লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক রেদোয়ান সালেহীন নাঈমসহ অন্তত ১০ জনকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (৮ জুন) রাত ৯টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

রামগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, “খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া মাসুদ, তুষার ও কামালকে আটক করা হয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার বিকেলে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের শৈরশই গ্রামের গনক বাড়ির উঠানে রাহুল ও সাফোয়ান নামে দুই কিশোর ফুটবল খেলছিল। তখন একই বাড়ির এনজিও কর্মী সোহাগ আলমের এক বছর বয়সী শিশু আনাছুর রহমানের মাথায় ফুটবল গিয়ে লাগে। এতে সে আহত হয়। এ ঘটনায় আহত শিশুর মা আমেনা আক্তার বিথী রাহুল ও সাফোয়ানের কাছে ফুটবল মারার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তখন রাহুল ও সাফোয়ানের স্বজনদের সঙ্গে আমেনা আক্তারের বাকবিতাণ্ডর ঘটনা ঘটে।

আরো পড়ুন:

ঈদে বিএমইউর বহির্বিভাগ খোলা থাকবে ৫, ৮ ও ১১ জুন

দেশে-বিদেশে আইসিইউতে ১ বছর, অবশেষে চোখ খুললেন জব্বার

সন্ধা সাড়ে ৬টার দিকে শিশু শিশু আনাছুর রহমানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাকে তার বাবা সোহাগ আলম রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে রওনা হন। এসময় রাহুলের বাবা রাজন, সাফোয়ানের বাবা লিপনসহ কামাল এবং জাহাঙ্গীর সোহাগকে আইনের আশ্রয়ে না নেওয়ার হুমকি দেন। 

শিশু আনাছুরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সংলগ্ন আঙ্গারপাড়া এলাকার রাহুল ও সাফোয়ানের আত্মীয় মাসুদ, তুষার, কামালসহ কয়েকজন হাসপাতালে যান। এক পর্যায়ে তারা আনাছুরের ফুফু জান্নাতুল ফেরদাউসকে চুল টেনে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। 

বিষয়টি আনাছুরের বাবা সোহাগ আলম তার নিকটাত্মীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রেদোয়ান সালেহীন নাঈম, আজিজ শাকিল, সাঈদ আলম শাহীন, জাহীদ হাসান পাবেল, তারেক আজিজ, সায়মন স্যাম, তারেককে জানান। এরপর তারা হাসপাতালে যান। 

মাসুদ, তুষার, কামাল ও লিটনসহ ২০-২৫ জন বাঁশ, লাঠি ও কাঠ নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে রেদোয়ান সালেহীন নাঈম, আজিজ শাকিল, সাঈদ আলম শাহীন, জাহীদ হাসান পাবেল, তারেক আজিজ, সায়মন স্যাম, তারেককে মারধর করে। এ ঘটনা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক খবরের কাগজ রামগঞ্জ প্রতিনিধি রায়হানুর রহমানকেও মারধর করা হয়। আহতরা সবাই রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। 

রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

আনোয়ার হোসেন বলেন, “হাসপাতালে ঢুকে মারধর করার ঘটনায় আমরা নিজেরাও উদ্বিগ্ন। আমাদের চিকিৎসক ও নার্স তারাও অনিরাপদ।”

ঘটনার খবর পেয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম রাত ১০টার দিকে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। তিনি বলেন, “এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আটক করতে হবে। আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জড়িতদের আটক করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর আটক অভ য গ স ব স থ য কমপ ল ক স র মগঞ জ উপজ ল এ ঘটন ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ