রাজশাহীর আম কোথা থেকে এল, কীভাবে সুখ্যাতি ছড়াল
Published: 2nd, June 2025 GMT
রাজশাহীর বাঘা শাহি মসজিদ নির্মিত হয় ৫০০ বছর আগে। মসজিদের টেরাকোটায় থাকা আমের মোটিফ দেখে বোঝা যায়, রাজশাহীর আমের ঐতিহ্য কত প্রাচীন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতার বাজারে বাঘার ফজলি ও ক্ষীরশাপাতি আম ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। ‘নাটোর ম্যাঙ্গো’ নামে পরিচিত ওই আমের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন কলকাতার মানুষ।
১৮১৩ সালের আগপর্যন্ত রাজশাহী জেলার অন্তর্গত ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ওই অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘আহা তিনি দুপুরের খাবারের পর আয়েশ করে আমটা খেতে পারলেন না!’ এর মাধ্যমে ১২০৫ সালে বখতিয়ার খিলজির আক্রমণের মুখে লক্ষ্মণ সেনের পলায়নের প্রসঙ্গ বোঝানো হয়। এতে হাজার বছর আগেও রাজশাহীর আমের কত কদর ছিল, সেটা প্রতীয়মান হয়।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, রাজশাহীতে আমের প্রচলন করেছিলেন তৎকালীন রাজা ও জমিদারেরা। তাঁরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিখ্যাত আমের চারা এনে এ অঞ্চলে বাগান করেন। এ ছাড়া ছোট-বড় ব্যক্তি উদ্যোগেও জেলায় আমবাগান করার রীতি গড়ে উঠেছিল। ধীরে ধীরে সাধারণ চাষি পর্যায়ে আমবাগানের উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ে।
আমবাগান প্রসারে জমিদারদের ভূমিকারাজশাহী নগরের রায়পাড়ার আমবাগানটি ছিল দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী। দেশের কোথাও এত বড় বাগান ছিল না। একসময় বাগানটির আয়তন ছিল প্রায় ৫০০ বিঘা। এখনো বাগানের অংশবিশেষ টিকে আছে। বাগানটির প্রধান বৈশিষ্ট্য—বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, সিন্ধু ও দক্ষিণ ভারতের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত জাতের আমগাছ। ব্রিটিশ আমল থেকে বাগানটি সমৃদ্ধ ছিল। মুর্শিদাবাদের নবাবদের বাগান থেকে আনা ৫০ জাতের আম ছিল এ বাগানে।
ব্রিটিশ আমলে রাজশাহীর জমিদার ছিলেন পদ্মা কামিনী দেব্যা। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁর দত্তক ছেলে জমিদার জীতেন্দ্রনাথ ভাদুরী হড়গ্রাম, রায়পাড়া, কাঁঠালবাড়িয়া, কাশিয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকা রাজশাহীর বেশ কয়েকজন জোতদার ও ধনী ব্যক্তিকে পত্তনি দেন। তাঁরা এলাকায় বসতবাড়ি করে চারপাশে পছন্দের আমগাছ লাগিয়ে বাগান করেন।
১৯২৮-২৯ সালে রায়পাড়া বাগানের ভেতর দিয়ে রাজশাহী-আমনুরা রেলপথ নির্মাণের সময় শত শত গাছ কাটা পড়ে। এরপর ১৯৯৯-২০০০ সালে নগর বাইপাস (হাইওয়ে) নির্মাণের সময় ঐতিহ্যবাহী কয়েক শ গাছ কাটা পড়ে। নতুন মালিকদের মধ্যে শুরু হয় পুরোনো গাছ কাটার হিড়িক। গড়ে ওঠে নতুন বসতি। এরপরও বাগানের কিছু অংশ এখনো টিকে আছে। ২০১০ সালে বাগানটির আয়তন ছিল সব মিলিয়ে ২৫০ থেকে ২৭৫ বিঘার মধ্যে। বাজারে রায়পাড়া বাগানের আমের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি ছিল। বাগানটির গোপালভোগ, রানীপছন্দ, ক্ষীরশাপাতি, হিমসাগর, বৃন্দাবনী, কোহিতুর, ল্যাংড়ার স্বাদই আলাদা।
ঐতিহ্যবাহী আমবাগানের আম। গত শুক্রবার তোলা রাজশাহীর হড়গ্রাম রায়পাড়ায়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত
অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। পাশাপাশি ভবনের নির্মাণের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে আগের চেয়ে করের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এলাকাভেদে আয়তন অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিলেই টাকার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আজ সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। সেখানে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেন।ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা; ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার অনধিক ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা; ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা; ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০০ টাকা; ওপরের উল্লেখিত এলাকা ব্যতীত সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা; ওপরের উল্লেখিত এলাকা ব্যতীত সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৬০০ টাকা; জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা; জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২৫০ টাকা; দেশের অন্য এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০ টাকা; দেশের অন্য এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১০০ টাকা।
এ ছাড়া একই সুবিধা পেতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে দুটি শর্তও দেওয়া হয়েছে। যদি আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীনে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম হতে উদ্ভূত হয় এবং কোনো বৈধ উৎস হতে উদ্ভূত না হয়, তাহলে এই আইনের এই ধারার আওতায় কালোটাকা সাদা করা যাবে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা এসে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করে। কিন্তু এবারের বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা নতুন করে কর হার বাড়িয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেন।
শেখ হাসিনার সরকারের দেওয়া চলতি বাজেট এক বছরের জন্য নগদ টাকার পাশাপাশি জমি, ফ্ল্যাট-প্লটসহ স্থাবর সম্পদ কেনার মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল। সর্বোচ্চ করহারের চেয়ে কম কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার এই সুবিধার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তীব্র সমালোচনা ছিল। এই সুযোগকে অনৈতিক ও সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় হিসেবে বর্ণনা করেন বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কালোটাকা সাদা করার এই বিধান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আয়কর আইনের তফসিলে রাখা কালোটাকা সাদা করার সুবিধা বহাল রাখা হলো।
প্রায় সব সরকারের আমলেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর এই সুযোগ দেওয়া হলেও অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থসম্পদ বৈধ করায় কখনোই তেমন সাড়া মেলেনি।
এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে অর্থাৎ সাদা হয়েছে। তবে বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ছিল না।
সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও কেউ এই সুযোগ নেননি। এর এক বছর পরেই আবারও কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।