পানবরজে কাজ করার সময় শিয়ালের আক্রমণ, আহত ১৩
Published: 6th, June 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারায় পানবরজে কাজ করার সময় শিয়ালের কামড়ে এক নারীসহ ১৩ জন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের সাইপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিদের সবাই বাসুপাড়া ইউনিয়নের সাইপাড়া ও হলুদঘর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে সাইপাড়া গ্রামের ইমান আলী (৪৫), পারভিন খাতুন (৩৪) ও ফারুক হোসেন (৬৮) বেশি আহত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন জানান, আজ সকালে তাঁরা পানবরজে কাজ করতে গিয়েছিলেন। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিয়াল আক্রমণ করে তাঁদের হাত–পায়ে কামড় দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এভাবে সকাল আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে পানবরজে কয়েকজনকে কামড় দেয় শিয়ালটি। এ ঘটনার পরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাঁরা পানবরজে যাওয়া বন্ধ করেছেন। সাইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে আপাতত বাইরে যাচ্ছি না।’
আহত ইসাহাক আলী (৬৭) বলেন, ‘সকালে পানবরজে কাম করার সুময় পিছন থেইক্যা একটা শেয়াল আইস্যা খচ কইরা কামড় দিইয়্যা চলে গেছে।’ সাইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপির স্থানীয় নেতা ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আজ সকালে পানবরজে গিয়ে শিয়ালের কামড়ের শিকার হয়েছি। পেছন থেকে লাফ দিয়ে শিয়াল কামড় দিয়েই চলে গেছে।’
আজ সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিয়ালের কামড়ে আহত ১২ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা লোকমান হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এসব রোগীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশের পায়ে ক্ষত হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আহসান হাবিব আজ সকালে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শিয়াল সাধারণত দুটি কারণে আক্রমণ করে। প্রথমত, কেউ প্রাণীগুলোকে আঘাত করলে সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণে যায়। আরেকটি হলো খাদ্যসংকট। এখন শিয়ালের খাবারের খুব অভাব। ক্ষুধার্ত হয়ে এগুলো লোকালয়ে গিয়ে লোকজনের ওপর আক্রমণ করে। মনে হচ্ছে, ক্ষুধার্ত শিয়ালই আক্রমণ করেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে এবং আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান