ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৯ সন্তান হারানো ফিলিস্তিনি নারী চিকিৎসক এবার তাঁর স্বামীকেও হারিয়েছেন। গত ২৪ মে গাজার খান ইউনিস এলাকায় আলা আল-নাজ্জারের বাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি ওই সময় নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই হামলায় তাঁর স্বামী হামদি আল-নাজ্জার গুরুতর আহত হয়েছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রোববার তিনি মারা যান। তিনিও চিকিৎসক ছিলেন।

আনাদোলু নিউজ এজেন্সি জানায়, গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, নাজ্জারের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় তাঁর ৯ সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পরপরই তাঁর সাত সন্তানের মরদেহ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বাকি দুজনের মরদেহ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে ছিল। পরে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়। ওই হামলায় নাজ্জারের একটি সন্তান প্রাণে বেঁচে যায়। তবে সে-ও গুরুতর আহত হয়েছে। তার নাম আদম। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, আল-নাজ্জারের পরিবারের বাড়িতে ড্রোন হামলার ঘটনাটি তারা তদন্ত করবে।

নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আহমদ আল-ফারা বলেন, নিজের ৯ সন্তানকে হারানোর পরও নাজ্জার হাসপাতালে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। হাসপাতালে কাজ চালিয়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে স্বামী ও সন্তানের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউসুফ আবু আল-রিশ বলেন, আলা আল-নাজ্জার নিজের সন্তানদের বাড়িতে রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য বের হয়েছিলেন। তিনি সেসব অসুস্থ শিশুর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন, যাদের নাসের হাসপাতাল ছাড়া যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।

রিশ বলেন, তিনি যখন হাসপাতালে পৌঁছান, তখন দেখেন, নাজ্জার শান্তভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর চোখ বলছিল, তিনি নিয়তিকে মেনে নিয়েছেন। নাজ্জার শুধু শান্ত স্বরে আল্লাহকে ডাকছিলেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছিলেন।

৩৮ বছর বয়সী নাজ্জার একজন শিশুবিশেষজ্ঞ। তবে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে অন্য অনেক চিকিৎসকের মতো তিনিও জরুরি বিভাগে কাজ করে যাচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ন জ জ র চ ক ৎসক ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ