রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের আলোকেই হবে জুলাই সনদ: অধ্যাপক আলী রীয়াজ
Published: 3rd, June 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবই চূড়ান্ত নয়। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব মতামত দিয়েছে, সে আলোকে পরিবর্তিত প্রস্তাব নিয়েই জাতীয় সনদ (জুলাই সনদ) করা হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার ছিল দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার উদ্বোধনী। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী মাসে জুলাই সনদ তৈরির লক্ষ্য রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের।
আজকের বৈঠকে সংবিধানের সত্তর অনুচ্ছেদ, নিম্নকক্ষে নারী আসন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও কার্যপরিধির একটি অংশ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
সংস্কার কার্যক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক যুক্তি সামনাসামনি আলোচনা হলে অনেক ক্ষেত্রে অবস্থানগত পরিবর্তন হতে পারে বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ের স্বল্পতা রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কী কাজ করছে, তা জানতে জনমনে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছি, যাতে মানুষ আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বুঝতে পারে।’
যেসব প্রস্তাবে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো জুলাই সনদে যুক্ত হবে না বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘সব বিষয়ে আমরা একমত হব না। কিছু জায়গায় একমত হব। বাকিটা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। জনগণ কতটা গ্রহণ করবে, সেটা তাদের বিষয়।’
আগামী মাসের মধ্যে জুলাই সনদ তৈরির কাজ সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করেন আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, সংস্কার সুপারিশে আমরা যেন ন্যূনতম ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিচ্ছে ত্রিশটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে রয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণ-অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, আমজনতার দল, ভাসানী অনুসারী পরিষদ/ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোট।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্য মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দিষ্ট দিনের কথা বলেননি: জামায়াত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা দিনের কথা বলেননি।
আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১৯তম দিনের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রফিকুল ইসলাম খান এ কথা বলেন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে, প্রধান উপদেষ্টা এটি বলেননি।’
এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৪টি রাজনৈতিক দলের বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।
আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘গতকালের এ বৈঠকের আগে আরও দুটি বৈঠক হয়েছিল। এর প্রথম বৈঠকে আমি নিজেই ছিলাম। নির্বাচনী সংলাপের জন্য এই বৈঠক হয়নি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মাইলস্টোন স্কুলের ঘটনায় যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার পেছনে যে নানা ষড়যন্ত্র কার্যকর ছিল, এটাকে সামনে রেখে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে মিটিং ডেকেছিলেন। প্রতিটি মিটিংয়ের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, ওখানে কোনো নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি।’
নারী আসনের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘১০০ নারী প্রতিনিধি থাকার বিষয়ে আমরা একমত। তবে এটি হবে ৩০০ আসনের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির বিষয়ে আমরা ঐকমত্য পোষণ করেছি।’
সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিষয়ে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা বলেছি পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি প্রতিস্থাপন করতে হবে। অন্যদিকে ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি উল্লেখিত হবে। এখানে কয়টি দল আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাসের বিষয়টির বিরোধিতা করেছে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাসের বিষয়টি সংবিধানের মূলনীতিতে সংযোজন করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে।’
পুলিশ কমিশনের বিষয়ে জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুলিশ কমিশনের বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করেছি। এ কমিশন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশ যাতে আইনানুগভাবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়, তা নিশ্চিত করা।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. আইয়ুব মিয়া।