নাক, কান ও গলার (ইএনটি) চিকিৎসক নেই। একইভাবে খালি পড়ে রয়েছে সার্জারি, গাইনি, মেডিসিন আর চক্ষুরোগের চিকিৎসকের পদও। এমনই অবস্থা লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের। তবে কেবল এই হাসপাতাল নয়, চিকিৎসকসংকট রয়েছে লক্ষ্মীপুরের ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ১৭টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রেও। এতে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১৪৬টি। এর মধ্যে ৬০টি পদেই ৫ থেকে ৭ বছর ধরে চিকিৎসক নেই। চিকিৎসকসংকটের বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। সর্বশেষ ৩০ মে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। এ হাসপাতালে ২৩ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি পদে চিকিৎসক নেই। এতে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গত বুধবার হাসপাতালটির বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের। টিকিট কাউন্টার ও ওষুধের কাউন্টারের সামনেও দুই শতাধিক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। আর উপজেলা পর্যায়ের রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০ শয্যাবিশিষ্ট। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে আরও ১৭টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। জেলার সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪৬ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু কর্মরত ৮৬ জন চিকিৎসক। ৬০ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য।

লক্ষ্মীপুরের ভাবানীগঞ্জ গ্রাম থেকে আসা কণা মজুমদার নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তাঁর ৮০ বছর বয়সী মা রীনা মজুমদার শ্বাসকষ্টের রোগী। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তিনি বহির্বিভাগে অপেক্ষা করছেন। রোগীর চাপ বেশি থাকায় চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।

চিকিৎসকসংকটের বিষয়টি স্বীকার করেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে সাত শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। শয্যা খালি না থাকায় বারান্দার মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। এর মধ্যে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। আর উপজেলা পর্যায়ের রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০ শয্যাবিশিষ্ট। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে আরও ১৭টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। জেলার সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪৬ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু কর্মরত ৮৬ জন চিকিৎসক। ৬০ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য।

গত মঙ্গলবার রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ১৭ জন রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এর মধ্যে ১০ জন নারী ও শিশু। ওই কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মানস মজুমদার তাঁদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে একজন চিকিৎসক থাকলেও তিনি সংযুক্তিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত বলে জানা যায়।

হায়দারগঞ্জ এলাকার চর আবাবিল গ্রামের শহিদুল আলম বলেন, হায়দারগঞ্জ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক নেই। এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তাই প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে রায়পুর শহরে গিয়ে চিকিৎসক দেখানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। অধিকাংশ মানুষ গ্রামের ওষুধের দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ সেবন করেন।

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি  প্রতি মাসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। সর্বশেষ গত ৩০ মে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। তিনি আরও বলেন, সারা দেশেই চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। চিকিৎসকস্বল্পতার কারণে রোগীদের সেবা দিতে বেগ পেতে হয়। এরপরও রোগীরা যাতে সেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সে চেষ্টা করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স চ ক ৎসক ন ই পর য য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে চিকিৎসকের ৬০টি পদই শূন্য, সেবা ব্যাহত

নাক, কান ও গলার (ইএনটি) চিকিৎসক নেই। একইভাবে খালি পড়ে রয়েছে সার্জারি, গাইনি, মেডিসিন আর চক্ষুরোগের চিকিৎসকের পদও। এমনই অবস্থা লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের। তবে কেবল এই হাসপাতাল নয়, চিকিৎসকসংকট রয়েছে লক্ষ্মীপুরের ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ১৭টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রেও। এতে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১৪৬টি। এর মধ্যে ৬০টি পদেই ৫ থেকে ৭ বছর ধরে চিকিৎসক নেই। চিকিৎসকসংকটের বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। সর্বশেষ ৩০ মে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। এ হাসপাতালে ২৩ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি পদে চিকিৎসক নেই। এতে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গত বুধবার হাসপাতালটির বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের। টিকিট কাউন্টার ও ওষুধের কাউন্টারের সামনেও দুই শতাধিক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। আর উপজেলা পর্যায়ের রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০ শয্যাবিশিষ্ট। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে আরও ১৭টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। জেলার সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪৬ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু কর্মরত ৮৬ জন চিকিৎসক। ৬০ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য।

লক্ষ্মীপুরের ভাবানীগঞ্জ গ্রাম থেকে আসা কণা মজুমদার নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তাঁর ৮০ বছর বয়সী মা রীনা মজুমদার শ্বাসকষ্টের রোগী। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তিনি বহির্বিভাগে অপেক্ষা করছেন। রোগীর চাপ বেশি থাকায় চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।

চিকিৎসকসংকটের বিষয়টি স্বীকার করেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে সাত শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। শয্যা খালি না থাকায় বারান্দার মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। এর মধ্যে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। আর উপজেলা পর্যায়ের রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০ শয্যাবিশিষ্ট। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে আরও ১৭টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। জেলার সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪৬ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু কর্মরত ৮৬ জন চিকিৎসক। ৬০ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য।

গত মঙ্গলবার রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ১৭ জন রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এর মধ্যে ১০ জন নারী ও শিশু। ওই কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মানস মজুমদার তাঁদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে একজন চিকিৎসক থাকলেও তিনি সংযুক্তিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত বলে জানা যায়।

হায়দারগঞ্জ এলাকার চর আবাবিল গ্রামের শহিদুল আলম বলেন, হায়দারগঞ্জ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক নেই। এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তাই প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে রায়পুর শহরে গিয়ে চিকিৎসক দেখানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। অধিকাংশ মানুষ গ্রামের ওষুধের দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ সেবন করেন।

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি  প্রতি মাসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। সর্বশেষ গত ৩০ মে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। তিনি আরও বলেন, সারা দেশেই চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। চিকিৎসকস্বল্পতার কারণে রোগীদের সেবা দিতে বেগ পেতে হয়। এরপরও রোগীরা যাতে সেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সে চেষ্টা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ