অন্তর্বর্তী সরকারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করা হয়নি বলে মনে করে খেলাফত মজলিস। এই বাজেটকে গতানুগতিক আখ্যায়িত করে খেলাফত মজলিস বলেছে, ঋণনির্ভর এ বিশাল ঘাটতি বাজেটে জনগণের অর্থনৈতিক বৈষম্য তেমন কমছে না।

আজ সোমবার খেলাফত মজলিসের আমির আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরের দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে খেলাফত মজলিস বলেছে, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অপচয় ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে রেখে গেছে। বাজেটে এ বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তোলার আরও ব্যবস্থা থাকার দরকার ছিল। বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করতে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ, দুর্নীতির সব পথ বন্ধ করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও বাজেট–ঘাটতি কমানোর ওপর জোর দিলেও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের চেয়ে বাড়িয়ে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে উল্লেখ করে খেলাফত মজলিস বলেছে, এতে জনগণের ওপর করের বোঝা আরও বাড়বে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে ব্যক্তিশ্রেণি করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা করা দরকার ছিল। ই–কমার্স পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করায় অনলাইন কেনাকাটায় খরচ বেড়ে যাবে। বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলেও উন্নয়ন কর্মসূচি হ্রাস পাবে। দীর্ঘমেয়াদি ও মেগা প্রকল্প নতুনভাবে অনুমোদন পাবে না। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

প্রায় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে খেলাফত মজলিস বলেছে, এই ঘাটতি পূরণে দেশি-বিদেশি ঋণ ও সুদের বোঝা আরও বাড়াবে। তবে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির গড় হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ রাখতে পারলে তা হবে বাজেটের বড় চমক।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনা কম

এবারের বাজেট নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন। একদিকে বাজেটের আকার কমানো হয়েছে, অন্যদিকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে, যা স্ববিরোধী মনে হচ্ছে। তার ওপর সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক নয়। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি কীভাবে সম্ভব, তা বোধগম্য হচ্ছে না। সরকার যখন এক লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যাংকঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, বেসরকারি খাত অর্থায়ন পাবে কোথা থেকে। কারণ, গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ থেকে অনেক কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তাতে শেষ পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব আদায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অর্থাৎ সরকারের বর্তমান রাজস্বনীতি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

সাধারণ মানুষ আশা করে বাজেট মূল্যস্ফীতি কমাবে, কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রগতিশীলতা আনার সুযোগও সীমিত। ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব আদায় ব্যাহত হবে, তেমনি মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনাও কম। গত আট মাসে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে দেশে মোট বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে ২৬ লাখ ২০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এক বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। এ ধারা চলতে থাকলে দেশে বেকারত্বের হার আরও বাড়বে। যদি অর্থায়নপ্রক্রিয়া সহজ না হয়, তাহলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করবে। ইতিমধ্যে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

আমরা দেখছি, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ থেকে কমে ১ শতাংশে নেমে এসেছে। এ খাত বহু মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস। এভাবে যদি সব খাত সংকুচিত হতে থাকে, তাহলে চাকরির বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে। নতুন করে আরও অনেক মানুষ বেকার হবে।

ব্যাংক খাতের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। ব্যাংক খাত মেরামতের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও, সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের রাজনীতি ঠিক হচ্ছে এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততক্ষণ অর্থনীতির উন্নতি সম্ভব নয়। রাজনীতি ও অর্থনীতিকে অনেকে আলাদা করে দেখেন; কিন্তু আমার চোখে রাজনীতিই অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিচালিত ছিল। তারা ব্যবসা না করে দালালিতে লিপ্ত ছিল এবং এমন একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তৈরি করেছিল, যারা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের কবজায় নিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার থাকলে এ সর্বনাশ হতো না। তাই আমি মনে করি, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরে না আসা পর্যন্ত অর্থনীতি ঠিক হবে না। এ মুহূর্তে অর্থনীতির স্বার্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করা জরুরি। অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এ দায়বদ্ধতা আসে নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের মাধ্যমে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু: সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংসদ ছাড়া বাজেট ও জবাবদিহির প্রশ্ন
  • দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং
  • মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনা কম
  • অধ্যাপক ইউনূসের মুখ থেকেই জনগণ জানতে চায়
  • জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি গায়ানা, যা বললেন রাষ্ট্রদূত
  • করের বোঝা আরো বাড়বে: খেলাফত মজলিস
  • ‘জনগণ মালিকানা ফেরত পেলে দেশের সমস্যার সমাধান হবে’
  • জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করতে হবে: জাহিদ হোসেন
  • অধিকার ফিরিয়ে না দিলে জনগণ ক্ষমা করবে না: ডা. জাহিদ