লাভ হোক লোকসান হোক কর দিতেই হবে, হার আরও বাড়ল
Published: 3rd, June 2025 GMT
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লাভ–লোকসান যা–ই হোক, কর দিতে হবে। সেই করের হার আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
নতুন অর্থবছরের অর্থবিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার ট্যাক্স বা লেনদেন কর হবে ১ শতাংশ, যা এখন শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। লেনদেন করের মানে হলো কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য ও সেবা বিক্রি করে যদি ১০০ টাকা আয় করে, তার ওপর লাভ ও লোকসান–নির্বিশেষে ১ টাকা কর নেবে সরকার।
সাধারণভাবে ১০০ টাকার বিপরীতে ১ টাকাকে কম মনে হতে পারে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও অন্যান্য করের বাইরে সরকার এই ১ শতাংশ অর্থ নেবে আয়কর হিসেবে। বছর শেষে কোম্পানি যদি লোকসানে থাকে, তাহলেও এই কর দিতে হবে। যদিও এবারের বাজেটে আদায় করা কর–পরবর্তী বছরগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।
ধরা যাক, একটি কোম্পানি ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তাহলে তাকে লেনদেন কর দিতে হবে ১ কোটি টাকা; কিন্তু বছর শেষে দেখা গেল পণ্য বিক্রি করে কোম্পানিটি ১০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। তাহলে তার ওপর কোনো করপোরেট কর বা আয়কর প্রযোজ্য হবে না। তবু তার কাছ থেকে সরকার ১ কোটি টাকা নেবে, যেটিকে লেনদেন কর বলা হলেও তা মূলত করপোরেট কর।
এ ধরনের কর বেশি প্রভাব ফেলে লোকসানে থাকা কোম্পানির ওপর। যারা অনেক টাকা মুনাফা করে, তাদের ওপর এটি তেমন একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। কারণ, তাদের লেনদেন করের চেয়ে বছর শেষে আয়করের পরিমাণ বেশি হয়। ফলে তারা লেনদেন কর বাবদ দেওয়া টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা সরকারকে দিতে পারে।
দেশে অনেক বছর ধরেই লেনদেন কর রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানি এটি প্রত্যাহার অথবা কমানোর দাবি করে আসছিল। তাদের ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে অবশ্য এই করহার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে দেড় শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের উৎপাদক ও বিক্রেতা এবং কোমলপানীয় উৎপাদনকারীদের ওপর আগের মতোই ৩ শতাংশ রাখা হয়েছে।
বাড়ানো হয়েছে এর বাইরে থাকা কোম্পানির ক্ষেত্রে। তাদের মোট বিক্রির ওপর ১ শতাংশ কর দিতে হবে। নতুন বাজেটে সাধারণ কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর ধরা হয়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশ (ব্যাংকে লেনদেন বেশি করার শর্তে ২৫ শতাংশ)। এই করপোরেট করের সঙ্গে লেনদেন কর সমন্বয় হয়।
অর্থবিলে বলা হয়েছে, তামাক, টেলিযোগাযোগ ও পানীয় কোম্পানির বাইরে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর প্রথম তিন বছর লেনদেন কর হবে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।
কর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ১ শতাংশ লেনদেন কর লোকসানে থাকা এবং লাভ–লোকসান সমান থাকা কোম্পানিগুলোর জন্য একটি বড় ধাক্কা। এর ফলে কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে তাদের মূলধন থেকে কর পরিশোধ করতে হবে। এ ধরনের স্বেচ্ছাচারী করনীতি কর ফাঁকিকে উৎসাহিত করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কর আইনকানুন মেনে চলা কোম্পানি।
স্নেহাশীষ বড়ুয়া আরও বলেন, ব্যক্তিবিশেষের জন্য এটি একটি বড় আঘাত। সে ক্ষেত্রে করহার শূন্য দশমিক ২৫ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।
করপোরেট কর কী দাঁড়ালঅর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ২০২৫–২৬ করবর্ষে পুঁজিবাজারে অনিবন্ধিত কোম্পানির ক্ষেত্রে সাধারণ করপোরেট কর হবে সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার বেশি এবং বার্ষিক মোট ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে সব লেনদেন ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে করলে ওই কোম্পানি ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে পারবে। ২০২৬–২৭ ও ২০২৭–২৮ করবর্ষেও করপোরেট করের হার সাড়ে ২৭ শতাংশ হবে।
পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিকে ২০২৫–২৬ করবর্ষে সাড়ে ২২ শতাংশ কর দিতে হবে। এই হার ২০ শতাংশ হবে, যদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সীমার বাইরে লেনদেন ব্যাংক–ব্যবস্থার মাধ্যমে করে। ২০২৬–২৭ ও ২০২৭–২৮ করবর্ষে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ করসুবিধা পেতে হলে সব লেনদেন ব্যাংক–ব্যবস্থার মাধ্যমে করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: করপ র ট কর ল নদ ন ব করবর ষ কর দ ত ব যবস সরক র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্টে সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে সব ব্যক্তি করদাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।
গত বছর নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেন।
দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর মাত্র ৪০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেন।
এনবিআর জানায়, এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে চলতি বছর ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ করবর্ষে যেসব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাঁরাও চাইলে অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। অন্যদিকে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এই সময়সীমা ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করদাতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ই-মেইল করলে ই-রিটার্নের নিবন্ধন লিংক পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। কোনো ধরনের কাগজপত্র বা দলিল আপলোড না করেই করদাতারা তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। ই-রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে জমা স্লিপ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আয়কর সনদও প্রিন্ট করে নিতে পারছেন করদাতারা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ই-রিটার্ন জমা সহজ করার জন্য গত বছরের মতো এবারও করদাতাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দিতে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আবার ওয়েবসাইটে ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালেও তার সমাধান পাচ্ছেন করদাতারা। কোনো করদাতা সশরীর নিজ নিজ কর অঞ্চলে গিয়েও ই-রিটার্ন জমা দেওয়াসংক্রান্ত সেবা নিতে পারছেন।