চট্টগ্রামে অনলাইন পশুর হাটে ৪ হাজার খামারি
Published: 5th, June 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের পেজে গত ২০ মে দেশি লাল গরু ‘তুফান’-এর ছবি পোস্ট করেছিলেন আরবিএস অ্যাগ্রো ফার্মের কর্ণধার রবিউল হক চৌধুরী। পরদিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত আবুল কালাম আজাদের ফোন পান তিনি। জানান, গরুটি পছন্দ হয়েছে। দরদাম মিলে গেলে কিনে নেবেন। যেমন কথা, তেমন কাজ।
২১ মে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে খামারে হাজির হন আবুল কালাম আজাদ। দরদাম করে ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনে নেন গরুটি। এ ঘটনার বিবরণ দিয়ে আরবিএস অ্যাগ্রো ফার্মের কর্ণধার রবিউল হক চৌধুরী বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার আমেজ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি নিয়মিত কোরবানির পশুর ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করছেন। এতে দারুণ সাড়া মিলেছে। ৬০টির মধ্যে ৩৫টিই বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকেই অনলাইনে পছন্দ করে রাখছেন। পরে খামারে এসে যাচাই করে কিনে নিচ্ছেন।
রবিউল হক চৌধুরী একজন পেশাদার ক্রিকেট আম্পায়ার। ২০১৬ সালে দুবাইয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেই পেশা ছেড়ে ২০১৮ সালে গরুর খামার দেন। শুরুতে ১২টি গরু ছিল। এরপর ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে খামারের পরিধি। এর মধ্যে করোনাকালে তিনি অনলাইনে ৫ কেজি করে মাংস বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। করোনার ঘরবন্দী সময়ে সাড়াও মেলে বেশ।
রবিউল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে অনলাইনে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। এ বছর চট্টগ্রামের লাল গরু (আরসিসি), শাহি ওয়াল, হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন। তাঁর খামারে সবচেয়ে দামি গরু সাড়ে চার লাখ টাকা, আর সর্বনিম্ন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
অনলাইনে দেখে গবাদিপশু কেনাকাটা এখন বেশ জনপ্রিয়। অনেকে হাটের ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই খামার থেকে গরু কিনে রাখছেন। কেনা গরু খামারেই রাখা যায়। অবশ্য খামারে গরুর দামে ভারসাম্য থাকলেও গতবারের চেয়ে কিছুটা বেশিমোহাম্মদ আলমগীর, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, চট্টগ্রামশুধু রবিউল হক চৌধুরী নন, চট্টগ্রাম ক্যাটেল ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশন ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব বলছে, অন্তত ৪ হাজার খামারি ঈদ উপলক্ষে অনলাইনে সক্রিয়। তাঁরা নিয়মিত কোরবানির পশুর ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন। কেউ কেউ দাম উল্লেখ করে লিখছেন, ‘আলোচনা সাপেক্ষে’। ক্রেতারা হাটের ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই পছন্দের গরু কিনছেন। এ বিক্রি চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।
আরও পড়ুনঅনলাইনে চলছে কোরবানির হাট০২ জুন ২০২৫অনলাইনে সক্রিয় থাকার সুফল কেমন, তা বোঝা যাবে সিটি অ্যাগ্রোর কর্ণধার এনামুল হকের বর্ণনায়। এবার ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন জাতের ১৩০টি গরু প্রস্তুত করেছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে ১১০টি গরু বিক্রি হয়েছে। সব কটি গরুর ছবি, ভিডিও পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। এর মধ্যে ‘বাঁধা’ ক্রেতা যেমন গরু নিয়েছেন, ঠিক তেমন অনলাইনে দেখে গরু কিনেছেন অনেকে।
২০২০ সালে খামারে পশু লালন-পালন শুরু করেন এনামুল হক। ফেসবুকে ‘সিটি অ্যাগ্রো’ নামে পেজ খুলে প্রচারণা শুরু করেন। করোনাকালে মূলত ব্যবসা ও পরিচিতি পান। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিক্রি বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে খামারের আকার। এনামুল হক জানান, এবার সবচেয়ে বড় গরু বাহাদুরের দাম উঠেছিল সাত লাখ টাকা। অনলাইনে দেখে এক ক্রেতা সম্প্রতি এটি কিনে নেন। এ ছাড়া ১০টির মতো গরু বিক্রি করেছেন সরাসরি ওজন (লাইভ ওয়েট) পদ্ধতিতে। প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়েছে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা।
চট্টগ্রামের একটি খামারে বিক্রির জন্য রাখা পশু। গতকাল বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প স ট কর কর ছ ন ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের অর্থনীতি মৃত, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন: রাহুল
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক কথাই বলেছেন, ভারতের অর্থনীতি মৃত।
আজ বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে রাহুল এই মন্তব্য করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সেও একই কথা লেখেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই ভারতের অর্থনীতিকে মেরে ফেলেছেন।
গতকাল বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে ট্রাম্প লেখেন, ‘ভারত ও রাশিয়া—দুই দেশের অর্থনীতিই মৃত। দুই দেশের মধ্যে কী বোঝাপড়া হয়েছে, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তারা একই সঙ্গে মৃত অর্থনীতি নিয়ে রসাতলে যেতে পারে। ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য খুবই কম। ওদের শুল্কহার প্রচণ্ড চড়া। পৃথিবীর সর্বোচ্চ। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য হয় না বললেই চলে। অতএব, ও নিয়ে না ভাবলেও চলবে।’
আজ সংসদ ভবন চত্বরে গণমাধ্যম রাহুলকে ট্রাম্পের ওই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ভারতের অর্থনীতি যে মৃত, তা সবাই জানেন। আপনারা জানেন না? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ছাড়া এই সত্য সবার জানা। আমি খুশি যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্যি কথাটা বলেছেন। গোটা পৃথিবী জানে ভারতের অর্থনীতি মৃত। আদানিকে সাহায্য করতে গিয়ে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে বিজেপি।’
এরপর রাহুল একই কথা ‘এক্স’ মারফতও জানান। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ভারতের অর্থনীতি মৃত। মোদি মেরে ফেলেছেন।’ এরপর পাঁচটি কারণ দেখিয়ে রাহুল ব্যাখ্যা করেন, কেন ও কী কারণে ভারতের অর্থনীতির পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটেছে—১. আদানি-মোদি অংশীদারত্ব; ২. নোট বাতিল ও ত্রুটিযুক্ত জিএসটি; ৩. ভারতে যন্ত্রাংশ জোড়া লাগানো বা ‘অ্যাসেম্বল ইন ইন্ডিয়া’ নীতি; ৪. মধ্যম ও ক্ষুদ্র শিল্প ধ্বংস করে দেওয়া এবং ৫. কৃষকদের নাভিশ্বাস তুলে দেওয়া।
এই পাঁচ কারণ দেখানোর পর রাহুল লেখেন, ‘দেশের যুব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ মোদি তছনছ করে দিয়েছেন। কারণ, কোথাও কোনো চাকরি নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতি নিয়ে রাহুল বলেন, ‘দেখে নেবেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি হবে। ট্রাম্পই সেই চুক্তির সংজ্ঞা ঠিক করবেন, মোদি স্রেফ তাঁর নির্দেশ মেনে নেবেন।’
রাহুল আরও বলেন, ‘মোদি স্রেফ এক ব্যক্তি বিশেষের জন্য কাজ করেন। শিল্পপতি গৌতম আদানি। দেশের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও পররাষ্ট্রনীতি তিনি ধ্বংস করে দিয়েছেন।’