অন্যটি হলো উন্নয়ন। উন্নয়ন বাজেটের বড় অংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি।
বাংলাদেশের বাজেটে সব সময় ঘাটতি থাকে। কারণ সরকারের যে পরিমাণ আয় হয়, তা দিয়ে ব্যয়ের চাহিদা পূরণ হয় না। এ কারণে ঋণ গ্রহণেরও প্রাক্কলন করে সরকার। উদাহরণস্বরূপ– কোনো একটি অর্থবছরে যদি সরকার ৮ লাখ টাকা ব্যয় এবং ৫ লাখ টাকা আয়ের প্রাক্কলন করে, তাহলে যে ৩ লাখ টাকা ঘাটতি থাকবে, তা সরকার ঋণের মাধ্যমে পূরণের পরিকল্পনা জানায়। সরকার অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি অর্থায়ন থেকে ঘাটতি মেটায়। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত। ব্যাংকবহির্ভূত উৎসের বড় অংশ হলো সঞ্চয়পত্র। সরকারের সঞ্চয়পত্রে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে। সরকার তাদের মুনাফা দেয়।
সম্পূরক বাজেট
কোনো অর্থবছরে যদি কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে নতুন বাজেটের সঙ্গে আগের বাজেটের সম্পূরক ব্যয় বিবৃতি আকারে উপস্থাপন করতে হয়। বরাদ্দের চেয়ে ব্যয় কম হলে তার জন্য সংসদের অনুমোদন লাগে না। বেশি হলে অনুমোদন লাগে। যদিও জুন মাসের প্রথম দিকে যখন বাজেট পেশ করা হয়, তখন অর্থবছর শেষ হয় না। তবে মে মাস পর্যন্ত ব্যয়ের গতিধারা দেখে বোঝা যায়, কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য বরাদ্দের বেশি ব্যয়ের প্রয়োজন হবে। প্রকৃত খরচ এর সঙ্গে হেরফের হতে পারে। পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট পাসের সময় চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস করা হয়।
বাজেট বক্তব্য
অর্থমন্ত্রী কিংবা অর্থ উপদেষ্টা বাজেটের বিষয়ে একটি বক্তব্য দেন, যাকে বাজেট বক্তৃতা বলে। বাজেট বক্তৃতার দুটি অংশ। প্রথম অংশে দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা থাকে। বিগত এক বছরে সরকারের অর্থনৈতিক কর্ম সম্পাদনের বিবরণ, সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচির বর্ণনা থাকে। দ্বিতীয় অংশে থাকে কর-সংক্রান্ত পদক্ষেপ; যা অর্থবিল আকারে উপস্থাপিত হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র ক কলন বর দ দ র সরক র র উপস থ প উপদ ষ ট পরবর ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
৯ অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ কারণে সব সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকাসহ নয়টি অঞ্চলে সন্ধ্যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা থেকে দুপুর একটা এবং সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় বেলা ১টার মধ্যে দেশের ছয় অঞ্চলে ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এসব অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে দুই নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া ও বিদ্যুৎ চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে।
অভ্যন্তরীণ নৌপথের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ: বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশাল নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসাথে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিআইডব্লিউটিএ জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে লঞ্চ চলাচল পুনরায় শুরু হবে। বৃহস্পতিবার সকালে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সকাল থেকে বরিশাল নদী বন্দরে একটিও লঞ্চ ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দমকা বাতাস, বৃষ্টি এবং নদী কিছুটা উত্তাল থাকায় বরিশাল নৌবন্দরকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। তবে এ সময়, ফেরি চলাচল স্বাভাবিক আছে।
বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত: বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় সাগর ও নদী উত্তাল রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার আপডেটে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। আর এর প্রভাবেই এ বৃষ্টি থাকতে পারে সারাদিন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি আজ থাকতে পারে সারাদিন। আগামীকালও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের চার বিভাগেই বর্ষণের সতর্কবার্তা ইতিমধ্যেই দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। ভারী বৃষ্টির প্রভাবে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের চার বিভাগের নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আগামী শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে আসতে পারে; বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি হতে পারে।