৫৫ বছরের অপেক্ষার অবসান, পিএসজি চ্যাম্পিয়ন
Published: 1st, June 2025 GMT
ইউরোপিয়ান ফুটবলের রাজসিংহাসনে আজ উঠল এক নতুন নাম। শতাব্দীর স্বপ্ন, অসংখ্য রাতের অপেক্ষা আর ভাঙা-গড়ার গল্প পেরিয়ে অবশেষে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) হাতে উঠল ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক, চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। যেখানে পরিসংখ্যান নয়, লেখা হলো জীবন্ত ইতিহাস। আর সেই মহেন্দ্রক্ষণ হলো জার্মানির হৃদয়ে, মিউনিখের ঐতিহাসিক অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায়।
ঠিক ৩০ বছর আগে এই শহরে ফরাসি ক্লাব মার্শেই ছুঁয়েছিল শ্রেষ্ঠত্বের চূড়া। এবার আরও জ্বলন্ত দাপট নিয়ে পিএসজি করল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। শনিবার (৩১ মে) দিবাগত রাতে প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলের একপেশে ব্যবধানে হারিয়ে শুধু ট্রফিই নয়, জিতে নিল ট্রেবল জয়ের দুর্লভ সম্মান। যেন ফুটবল দেবতা নিজেই লিখেছেন এই গল্প; গৌরবের, প্রতিশোধের আর পূর্ণতার।
বছরের পর বছর তারকা দিয়ে গড়া স্কোয়াড গড়েও যেটা অধরা ছিল, এবার পিএসজি তা ছুঁলো এক ছন্দময় দলের কাব্যে। গ্যালাকটিকো নয়, বরং পরিকল্পনা আর পারফরম্যান্সে ভরা একটি গাঁথা। মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে যুগ পেরিয়ে এবার উঠে এসেছেন ডেম্বেলে, ভিতিনহা, দুয়ে, হাকিমি, কাভারাত্সখেলিয়া আর বারকোলা। ফুটবলের ক্যানভাসে এদের রঙ যেন ছিল নতুন কোনো সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি।
ম্যাচ শুরুতেই যেন আগুন ঝরাল প্যারিসিয়ানরা। ১২ মিনিটেই ভিতিনহার নান্দনিক পাসে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে দুয়ে উপহার দিলেন নিখুঁত এক পাস। হাকিমি তখন ঠিক যেন নিঃশব্দে ছুরির মতো বল ঢুকিয়ে দিলেন নিজের সাবেক ক্লাবের জালে।
এর ঠিক আট মিনিট পর গল্পের দ্বিতীয় অধ্যায়। এবার নিজেই গোলদাতা দুয়ে। ডেম্বেলের সঙ্গে বোঝাপড়ায় সাজানো আক্রমণটি শেষ হলো একটি ঠাণ্ডা মাথার শটে। বল ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বিপদজনকভাবে বাঁক নিয়ে ঢুকে পড়ল জালে। ইন্টার তখন যেন হাওয়ার ঘূর্ণিতে দিশেহারা।
পুরো ম্যাচে ইন্টার মিলান যেন ছিল ছায়া হয়ে বেঁচে থাকা এক সময়ের রাজা। বল দখল, মার্কিং, রক্ষণ—সব জায়গাতেই তারা ছিল নড়বড়ে।
বিরতির পরও ছন্দ পাল্টায়নি। ৬৩ মিনিটে ডেম্বেলের ব্যাকহিল পাসে ভিতিনহার শিল্পসুষমা মেশানো অ্যাসিস্টে আসে তৃতীয় গোল। গোলরক্ষক সোমার চেষ্টা করেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি নিয়তির সামনে।
৭৩ মিনিটে আবারও দেখা মেলে কাভারাত্সখেলিয়ার ঝলক। ডেম্বেলের পাস থেকে সহজ অথচ মারকাটারি এক ফিনিশ; যেন শিল্প ও নিখুঁত ব্যবচ্ছেদের একসাথে উদযাপন।
শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তেও থেমে থাকেনি পিএসজি। ৮৬ মিনিটে সেনি মায়ুলা পায় সুযোগ। বারকোলার নিখুঁত পাসে ইতিহাসের শেষ ছোঁয়াটা লাগিয়ে দিলেন তিনিও। তাতে ৫-০ ব্যবধানে নিশ্চিত হয় পিএসজির জয়। যা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে সবচেয়ে বড় জয়। এ যেন শুধু স্কোরলাইন নয়, ফুটবল নিয়তির প্রতিচ্ছবি।
এই জয় শুধু একটি ট্রফির নয়, এটি ৫৫ বছরের অপেক্ষার চূড়ান্ত পুরস্কার। বহু হাহাকারের, ব্যর্থতা আর নতুন করে স্বপ্ন গড়ার গল্পের চূড়ান্ত পরিণতি। আর ইউরোপীয় ফুটবলের মানচিত্রে আজ একটি নাম চিরস্থায়ী হয়ে লেখা রইল সোনালি হরফে— প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল প এসজ
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটের আকার আরো ছোট হওয়া উচিত ছিল: আমির খসরু
প্রস্তাবিত বাজেট আগের সরকারেরই ধারাবাহিকতা। রাজস্ব আয়ের সঙ্গে বাজেটের আকারের সম্পৃক্ততা রেখে বাজেট করা উচিত ছিল, যা করা হয়নি। সেই সঙ্গে, বাজেটের আকার আরো ছোট হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাজধানীর হোটেল সারিনায় বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা সীমিত, কারণ তাদের একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে তাদের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদের ব্যবধান রয়েছে-এটা মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত-বিগত সরকার বাজেটের আকার বাড়াতে বাড়াতে যে জায়গায় নিয়ে গেছে, সেটার সঙ্গে রাজস্ব আয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয়ত-রাজস্ব আয়ের পুরোটাই পরিচালনা ব্যয়ের মধ্যে ব্যয় হয়ে যাবে। উন্নয়ন বাজেট দেশের ভেতর বা বাইরে থেকে ঋণ নিয়ে চালাতে হচ্ছে।সরকার দেশের বাইরে থেকে ঋণ নিলে এর বোঝা বাড়তে থাকে এবং বছরের পর বছর দেশের মানুষকে এই সুদ দিতে হয়।এই কারণেই কিন্তু দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ভুগতে থাকে। আর দেশের ভেতরের থেকে নিলে আবার বেশি ক্ষতি। কারণ দেশের ব্যাংক থেকে লোন নিলে ইন্টারেস্ট বেড়ে যায়। আবার ব্যক্তি খাতে লোনও কমে যায়। এর ফলে দেশে বিনিয়োগ হয় না, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় না, মানুষের আয় বৃদ্ধি পায় না। প্রাইভেট সেক্টর লোন না পেয়ে অনেকে বিনিয়োগও করতে পারে না।”
আরো পড়ুন:
বিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়া বুধবার
সব মিলিয়ে আমরা জুলাই সনদ করব: প্রধান উপদেষ্টা
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, “আগের বাজেট যেভাবে চলে আসছে, সেখান থেকে সংখ্যার তারতম্য হয়েছে কিন্তু বাজেটের প্রিন্সিপাল একই রয়ে গেছে। এটাও গতানুগতিক বাজেট। বিগত সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বের হতে পারেনি। রাজস্ব আয়ের ওপর ভিত্তি করে বাজেট করা উচিত। তাহলে প্রাইভেট সেক্টরে টাকার সরবরাহ থাকবে, বিনিয়োগ থাকবে, ইন্টারেস্ট কমে আসতো, বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমে আসতো ও সুদের হারও কম পেমেন্ট করতে হতো। কিন্তু আমরা সেই জায়গা থেকে সরে আসতে পারিনি। আমি মনে করি, এই মৌলিক জায়গায় গলদ রয়ে গেছে।”
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বর্তমানে বৈদেশিক ঋণ ৩ দশমিক ৫ বিলিয়নের মতো। আমি মনে করি, বিদেশি ঋণ ও রাজস্ব আয়কে মাথা রাখলে এই বাজেটের আকার আরো ছোট হওয়া উচিত ছিল। গুণগত দিক থেকে এই বাজেটে কোনো পরিবর্তন হয়নি, শুধু সংখ্যায় সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। কাঠামো কিন্তু একই রয়েছে।”
ঢাকা/রায়হান/সাইফ