রাজশাহীর বাঘা শাহি মসজিদ নির্মিত হয় ৫০০ বছর আগে। মসজিদের টেরাকোটায় থাকা আমের মোটিফ দেখে বোঝা যায়, রাজশাহীর আমের ঐতিহ্য কত প্রাচীন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতার বাজারে বাঘার ফজলি ও ক্ষীরশাপাতি আম ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। ‘নাটোর ম্যাঙ্গো’ নামে পরিচিত ওই আমের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন কলকাতার মানুষ।

১৮১৩ সালের আগপর্যন্ত রাজশাহী জেলার অন্তর্গত ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ওই অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘আহা তিনি দুপুরের খাবারের পর আয়েশ করে আমটা খেতে পারলেন না!’ এর মাধ্যমে ১২০৫ সালে বখতিয়ার খিলজির আক্রমণের মুখে লক্ষ্মণ সেনের পলায়নের প্রসঙ্গ বোঝানো হয়। এতে হাজার বছর আগেও রাজশাহীর আমের কত কদর ছিল, সেটা প্রতীয়মান হয়।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, রাজশাহীতে আমের প্রচলন করেছিলেন তৎকালীন রাজা ও জমিদারেরা। তাঁরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিখ্যাত আমের চারা এনে এ অঞ্চলে বাগান করেন। এ ছাড়া ছোট-বড় ব্যক্তি উদ্যোগেও জেলায় আমবাগান করার রীতি গড়ে উঠেছিল। ধীরে ধীরে সাধারণ চাষি পর্যায়ে আমবাগানের উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ে।

আমবাগান প্রসারে জমিদারদের ভূমিকা

রাজশাহী নগরের রায়পাড়ার আমবাগানটি ছিল দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী। দেশের কোথাও এত বড় বাগান ছিল না। একসময় বাগানটির আয়তন ছিল প্রায় ৫০০ বিঘা। এখনো বাগানের অংশবিশেষ টিকে আছে। বাগানটির প্রধান বৈশিষ্ট্য—বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, সিন্ধু ও দক্ষিণ ভারতের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত জাতের আমগাছ। ব্রিটিশ আমল থেকে বাগানটি সমৃদ্ধ ছিল। মুর্শিদাবাদের নবাবদের বাগান থেকে আনা ৫০ জাতের আম ছিল এ বাগানে।

ব্রিটিশ আমলে রাজশাহীর জমিদার ছিলেন পদ্মা কামিনী দেব্যা। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁর দত্তক ছেলে জমিদার জীতেন্দ্রনাথ ভাদুরী হড়গ্রাম, রায়পাড়া, কাঁঠালবাড়িয়া, কাশিয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকা রাজশাহীর বেশ কয়েকজন জোতদার ও ধনী ব্যক্তিকে পত্তনি দেন। তাঁরা এলাকায় বসতবাড়ি করে চারপাশে পছন্দের আমগাছ লাগিয়ে বাগান করেন।

১৯২৮-২৯ সালে রায়পাড়া বাগানের ভেতর দিয়ে রাজশাহী-আমনুরা রেলপথ নির্মাণের সময় শত শত গাছ কাটা পড়ে। এরপর ১৯৯৯-২০০০ সালে নগর বাইপাস (হাইওয়ে) নির্মাণের সময় ঐতিহ্যবাহী কয়েক শ গাছ কাটা পড়ে। নতুন মালিকদের মধ্যে শুরু হয় পুরোনো গাছ কাটার হিড়িক। গড়ে ওঠে নতুন বসতি। এরপরও বাগানের কিছু অংশ এখনো টিকে আছে। ২০১০ সালে বাগানটির আয়তন ছিল সব মিলিয়ে ২৫০ থেকে ২৭৫ বিঘার মধ্যে। বাজারে রায়পাড়া বাগানের আমের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি ছিল। বাগানটির গোপালভোগ, রানীপছন্দ, ক্ষীরশাপাতি, হিমসাগর, বৃন্দাবনী, কোহিতুর, ল্যাংড়ার স্বাদই আলাদা।

ঐতিহ্যবাহী আমবাগানের আম। গত শুক্রবার তোলা রাজশাহীর হড়গ্রাম রায়পাড়ায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব গ নট র আমব গ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ফিরিয়ে দাও’ থেকে ‘ধূসর সময়’: সিডনিতে একই মঞ্চে মাইলস ও আর্টসেল

সিডনির বসন্তের সন্ধ্যা। লিভারপুলের হুইটল্যাম লেজার সেন্টারের বাইরে তখন লম্বা লাইন—হাতে পতাকা, কাঁধে ব্যাগ, চোখে প্রত্যাশা। সাউন্ডচেকের শব্দ ভেসে আসছে বাইরে। ভেতরে যেন উন্মুখ এক ‘সাগর’, যেখানে মিশে আছে দুই প্রজন্মের মুখ, কণ্ঠ আর স্মৃতি। শনিবার রাতটি হয়ে উঠেছিল প্রবাসী বাঙালিদের জন্য এক ব্যতিক্রমী উৎসব—বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের দুই যুগের দুই প্রতীক, মাইলস ও আর্টসেল; প্রথমবারের মতো একই মঞ্চে গান করল সিডনিতে।
‘গ্রিনফিল্ড এন্টারটেইনমেন্ট’ আয়োজিত এই ‘মিউজিক ফেস্ট’ ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা যেন উপচে পড়ল সেই রাতে। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পরপরই সব শেষ। অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিম উপশহর লিভারপুলের রাস্তাগুলো ভরে গেল গানের ভক্তে।

আয়োজনের আগে ভিডিও বার্তায় মাইলস জানায় তাদের উচ্ছ্বাস। ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য হামিন আহমেদ বলেন, ‘সিডনি বরাবরই আমাদের কাছে বিশেষ কিছু। সম্ভবত ১৯৯৬ সালে আমরাই প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় পারফর্ম করি। এরপর এ নিয়ে অন্তত পঞ্চমবারের মতো সিডনিতে এলাম। এখানকার দর্শকদের ভালোবাসা সব সময়ই অবিশ্বাস্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতাম এটি স্মরণীয় একটি আয়োজন হতে যাচ্ছে। আমরা চেয়েছি সবাই একসঙ্গে গাইবে, চিৎকার করবে—ভক্তরা সেটাই করেছেন।’ গিটারিস্ট তুজো যোগ করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি শহরে ট্যুর করছি, কিন্তু সিডনির আবহ একেবারেই আলাদা। দর্শকেরা আমাদের রাতটিকে স্মরণীয় করে দিয়েছেন।’

মঞ্চে আর্টসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ