যশোরে এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতি অস্ত্রোপচারে জন্ম দিলেন ছেলেসন্তান
Published: 1st, June 2025 GMT
ছেলেসন্তানের জন্ম দিয়েছেন এইচআইভি আক্রান্ত যশোরের সেই প্রসূতি নারী। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক আজ রোববার দুপুর ১২টায় অস্ত্রোপচার শেষ করেন। নবজাতকের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে কি না, তা এখনো পরীক্ষা করা হয়নি।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক হোসাইন সাফায়েত প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর দ্বিতীয়বারের মতো সুস্থ একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই নারী। নবজাতকের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে কি না, তা দুই থেকে তিন দিন পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এখন মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারটি সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন চিকিৎসকেরা। নিরাপত্তার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের রোগীদের জন্য নির্ধারিত অস্ত্রোপচার কক্ষটি দুই দিন বন্ধ রাখা হবে। এর আগে ওই নারীর অস্ত্রোপচার নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুলনায় অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টার আছে। ওই সেন্টারের অধীনে যশোরসহ আশপাশের জেলার ১০০ এইচআইভি রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। আজ সন্তান প্রসব করা নারী তাঁদেরই একজন। তিনি যখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন এআরটি সেন্টারের কর্মকর্তারা বিষয়টি যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে জানান। দুই মাস আগে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর অস্ত্রোপচার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এইচআইভি আক্রান্ত নারীর অস্ত্রোপচার করলে হাসপাতালে পরবর্তী তিন দিন অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ নিয়ে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। পরে ওই নারীকে ঢাকার বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রসূতি আর্থিকভাবে দরিদ্র হওয়ায় মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুনএকদিকে মানবতা অন্যদিকে সংক্রমণ ঝুঁকি, এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতির অস্ত্রোপচার নিয়ে দ্বিধা৩০ মে ২০২৫নবজাতক ও তার মাকে হাসপাতালের কেবিনে রাখা হয়েছে। প্রসূতির স্বামী, মা-বাবা ও স্বজনেরা সঙ্গে আছেন। সাধারণ রোগীর মতোই তাঁদের চিকিৎসা চলছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হোসাইন সাফায়েত বলেন, হাসপাতালের চারটি অস্ত্রোপচার কক্ষের একটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সাধারণ অস্ত্রোপচার আজ ও আগামী দুই দিন বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রসূতিসহ জরুরি অস্ত্রোপচার অন্য তিনটি কক্ষে করা হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন প্রসূতি সন্তান প্রসব করেন। এ ছাড়া অন্যান্য অস্ত্রোপচার করা হয় ১৫ থেকে ২০টি। অস্ত্রোপচারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে করতে পারলে বেশি ভালো হতো। কিন্তু প্রসূতি আর্থিকভাবে দরিদ্র। এ জন্য মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা ছাড়া আগেও হাসপাতালে এমন একজন রোগীর অস্ত্রোপচারের ইতিহাস আছে।
আরও পড়ুনযশোর জেনারেল হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত সেই অন্তঃসত্ত্বার অস্ত্রোপচার হয়েছে৭ ঘণ্টা আগেহাসপাতাল ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এইচআইভি আক্রান্ত নারীর প্রথমে বাঘারপাড়ার এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে তাঁদের একটি ছেলেসন্তান হয়। কিন্তু জন্মের কিছুদিন পরে ছেলেটি মারা যায়। কয়েক মাস পরে অজ্ঞাত রোগে তাঁর স্বামীও মারা যায়। ২০১৬ সালে ওই নারীর মনিরামপুরের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে অ্যাপেনডিসাইটিস অস্ত্রোপচারের সময় জানা যায়, তিনি এইচআইভি আক্রান্ত। পরে তাঁকে খুলনায় এআরটি সেন্টারের অধীনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি প্রথমবারের মতো অন্তঃসত্ত্বা হন। এরপর তিনি সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। সেই ছেলেটির বয়স এখন সাড়ে চার বছর। তার শরীরে কোনো এইচআইভি ভাইরাস নেই। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো আজ তিনি আরেকটি সন্তানের জন্ম দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ওই ন র প রস ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।