Samakal:
2025-07-29@20:15:00 GMT

কর ব্যবস্থার অতীত-বর্তমান

Published: 30th, May 2025 GMT

কর ব্যবস্থার অতীত-বর্তমান

‘আপনি কি সরকারকে কর দেন’– এমন প্রশ্নে অনেক মানুষই হয়তো বলবেন, ‘না’। প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে ৪০ লাখ মানুষও আয়কর রিটার্ন জমা দেন না। যারা রিটার্ন জমা দেন না, স্বভাবতই তারা মনে করেন, তারা সরকারকে কর দেন না। আদতে বিদ্যমান ব্যবস্থায় এমন কেউ নেই যে কর দেন না।
প্রাচীনকাল থেকে যখন রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন হয়, তখন থেকে কর ব্যবস্থার শুরু। সে কর ছিল প্রত্যক্ষ কর। তবে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কর ব্যবস্থা বিস্তৃত হয়েছে। প্রত্যক্ষ করের বাইরে, পরোক্ষ করও আদায় করছে সরকার। অত্যাবশ্যক কিছু পণ্য ছাড়া উৎপাদন, সরবরাহ বা আমদানির বিভিন্ন পর্যায়ে সরকার কর বা শুল্ক আরোপ করে। ফলে আপনি যে পণ্যই কিনুন না কেন, পরোক্ষভাবে সরকারকে কর দিচ্ছেন। আধুনিক কর ব্যবস্থায় শিশু থেকে বৃদ্ধ, হতদরিদ্র ভিক্ষুক থেকে ধনী– কেউই আদতে করজালের বাইরে নেই।

প্রাচীন যুগে কর
মানব সভ্যতার ইতিহাসে কর ধারণা বেশ পুরোনো। এখন থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে প্রাচীন মিসরের ফারাও সম্রাটরা জনগণের কাছ থেকে কর আদায় করতেন। তখন কৃষকের ঘরে ঘরে গিয়ে কর আদায় করতেন সম্রাটের নিযুক্ত কর্মকর্তারা। কখনও গম, কখনও পশু, কখনওবা এক দিনের শ্রম– এ সবই ছিল করের উপাদান।
প্রাচীন মিসরের বাইরে মেসোপটেমিয়া (বর্তমানে ইরাক), ভারতীয় উপমহাদেশ– সবখানেই কর আদায়ের রীতি চালু ছিল কৃষি ও সামরিক খরচ মেটাতে। সে সময়ে কর আদায়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল– রাজপরিবার ও সামরিক বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ, ধর্মীয় বা রাজকীয় স্থাপনার নির্মাণ এবং যুদ্ধের জন্য রসদ সংগ্রহ। করের অর্থ জনগণের স্বার্থে ব্যবহারে সামন্ত শাসকদের কোনো দায় ছিল না।
ভারতের মৌর্য যুগে কৌটিল্য কর আদায়কে রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হিসেবে দেখেছেন। বাংলার ইতিহাসেও পাল, সেন ও পরে মুসলিম শাসকরা কৃষিপণ্যের ওপর কর আদায় করতেন। মোগল আমলে আকবরের দহসালা ব্যবস্থা বাংলায় কার্যকর ছিল, যা ছিল একটি ভূমি জরিপ ও কর নির্ধারণ পদ্ধতি। ব্রিটিশ আমলে করের চরিত্র রূপ নেয় শোষণমূলক কাঠামোয়। ১৭৯৩ সালের স্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারদের হাতে কর আদায়ের ক্ষমতা দেওয়া হয়, যার ফলে কৃষকদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। এই সময় রাজস্ব আদায়ের অর্থ ঔপনিবেশিক সরকারের খরচ এবং মুনাফার জোগান দিত।
সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে কর ব্যবস্থার বদল হয়েছে। সময়ের প্রবাহে কর ব্যবস্থার রূপ ও উদ্দেশ্য বদলেছে। এখন প্রচলিত মুদ্রায় কর দিতে হয়। বলা চলে, করব্যবস্থাই মানব সভ্যতাকে এগিয়ে দিয়েছে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পথে এবং আজকের উন্নত সভ্যতা গড়ার পথে মূল নিয়ামকের ভূমিকা রেখেছে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণের অর্থ জনগণের স্বার্থে ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আছে সব দেশে। 

বর্তমানে কর উন্নয়ন ও পুনর্বণ্টনের নিয়ামক
করের এখন অর্থ জীবনমান উন্নয়ন, নিরাপত্তাসহ জনগণের জন্য ব্যবহার হয়। একদিকে জনপ্রশাসন চালানোর সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আয় পুনর্বণ্টন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের বিশাল অঙ্কের কর চাহিদা রয়েছে। বর্তমান কর আদায়ের উদ্দেশ্য অবকাঠামো উন্নয়ন (যেমন– সড়ক, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল), শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ভর্তুকি ও সামাজিক সুরক্ষা এবং আয়বৈষম্য কমাতে ধনীদের ওপর অধিক কর।

করের নানা ধরন
বাংলাদেশে কর দুই প্রকার– প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয় বা সম্পদের ওপর সরাসরি যে কর আরোপ করা আছে, সেটি প্রত্যক্ষ কর। পণ্য বা সেবা কেনার সময় সরকার যে কর আদায় করে তা পরোক্ষ কর। কোনো ব্যক্তির আয় নির্দিষ্ট আয়সীমা অতিক্রম করলে তাকে কর দিতে হয়। এটিকে ব্যক্তি আয়কর বলা হয়। বর্তমানে করমুক্ত সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এটি অবশ্য স্বাভাবিক পুরুষ করদাতার ক্ষেত্রে। নারী, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বেশি। ব্যক্তি করহার ৫ থেকে ২৫ শতাংশ। স্বাভাবিক ব্যক্তি ভিন্ন কোনো প্রতিষ্ঠান যখন আয়ের ওপর কর দেয়, তা করপোরেট কর হিসেবে পরিচিত। প্রাতিষ্ঠানিক করহার কোম্পানিভেদে ১০ থেকে ৪৫ শতাংশ। কর ফাঁকিসহ নানা কারণে মুনাফা না হলেও সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর লেনদেনের ওপর ন্যূনতম কর আরোপ করেছে। এটিকে বলা হয় টার্নওভ্যার ট্যাক্স। 

এর বাইরে আরেক ধরনের প্রত্যক্ষ কর রয়েছে। এটি হলো উৎসে কর। যেমন– ব্যাংকে আমানত বা সরকারি বন্ড বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে সুদ বা মুনাফা পেলে তার ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখার বিধান করেছে। এর বাইরে কোনো ব্যবসা বা সেবা সরবরাহ করার পর মূল্য নেওয়ার জন্যও সরকারের আদেশে মূল্য পরিশোধকারী প্রতিষ্ঠান উৎসে কর কেটে নেয়। উচ্চ ধনীদের আয়েও সরকার কর আরোপ করেছে। ৪ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে সরকার তার ওপর কর আরোপ করছে। 
সরকার যখন জনগণের কাছ থেকে সরাসরি কর না নিয়ে পরোক্ষ ব্যবস্থায় কর নেয়, তখন সেটিকে পরোক্ষ করা বলা হয়। এই করব্যবস্থা পণ্য বা সেবা গ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কিত। আপনি যখন প্রক্রিয়াজাত বা প্যাকেটজাত বা আমদানি পর্যায়ের কোনো পণ্য কেনেন, তার ওপর নিজের অজান্তেই কর দিচ্ছেন। আবার গ্যাস বা বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছেন, তখনও পরোক্ষ করে আরোপ করে। এটিকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বলে। পণ্য ও সেবার ওপর আরোপিত যে কর ভোক্তা পরোক্ষভাবে বহন করেন সেগুলোর একটি ভ্যাট। এছাড়া আমদানি শুল্ক আকারে বিদেশি পণ্যের ওপর করারোপ হয়। এর বাইরে বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্যের ওপর সরকার বিশেষ কর আরোপ করে থাকে। এটি হলো সম্পূরক শুল্ক। একজন সাধারণ নাগরিকের আয়কর না লাগলেও, পণ্য কিনলে বা মোবাইলে রিচার্জ করলেও তিনি কর দিচ্ছেন, এটিই পরোক্ষ করের বাস্তবতা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আয়কর কর ব যবস থ র ব যবস থ য় র ওপর কর জনগণ র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাথে মিজান খন্দকারের মতবিনিময়

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের নব-নির্বাচিত কমিটির সাথে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ মতবিনিময় সভা করেছেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিজান খন্দকার। সভায় নারায়ণগঞ্জের সার্বিক উন্নয়ন, নাগরিক সমস্যা এবং সমাজের দর্পণ হিসেবে গণমাধ্যমের গঠনমূলক ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

রবিবার (২৭ জুলাই) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সভায় মিজান খন্দকার নব-নির্বাচিত কমিটিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

মতবিনিময়কালে মিজান খন্দকার বলেন, “গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে এবং জনগণের সমস্যা তুলে ধরতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। আমি নিজেও গণমাধ্যমের একজন কর্মী হিসেবে দীর্ঘকাল কাজ করেছি।

ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) থেকে শুরু করে আমেরিকার টাইম টেলিভিশনে কাজ করার সুবাদে আমি দেখেছি একটি শহরকে উন্নত করতে গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনা কতটা জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, “নারায়ণগঞ্জের যানজট, পরিবেশ দূষণ এবং সামাজিক অবক্ষয় রোধে গণমাধ্যমকর্মীরাই পারেন প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কর্তৃপক্ষ ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে। আমি আপনাদের এই পথচলায় একজন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকতে চাই।” এবং আগামীতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবকে আমি আমার পাশে চাই।

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু সাউদ মাসুদ বলেন, “মিজান খন্দকারকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব সবসময়ই একটি নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম। আমরা শহরের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে অঙ্গীকারবদ্ধ।

আমরা আশা করি, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে সবাই একযোগে কাজ করবে এবং আমরা সাংবাদিক হিসেবে সেই চিত্রই তুলে ধরব।”

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি, যুগ্ম সম্পাদক আহসান সাদিক শাওন, কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান জুয়েল, কার্যকরী পরিষদ সদস্য প্রণব কৃষ্ণ রায় এবং ক্লাব সদস্য এম আর কামাল, দিলীপ কুমার মন্ডল ও সাইফুল ইসলাম সায়েম প্রমুখ।

সভার শেষে ব্যক্তিগত আলোচনায় মিজান খন্দকার তার রাজনৈতিক ভাবনার কথা তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, তিনি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কিছু দল পিআর ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে শপথ করেছে: ফখরুল
  • ভুয়া র‍্যাবকে ধাওয়া দিল আসল র‍্যাব, পথে দুই পক্ষকেই পেটাল জনতা
  • মনোনয়ন নিয়ে চিন্তা করবেন না, জনগণের পাশে থাকুন : আজাদ 
  • নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাথে মিজান খন্দকারের মতবিনিময়
  • নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
  • স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় নাগরিকেরা কোথায়
  • লাঙ্গল মার্কার কেউ বিএনপির সদস্য হতে পারবেন না : টিপু 
  • পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি: ফখরুল
  • প্রয়োজন অনুসারে রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তনে সচেতনভাবে এগোচ্ছে বিএনপি: মির্জা ফখরুল
  • কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে তড়িঘড়ি করে ড্যাপ করা হয়েছে, বাতিল করতে হবে: স্থপতি ইনস্টিটিউট