উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্রদের রাখা বিরাট ভুল হয়েছে: মেজর হাফিজ
Published: 1st, June 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্রদের রাখা ‘বিরাট ভুল’ হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দুয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। তাঁরা চেয়ারে বসার পর তাঁদের আত্মীয়স্বজন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লাইসেন্স করা শুরু করেছেন। এতে দেশের ক্ষতি হলো, তাঁদেরও ক্ষতি হলো। ছাত্রদের উপদেষ্টা করা বিরাট ভুল হয়েছে।
জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় মেজর হাফিজ এ কথা বলেন। আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সভা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেজর (অব.
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ছাত্রদের ভুল পথে পরিচালিত করেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ছাত্রসমাজের এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করার বয়স। এরপর তাঁরা চাইলে সনদ নিয়ে এসে রাজনীতি করতে পারেন। কিন্তু এখন তাঁরা বারবার তদবির করে, মবোক্রেসি করে, সচিবালয়ে হাজির হয়ে অটোপাসের দাবি করেন। এটি সম্মানজনক নয়। এই লড়াকু ছাত্রদের ভুল পথে পরিচালিত করেছে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে বিএনপি আশাহত হয়েছে উল্লেখ করে মেজর হাফিজ বলেন, ‘ইউনূস সাহেব অসত্য কথা বলেছেন। জাপানে গিয়ে তিনি বলেছেন, একটিমাত্র দল বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। অথচ ৪২টি দল তাঁর সামনে গিয়ে বলেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশকে স্বাধীন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধারা যখন বলবেন, অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন, এর জন্য আর কারও সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন বলেন, একটি মহলের স্বাধীন বাংলাদেশ ভালো না লাগায় এখন সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধান ছুড়ে ফেলার কথা বলা হচ্ছে। সংবিধান তো যেকোনো নির্বাচিত সরকার পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু একাত্তরের গন্ধ আছে, মুক্তিযোদ্ধারা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, সে কারণে একাত্তরের কোনো কিছুই এখন আর ভালো লাগে না।’
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যাঁদের অতীতে কোনো ত্যাগ-তিতীক্ষা ছিল না, তাঁরা এখন গণতন্ত্রের সবক দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন মেজর হাফিজ। তাঁর মতে, ইয়াহিয়া, এরশাদ, হাসিনার মতো স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কোনো নজির না থাকলেও অনেকে এখন উপদেষ্টা হয়ে গেছেন। অথচ যাঁরা জীবন বাজিরেখে সংগ্রাম করেছেন, তাঁরা উপদেষ্টা পরিষদে নেই।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে যা কিছু সংস্কার হবে, নির্বাচিত সংসদ করবে। তাই তিনি দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জিয়াউর রহমানের মধ্যে সততা ও দেশপ্রেম ছিল উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিলাসিতা কখনো জিয়াউর রহমানকে স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যাঁরা রাষ্ট্র শাসন করেছেন, তাঁরা তাঁর সততা ও দেশপ্রেম অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস সালাম, কবি আবদুল হাই শিকদার, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উপদ ষ ট ব এনপ র কর ছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব