ঈশ্বরদী ইপিজেডে শত শত শ্রমিকের ডায়রিয়া
Published: 1st, June 2025 GMT
রাতে হঠাৎ পেটেব্যথার পর ডায়রিয়া শুরু হয় সাহিদা সুলতানার। অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। নারী ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন তিনি। কাজ করেন ঈশ্বরদী ইপিজেডের একটি প্রতিষ্ঠানে। তাঁর মতো পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কারখানায় খাবার খেয়ে ও পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। কর্তব্যরত কয়েক নার্সের ভাষ্য, এ রোগ সহজে ভালো হচ্ছে না।
রোগী ও ইপিজেডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরবরাহ লাইনে ত্রুটি ও লিকেজ থাকায় পানি দূষিত হয়ে শ্রমিকরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন। ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জায়গা না পাওয়া অনেক রোগী পাশের লালপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইপিজেডের কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানার শত শত শ্রমিক ডায়রিয়ায় আক্রাত হয়েছেন। রোববার পর্যন্ত উপজেলায় এ রোগীর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ভর্তি রয়েছেন ২০৮ জন। বেপজা হাসপাতালসহ বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র ছাড়াও রোগীদের বড় অংশ পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ডায়রিয়া রোগীর জন্য স্যালাইনসহ চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপকরণের সংকট দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, শয্যা না থাকায় বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগী। তিল ধারণের জায়গা নেই। বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শ্রমিক সহিদুল ইসলাম জানান, তাঁর মতো ইপিজেডের অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আক্রান্ত অধিকাংশই ইপিজেডের নাকানো ইন্টারন্যাশনাল, আইএমবিডি, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও ও রেনেসাঁ বারিন্দ নামে চারটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারী। বৃহস্পতিবার
স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে দুপুরের খাবার খেয়ে শ্রমিকরা অসুস্থ হতে থাকেন। শুক্রবার শতাধিক শ্রমিক আক্রান্ত হন। শনিবারও দেড় শতাধিক শ্রমিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র। নাকানো ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার (এইচআর) মেহেদী হাসান বলেন, তারা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রোগীদের খোঁজখবর রাখছেন।
প্রায় সব রোগী পাতলা পায়খানা ও বমি করছেন বলে জানান আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা.
কিছুক্ষণ পরপরই নতুন রোগী আসায় পরিসংখ্যান ঠিক রাখা যাচ্ছে না জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলী আহসান বলেন, পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। স্যালাইনসহ উপকরণের সংকট রয়েছে। লাইনের পানি দূষিত হয়ে ও খাবারের বিষক্রিয়ায় একসঙ্গে এত মানুষ অসুস্থ হয়েছেন বলে ধারণা তাদের।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের চিকিৎসায় যেন ত্রুটি না হয়, সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানান ইউএনও সুবীর কুমার দাশ। ঈশ্বরদী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, ইপিজেডে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সাপ্লাই পানির নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। বেপজা ও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে রোগীদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও দুই দিনে ৮৯ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ জনই পাশ্ববর্তী ঈশ্বরদী ইপিজেডের কর্মী বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোববার সরেজমিন দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দায় ৫০-৬০ রোগী শুয়ে আছেন। গরমে তাদের ও স্বজনের হাঁসফাঁস অবস্থা।
পুরুষ ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি গত শুক্রবার রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছেন। তাঁর ভাষ্য, ইপিজেডের অ্যাবা গ্রুপে চাকরি করেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে কারখানায় পানি পান করার পর শুরু হয় পেটব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানা। একই কথা জানিয়েছেন চিকিৎসাধীন আকতারুজ্জামান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার পানি বা খাবার খাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা শুরু হয়। রাতে শুরু হয় বমি, পেটব্যথা ও পাতলা পায়খানা।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোগী আসা শুরু হয়। শনিবার পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৩৪ জন। রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত ২২ জন নতুন করে ভর্তি হয়েছেন। ৮৯ রোগীর মধ্যে ৮০ জনই ইপিজেডের কর্মী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যার বিপরীতে ১৩৮ রোগী ভর্তি ছিলেন।
চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আজম সরকারের ভাষ্য, ইপিজেডের কর্মীদের সবাই খাবার ও পানি পান করার পর থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে জীবাণু ছিল। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মুনজুর রহমান বলেন, শয্যার তুলনায় রোগী তিন গুণ ভর্তি আছেন। তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। তারপরও সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স কর মকর ত ল ইসল ম ব র পর র বব র হয় ছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সন্দেহে তরুণ গ্রেপ্তার, বোমা তৈরির উপকরণ জব্দ
শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার বিশাকুড়ি এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে পুলিশ এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে ওই তরুণের বাসা থেকে বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় আফতাব উদ্দিন ওরফে আবির (১৯) নামের ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার তিনি শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পুলিশ জানায়, আফতাব উদ্দিনের জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা রয়েছে ও নাশকতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে বাড়ির সামনের সড়ক থেকে আটক করা হয়। এরপর ঢাকা থেকে রাতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল ডামুড্যায় আসে। তারা আফতাব উদ্দিনের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ওই বাড়ি থেকে বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়।
পরের দিন রোববার ডামুড্যা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন বাদী হয়ে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আফতাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। আদালতের বিচারকের কাছে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাঁকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ওই তরুণ অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত থেকে জঙ্গিবাদে স্বেচ্ছায় উদ্বুদ্ধ (সেলফ মোটিভেটেড) হওয়ার কথা পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সে কিছু একটা করবে, এমন চেষ্টা করছিল। তার আগেই আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। তবে আইএসের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে তার দিকে (আইএস) সে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, এমন বলেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’
ডামুড্যা থানা সূত্র জানায়, ডামুড্যা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিশাকুড়ি এলাকার বাসিন্দা আফতাব উদ্দিন। তিনি ডামুড্যা উপজেলা সদরের পূর্ব ডামুড্যা সরকারি কলেজ থেকে চলতি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তাঁর বাবা আবদুল মালেক হাওলাদার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে আফতাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আফতাব উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে তাঁর বাড়ি তল্লাশি করলে বোমা তৈরির উপকরণ পাওয়া যায়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি কী বলেছেন, তা তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে বলা যাবে না।