‘আসুন দুগ্ধশিল্প এবং দুধের প্রভাব উদযাপন করি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ১৩তম বারের মতো বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রবিবার (১ জুন) সকাল ১০টার দিকে বাকৃবি চত্বরে অবস্থিত স্কুলগুলোর ২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে দুধ পান করানো হয়। এরপর পশুপালন অনুষদের সামনে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড মো.
এরপর অনুষদীয় ফটক থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। এরপর বেলা ১২টার দিকে সেখানে দুগ্ধ দিবসের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে বাকৃবিতে নানা আয়োজন
কুমিল্লায় দুধ দিয়ে গোসল করে আ.লীগ নেতার দল ত্যাগ
বাকৃবির ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. একেএম মামুমের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, নেসলে বাংলাদেশের রেগুলেটরি অ্যান্ড সায়েন্টিফিট অ্যাফেয়ার্স প্রধান রেবেকা শারমিন।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) ড. এম এ সামাদ খান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) ড. মো. নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দুগ্ধ দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বাবায়ক ও বাকৃবির ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড মো. হারুন-অর-রশিদ এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দুগ্ধ দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বাকৃবির ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম।
এ সময় বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো আবুল হাশেম বলেন, “আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে দেখা যায়, গাভীর দুধে থাকা ল্যাকটোজ ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্ট যেমন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১২, প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সীদের জন্য প্রতিদিন ২ থেকে ৩ গ্লাস দুধ পান স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং দ্রুত বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত দুধ পান করেন, তাদের সার্বিক স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা দীর্ঘস্থায়ী হয়।”
বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেছেন, “যখন একটি শিশুর জন্ম হয়, এর পরপরই তার প্রথম খাদ্য হল দুধ। এটি একটি সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য, যার মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও মেধার বিকাশ হয়। তাই আমি অভিভাবকদের আহবান জানাবো জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুডের বদলে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের প্রতি শিশুদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।”
তিনি বলেন, “সুস্থ, মেধাবী ও জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গঠনে দুধ পানের বিকল্প নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্কুলগুলোতে টিফিন হিসেবে দুধ সরবরাহ করা হয়। আশা করি বাংলাদেশেও এটি খুব শীঘ্রই চালু হবে। দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভালো জাতের পশু ও পুষ্টিকর খাবারের দিকে মনোনিবেশ করতে গবেষকদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”
আরো পড়ুন: বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে বাকৃবিতে নানা আয়োজন
এর আগে, শনিবার (৩১ মে) শনিবার (৩১ মে) দুপুরে দিবসটি উপলক্ষে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে বিভিন্ন স্কুলের অর্ধশতাধিক স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের করিডোরে নারীদের নিয়ে ডেইরি রেসিপি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
দেশে ডেইরি শিল্পের বিকাশ এবং দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১ জুন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালন করে বাকৃবির ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্যোগে সর্বপ্রথম ২০০১ সালে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশেও এই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ বস উপলক ষ ন কর ন
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।