রাতে হঠাৎ পেটেব্যথার পর ডায়রিয়া শুরু হয় সাহিদা সুলতানার। অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। নারী ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন তিনি। কাজ করেন ঈশ্বরদী ইপিজেডের একটি প্রতিষ্ঠানে। তাঁর মতো পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কারখানায় খাবার খেয়ে ও পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। কর্তব্যরত কয়েক নার্সের ভাষ্য, এ রোগ সহজে ভালো হচ্ছে না।

রোগী ও ইপিজেডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরবরাহ লাইনে ত্রুটি ও লিকেজ থাকায় পানি দূষিত হয়ে শ্রমিকরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন। ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জায়গা না পাওয়া অনেক রোগী পাশের লালপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইপিজেডের কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানার শত শত শ্রমিক ডায়রিয়ায় আক্রাত হয়েছেন। রোববার পর্যন্ত উপজেলায় এ রোগীর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ভর্তি রয়েছেন ২০৮ জন। বেপজা হাসপাতালসহ বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র ছাড়াও রোগীদের বড় অংশ পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ডায়রিয়া রোগীর জন্য স্যালাইনসহ চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপকরণের সংকট দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, শয্যা না থাকায় বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগী। তিল ধারণের জায়গা নেই। বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শ্রমিক সহিদুল ইসলাম জানান, তাঁর মতো ইপিজেডের অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আক্রান্ত অধিকাংশই ইপিজেডের নাকানো ইন্টারন্যাশনাল, আইএমবিডি, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও ও রেনেসাঁ বারিন্দ নামে চারটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারী। বৃহস্পতিবার 
স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে দুপুরের খাবার খেয়ে শ্রমিকরা অসুস্থ হতে থাকেন। শুক্রবার শতাধিক শ্রমিক আক্রান্ত হন। শনিবারও দেড় শতাধিক শ্রমিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র। নাকানো ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার (এইচআর) মেহেদী হাসান বলেন, তারা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রোগীদের খোঁজখবর রাখছেন।
প্রায় সব রোগী পাতলা পায়খানা ও বমি করছেন বলে জানান আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা.

সাহেদুল ইসলাম শিশির। তিনি বলেন, রোগীর চিকিৎসা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। সবার অবস্থা প্রায় একই। চিকিৎসকরা দূষিত পানি পান, ভেজাল ও খোলা খাদ্য গ্রহণ, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও অতিরিক্ত গরমকে এ জন্য দায়ী করছেন।
কিছুক্ষণ পরপরই নতুন রোগী আসায় পরিসংখ্যান ঠিক রাখা যাচ্ছে না জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলী আহসান বলেন, পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। স্যালাইনসহ উপকরণের সংকট রয়েছে। লাইনের পানি দূষিত হয়ে ও খাবারের বিষক্রিয়ায় একসঙ্গে এত মানুষ অসুস্থ হয়েছেন বলে ধারণা তাদের। 

প্রশাসনের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের চিকিৎসায় যেন ত্রুটি না হয়, সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানান ইউএনও সুবীর কুমার দাশ। ঈশ্বরদী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, ইপিজেডে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সাপ্লাই পানির নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। বেপজা ও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে রোগীদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। 
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও দুই দিনে ৮৯ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ জনই পাশ্ববর্তী ঈশ্বরদী ইপিজেডের কর্মী বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোববার সরেজমিন দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দায় ৫০-৬০ রোগী শুয়ে আছেন। গরমে তাদের ও স্বজনের হাঁসফাঁস অবস্থা। 
পুরুষ ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি গত শুক্রবার রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছেন। তাঁর ভাষ্য, ইপিজেডের অ্যাবা গ্রুপে চাকরি করেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে কারখানায় পানি পান করার পর শুরু হয় পেটব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানা। একই কথা জানিয়েছেন চিকিৎসাধীন আকতারুজ্জামান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার পানি বা খাবার খাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা শুরু হয়। রাতে শুরু হয় বমি, পেটব্যথা ও পাতলা পায়খানা।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোগী আসা শুরু হয়। শনিবার পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৩৪ জন। রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত ২২ জন নতুন করে ভর্তি হয়েছেন। ৮৯ রোগীর মধ্যে ৮০ জনই ইপিজেডের কর্মী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যার বিপরীতে ১৩৮ রোগী ভর্তি ছিলেন। 
চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আজম সরকারের ভাষ্য, ইপিজেডের কর্মীদের সবাই খাবার ও পানি পান করার পর থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে জীবাণু ছিল। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মুনজুর রহমান বলেন, শয্যার তুলনায় রোগী তিন গুণ ভর্তি আছেন। তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। তারপরও সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স কর মকর ত ল ইসল ম ব র পর র বব র হয় ছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেটে বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম

অন্তর্বর্তী সরকার আজ সোমবার আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবে। বাজেট এলে বেশির ভাগ মানুষের মাথায় প্রথম প্রশ্ন আসে– জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না-তো। দুপুর ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তব্য দিবেন। সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে।

বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম

ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফ্রিজ, এসিসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘অতিরিক্ত সুরক্ষা’ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এই অতিরিক্ত সুবিধার কিছুটা লাগাম টানতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে। এতে বাড়তে পারে দামও। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেকের পক্ষে ভবিষ্যতে এসব পণ্য কেনার শখ পূরণ করা কঠিন হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০১৯ সালে দেওয়া প্রজ্ঞাপন অনুসারে এতদিন ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার এবং প্রেশার কুকারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট এবং উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক (আগাম করসহ) অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। তবে অন্তবর্তী সরকারের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব খাতে অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরে তিনটি ধাপে ভ্যাট বসাতে যাচ্ছে সরকার। যেমন, ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই ভ্যাট বলবৎ থাকবে। এর পরের দুই বছর ভ্যাটের এই হার বেড়ে হবে সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তার পরের অর্থবছর ভ্যাট আরও বেড়ে ১০ শতাংশ হবে। এটি কার্যকর থাকবে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত। তবে এ সময়ে পণ্যগুলোর উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক (আগাম করসহ) অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে। 

এ ছাড়া রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এসি ও কম্প্রেসরের ক্ষেত্রে কিছুটা কঠোর হচ্ছে সরকার। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ২০১১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছে। 

২০১৯ সালের প্রজ্ঞানপন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা পেয়ে আসছে এসব পণ্য। সরকার রাজস্ব বাড়াতে এসব খাতের অতিরিক্ত সুরক্ষা সুবিধা প্রত্যাহার করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে এসব পণ্যের উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যমান অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ এসব পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট (আগাম করসহ) দিতে হবে। তবে এসব খাতে বিদ্যমান বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুধু উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে সম্পূরক শুল্ক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। 

মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। তবে আসছে বাজেটে এ ক্ষেত্রে ভ্যাট দুই থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে। 

বর্তমানে আয়রন বা স্টিলের এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। আগামী বাজেটে এটি বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে, যা ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। স্থানীয়ভাবে লিফট উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা। এই সুবিধা আর থাকছে না। আগামী অর্থবছর থেকে উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক আরোপ হবে, যা ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর পরের বছর এই হার বেড়ে হবে সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পরের বছর আরও বেড়ে মূসক হবে ১০ শতাংশ। ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত এটি বহাল রাখার প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। তবে ৩০ সাল পর্যন্ত লিফটের উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম করসহ সমুদয় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্থানীয় শিল্পে সুরক্ষা কমলো
  • স্থানীয় শিল্পে কমলো কর অব্যাহতি সুবিধা
  • লিচু–লেবুর সসে লিচি আই বলের রেসিপি
  • নারীদের সাজসজ্জায় গুনতে হবে বাড়তি টাকা
  • নারীদের সাজসজ্জায় গুনতে হবে বাড়তি খরচ
  • বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম
  • বাজেটে বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম
  • ঈদ রেসিপি : মাংসের কোফতা কারি
  • পরোক্ষ কর সঠিকভাবে আদায় হলে প্রত্যক্ষ করের অবদান বাড়বে