সিলেটে তলিয়ে গেছে জাফলংসহ ৩ পর্যটনকেন্দ্র, বাড়ছে নদ-নদীর পানি
Published: 31st, May 2025 GMT
সিলেটে শঙ্কা বাড়িয়েছে উজানের বৃষ্টিপাত। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে সিলেটেও হয়েছে বৃষ্টি। ফলে তলিয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পর্যটনকেন্দ্র। পাহাড়ি ঢল নামছে সাদাপাথর, জাফলং ও বিছানাকান্দি পর্যটনকেন্দ্রের সীমন্ত নদী দিয়ে। এ কারণে তিন পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
শনিবার (৩১ মে) দিনভর বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কন্ট্রোলরুম খুলেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সিলেটের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হয়েছে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখার সময় বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।
আরো পড়ুন:
ময়মনসিংহে ধসে পড়েছে গহুর মোল্লার ব্রিজ, যোগাযোগ বন্ধ
রাঙামাটিতে টানা বর্ষণে বেড়েছে পাহাড় ধসের ঝুঁকি, ফাঁকা আশ্রয়কেন্দ্র
এর আগে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় সিলেটে।
শনিবার দুপুরে নগরীর এয়ারপোর্ট রোড, রিকাবিবাজার, আম্বরখানা, ইলেক্ট্রিকসাপ্লাই, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল সড়ক, বাগবাড়ী, উত্তর বাগবাড়ী এলাকা, মিরাবাজার, সুরমাতীরের মহাজনপট্টি, কালিঘাট, কাষ্টঘর, উপশহর-সুবহানীঘাট সংলগ্ন এলাকা, বিমানবন্দর, চৌকীদেখী, শাহপরাণ, কদমতলী ও সংলগ্ন এলাকা, কাজিরবাজার, তালতলা, জামতলা, মাছিমপুর ইত্যাদি এলাকার রাস্তাাঘাটগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছিল নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার চৌহাট্টা এলাকাও। বৃষ্টি কিছুটা কমলে জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে পানি নেমে গেলেও অন্য এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
বৃষ্টিতে সিলেট শহরে জলাবব্ধতা সৃষ্টি হয়
সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলে দ্রুত পানি বাড়ছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র জাফলং ও বিছনাকান্দি এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব স্থানে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, “উপজেলার গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের নিচু অংশের অংশবিশেষ প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কিছু কিছু এলাকায় পানি বাড়ছে। ঢলের এই সময় পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বলব, পর্যটকদের পরিস্থিতির খোঁজ নিয়ে পর্যটনকেন্দ্রে যেতে।”
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার বলেন, “উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো কারো আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।”
তিনি বলেন, “উজানে বৃষ্টি হচ্ছে, সাদাপাথর দিয়ে ঢল নামাটা স্বাভাবিত। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
অন্যদিকে সিলেটে ভারী বর্ষণের ফলে সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় তদারকি এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য এই কন্ট্রোল রুম সিলেট সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায়, কনফারেন্স রুমের কক্ষ নম্বর ২০৫ -এ চালু করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর (মোবাইল: ০১৭১১৯০৬৬৪৭)।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, “শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটাই সতর্কবার্তা। ভারতে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢল সীমান্তের নদ-নদী দিয়ে সিলেটে আসে। ফলে নদ নদীর পানি বাড়ছে। সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদের পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে সিলেটে।”
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, “আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। পর্যটনকেন্দ্রগুলোর দিকে নজর রাখছি।”
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিদর্শনে গেছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক। আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ নদ নদ র প ন গ য় ইনঘ ট পর স থ ত উপজ ল র ট উপজ ল এল ক য় ন এল ক
এছাড়াও পড়ুন:
পানি বাড়ছে সিলেটের নদী ও হাওরে, ভেসে গেছে পর্যটন কেন্দ্রের স্থাপনা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের কারণে অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট অঞ্চলে বাড়ছে নদী ও হাওরের পানি। গত দুইদিন ধরে অব্যাহত বৃষ্টির পর আগামী তিনদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ অবস্থায় সিলেটে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ধরে সিলেটের সবকটি নদী ও হাওরাঞ্চলে পানি বাড়ছে।
এদিকে ধলাই নদীর পানিবৃদ্ধির কারণে কোম্পনাীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর এলাকা ভেসে গেছে। শুক্রবার দেখা গেছে, সেখানকার অস্থায়ী স্থাপনা সরানোর চেষ্টা করছেন শ্রমিকরা। একইভাবে ডাউকির পানি বৃদ্ধির কারণে জাফলং পর্যটনকেন্দ্রও ভেসে গেছে।
আহবাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৮৭.৪ মিলিটার ও শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২৮.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ছাড়াও ধলাই, সারি, গোয়াইন, পিয়াইনসহ অন্যান্য নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যেক নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে দুইদিনের মধ্যে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রত্যেকটি পয়েন্টে ২০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানান, বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পানি বাড়ছে। সারি, গোয়াইন ও ধলাই নদীর পানি বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান শুক্রবার সমকালকে জানান, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।