ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেছেন, ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু বাড়তি শুল্ক-কর পুনর্বিবেচনা করতে হবে। সোমবার বাজেট প্রস্তাবের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সমকালকে তিনি এ কথা বলেন। 

মীর নাসির হোসেন বলেন, সুতা এবং ম্যানমেড ফাইবারের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া টেক্সটাইল খাতে করপোরেট কর ১৫ শতাংশ ছিল। সেটি উঠিয়ে দিয়ে নতুন বাজেটে ২২ শতাংশ করা হয়েছে। এসব পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কারণ আমাদের শিল্প দাঁড়িয়ে আছে পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের ওপর। এ ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে করছাড় সুবিধা প্রত্যাহারের পাশাপাশি কর বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে আমরা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে উত্তরণে শুল্ক-কর কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এত দিন এলএনজি আমদানি পর্যায়ে ও বিতরণ উভয় ক্ষেত্রে ভ্যাট ছিল। তবে নতুন বাজেটে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট কমানোর ফলে দাম কমিয়ে সমন্বয় করা হলে ভালো। কিন্তু এটা যদি ভর্তুকি কমানোর জন্য এ সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের কোনো উপকারে আসবে না। কারণ সম্প্রতি গ্যাসের দাম ব্যাপক হারে বাড়ানো হয়েছে। 

এ ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, জ্বালানি নিশ্চিতে সরকার বেশ কিছু রূপরেখা দিয়েছে। এর অন্যতম হচ্ছে স্থানীয়ভাবে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে আমদানি-নির্ভরতা কমবে। তবে খরচ কমানোর পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি নিশ্চিতে আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। কারণ জ্বালানি না পাওয়া গেলে শিল্পের চাকা ঘুরবে না, বিনিয়োগও বাড়বে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ ট ২০২৫ ২৬ ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত নেই: বিএনপি

রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এই অভিযোগ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় দলটি।

আমীর খসরু বলেন, দেশে এখন যেহেতু সংসদ বা গণতান্ত্রিক কোনো সরকার নেই, তাই তাঁরা আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য স্থাপনের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন করবে। সরকার চাইলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিতে পারত। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী ও তরুণ প্রতিনিধিরাও অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু সেটি করা হয়নি।

রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত নিলে বাজেট প্রণয়ন একমুখী, অংশগ্রহণহীন ও গতানুগতিক ধারার হতো না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

আমীর খসরু বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ‘ডবল ডিজিট’। তা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করার কথা বলা হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত মনে হয় না। দারিদ্র বৃদ্ধির হারে লাগাম টানা যেত। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২৭ লাখের বেশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সেটা এবারের বাজেটে ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগের সরকারের মতোই অবান্তর ও কাগুজে প্রবৃদ্ধি। খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে। অপর্যাপ্ত, ত্রুটিপূর্ণ, দুর্নীতিগ্রস্ত সামাজিক সুরক্ষা খাতে পেনশন ও কৃষি ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত করে বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষার জন্য সরকারি বরাদ্দ অপর্যাপ্ত থেকে যাচ্ছে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কলেজ ও স্কুলগুলোকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা যেত। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতা এলে শিক্ষার এসব ক্ষেত্রকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা হবে।

অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা সমাধানে বাজেটে সুস্পষ্ট রূপরেখার প্রয়োজন ছিল বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথনকশা উপস্থাপন। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শিল্পকারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার দরকার ছিল। জরুরি ছিল ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি বিভিন্ন খাতে সহায়তার মাধ্যমে আরও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি। বিশাল সুদের হারের সঙ্গে অতিরিক্ত কর ও শুল্ক শিল্পে বড় চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কর্মসংস্থানও কমতে পারে। মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর আর্থিক চাপ বাড়লে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতিও থমকে যেতে পারে।

ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমানো, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো ও ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ কমানোর কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাজেটে নেই বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, এগুলো না থাকায় উদ্যোক্তারা অনিশ্চিত ও প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হবেন।

অনলাইন ব্যবসার ওপর শুল্ক বাড়ানোয় ডিজিটাল উদ্যোক্তারা চাপে পড়বেন বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, এতে তরুণ উদ্যোক্তাদের হতাশা বাড়বে। উদ্ভাবনও নিরুৎসাহিত হবে।

আমীর খসরু বলেন, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নাজুক। খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও করজাল সম্প্রসারণের মতো পদক্ষেপ নিলে রাজস্ব আহরণে নতুন ভিত্তি তৈরি হতো। সরকার ব্যাংক খাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ‘ঋণ করে ঋণ শোধ’ দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কর ফাঁকি প্রদানকারীদের পুরস্কৃত করছে। নিয়মিত করদাতাদের প্রতি এটি অবিচার। এতে করব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ