ইলন মাস্ককে বড় সোনার চাবি উপহার দিলেন ট্রাম্প
Published: 31st, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান হিসেবে সদ্য অব্যাহতি নেওয়া ইলন মাস্ককে বড় একটি সোনার চাবি উপহার দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড। শুক্রবার ওভাল অফিসে মাস্কের আনুষ্ঠানিক বিদায় উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ উপহার দেন।
ট্রাম্প একটি কাঠের বাক্সে রাখা বড়সড় সোনার চাবি ইলন মাস্কের হাতে তুলে দেন। ট্রাম্প বলেন, এ ধরনের উপহার তিনি কেবল ‘বিশেষ মানুষদের’ই দেন। দেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদস্বরূপ মাস্ককে এ উপহার দেওয়া হলো বলে জানান ট্রাম্প।
ওভাল অফিসে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটা সরকারি দক্ষতা বিভাগের শেষ নয়, বরং সত্যিকার অর্থে সূচনাপর্ব।’
গত চার মাসে মাস্কের নেতৃত্বাধীন সরকারি দক্ষতা বিভাগ হাজার হাজার চাকরি কমিয়েছে, একাধিক সরকারি সংস্থা বন্ধ করেছে, এমনকি বৈদেশিক সহায়তায়ও কাটছাঁট করেছে। ২৬ মে পর্যন্ত সরকারি দক্ষতা বিভাগ প্রকল্পের মাধ্যমে আনুমানিক ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর মধ্যে মাত্র এক-চতুর্থাংশের নথিপত্র বা প্রমাণ আছে।সম্প্রতি ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এ বিভাগে তাঁর দায়িত্ব ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি খরচ কমানো। বিশেষ সরকারি উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে ছিল।
গত চার মাসে মাস্কের নেতৃত্বাধীন সরকারি দক্ষতা বিভাগ হাজার হাজার চাকরি কমিয়েছে, একাধিক সরকারি সংস্থা বন্ধ করেছে, এমনকি বৈদেশিক সহায়তায়ও কাটছাঁট করেছে। ২৬ মে পর্যন্ত সরকারি দক্ষতা বিভাগ প্রকল্পের মাধ্যমে আনুমানিক ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর মধ্যে মাত্র এক-চতুর্থাংশের নথিপত্র বা প্রমাণ আছে।
সংবাদ সম্মেলনে মাস্ককে প্রশ্ন করা হয়, সরকারি দক্ষতা বিভাগের সঙ্গে তাঁর ভবিষ্যতের ভূমিকা কেমন হবে? জবাবে তিনি বলেন, তিনি আশা করছেন প্রেসিডেন্ট যখনই চাইবেন, তখনই তিনি পরামর্শ দিতে থাকবেন।
‘আমিও তা–ই আশা করি।’ জবাব দেন ট্রাম্প।
মাস্ক বলেন, যদি ট্রাম্প কিছু কাজ করতে চান, তিনি ‘প্রেসিডেন্টের সেবায়’ নিয়োজিত আছেন।
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওভাল অফিসে রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান ইলন মাস্কের প্রশংসা করেন। ট্রাম্পের মতে, মাস্ক যেসব সরকারি সংস্কার কর্মসূচি চালিয়েছেন, তা কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, মাস্ক আসলে ‘সত্যিকার অর্থে বিদায় নিচ্ছেন না’।
মাস্ক যাওয়া-আসার মধ্যে থাকবেন বলে বিশ্বাস তাঁর।
দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত ইলন মাস্ক শুক্রবার ওভাল অফিসে হাজির হয়েছিলেন কালো টি-শার্ট পরে। সেখানে সাদা অক্ষরে লেখা ছিল ‘ডিওজিই ফাদার’। মাস্কের মাথায় ছিল কালো রঙের ক্যাপ। তিনি বলেন, তাঁর ঘোষিত ১ ট্রিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের একটা বড় অংশের ফল পেতে সময় লাগবে।
মাস্ক বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের বন্ধু ও উপদেষ্টা হিসেবে পাশে থাকতে চাই।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের সঙ্গে কোন বিরোধের কারণে প্রশাসন থেকে সরে গেলেন ইলন মাস্ক১৯ ঘণ্টা আগেতবে মাস্কের এই ঘোষণার চেয়ে তাঁর ডান চোখের চারপাশে থাকা ঘন কালো কালশিটে দাগটি নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়।
শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের কারণে ওই কালশিটে দাগ নিয়ে জল্পনা বেড়ে যায়। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালে মাস্ক এত বেশি পরিমাণে কেটামিন নামের মাদক ব্যবহার করেছিলেন যে তাঁর মূত্রাশয়ে সমস্যা দেখা দেয়।
তবে স্পেসএক্স ও টেসলা প্রধান দাবি করেছেন, তাঁরই ছোট ছেলের কারণেই ওই কালশিটে দাগ হয়েছে।
৫৩ বছর বয়সী মাস্ক বলেন, ‘ছোট্ট এক্সের সঙ্গে আমি শুধু মজা করছিলাম। বলেছিলাম, “চলো, আমার মুখে একটা ঘুষি মারো।” আর সে মারলও। তখন বুঝলাম, পাঁচ বছরের একটা বাচ্চার ঘুষিও আসলে…’ বলেই থেমে যান মাস্ক।
তবে মাদক সেবনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মাস্ক তা এড়িয়ে যান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক উপহ র দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি