কম আলোচনায় থাকা ‘উৎসব’ মুক্তির পর দর্শক ভালোবাসায় সিক্ত
Published: 10th, June 2025 GMT
ঈদে মুক্তি পাওয়া সব কম প্রচারণায় ছিল ‘উৎসব’। কিন্তু মুক্তির পর চমকে দিয়েছে ‘উৎসব’ নামের এক সাদা-সিধে পারিবারিক গল্প। কেবল চমক নয়, হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে এটি দর্শকদের কাছে। হলভর্তি মানুষ, চোখে জল আর মুখে প্রশংসা—এটাই এখন ‘উৎসব’–এর আসল পোস্টার।
ঢাকার সিনেমা হলগুলোতে গেল তিন দিন ধরে প্রতিটি শো যাচ্ছে হাউসফুল। সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেকেই পরিবার নিয়ে এসেছেন ছবিটি দেখতে। হল থেকে বের হয়ে কারও চোখ ভেজা, কেউ আবার মৃদু হাসছেন। বেশিরভাগের মুখেই এক অভিন্ন প্রতিক্রিয়া—ভাবতেই পারিনি এত ভালো সিনেমা হবে!
একজন দর্শক বললেন, এই ঈদে সত্যিকার অর্থেই পরিবার নিয়ে দেখার মতো একটা সিনেমা পেয়েছি। ফ্যামিলি এন্টারটেইনমেন্ট বলতে যেটা বোঝায়, এটাই সেটা।
আরেকজন বললেন, তাণ্ডবের মধ্যে একটা উৎসবের মতো ছবি দরকার ছিল। নস্টালজিয়ায় নিয়ে গেল। ক্লাসিক কাল্ট হয়ে থাকবে।"
কেউ কেউ তো এক ধাপ এগিয়ে বলেই ফেললেন—উৎসব না দেখলে মনে হবে আপনি এই ঈদে কোনো সিনেমাই দেখেননি!"
এই ভালোবাসায় আপ্লুত পরিচালক তানিম নূর। বলেন, এটা একেবারেই অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। 'উৎসব' যেন সত্যিই ঈদের মধ্যে এক আলাদা উৎসব তৈরি করে দিয়েছে। প্রতিটি শো হাউসফুল, মানুষ কথা বলছে, অন্যদের জানাচ্ছে—এটাই আমাদের বড় অর্জন।
তানিম নূর আরও যোগ করেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি—এই সিনেমা পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ। সেই সতর্কতা মানুষ মেনেও চলেছে। পরিবার নিয়েই আসছে, আর উপভোগ করছে।
ডোপ প্রডাকশনস এবং লাফিং এলিফ্যান্ট প্রযোজিত ‘উৎসব’-এর কাহিনি লিখেছেন তানিম নূর, আয়মান আসিব স্বাধীন, সুস্ময় সরকার ও সামিউল ভূঁইয়া। অভিনয়ে এক অনন্য তারকাবহর—জাহিদ হাসান, জয়া আহসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সৌম্য জ্যোতি, সাদিয়া আয়মান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র স ন ম পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ছুটির দিন যেন অন্যরকম ঈদ’
ঈদের ছুটির রোদেলা দিনে রাজধানীর মিরপুর যেন রূপ নিয়েছে এক উৎসবে।
পবিত্র ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে রবিবার (৮ জুন) দুপুর হতেই মানুষের ঢল নামে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। শিশুদের হাত ধরে বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা মামা-মামিরা এসেছেন প্রিয়জনদের সঙ্গে।
গরমকে উপেক্ষা করে রাজধানী ও আশপাশের অঞ্চল থেকে নানা বয়সী মানুষ জড়ো হয়েছেন বন্যপ্রাণীর দেখা পেতে, প্রাণের ছোঁয়া খুঁজতে। দুপুর থেকেই চিড়িয়াখানার প্রবেশদ্বার হয়ে ওঠে সরগরম। দীর্ঘ লাইন, টিকিটের ধাক্কাধাক্কি, হকারদের হাঁকডাক, রঙিন খেলনার আকর্ষণ-সব মিলিয়ে এক নিখাদ উৎসবের আবহ।
সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস শিশুদের
চিড়িয়াখানায় পা রেখেই শিশুদের চোখ যেন ছুটে যায় বানরের খাঁচার দিকে। কারও হাতে কলা, কারও হাতে বাদাম। ছোট্ট আতিক আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, “আমি বানরকে খাবার দিছি। ও কাছে আসছিল, তখন অনেক মজা লাগছে।”
বাঘ, সিংহ, হরিণ আর রঙিন পাখিদের দেখে চঞ্চল হয়ে উঠছে কচিকাঁচারা। তাদের চোখে যেন এক রূপকথার জগৎ। বড়রাও যেন ফিরে গেছেন নিজেদের শৈশবের কোনো এক বিকেলে। কেউ ক্যামেরায় বন্দি করছেন প্রাণীর ছবি, কেউ ভিডিও করছেন সন্তানদের উচ্ছ্বসিত মুখ।
বিশ্রাম ও নিরাপত্তায় স্বস্তি
জাতীয় চিড়িয়াখানার বিস্তৃত সবুজ প্রান্তর, ছায়াঘেরা বিশ্রাম স্থান ও প্রশস্ত হাঁটার পথ দর্শনার্থীদের গরমের মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ড. মো. আতিকুর রহমান জানান, “ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৯০ হাজার দর্শনার্থী আসছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ছয় দিনে ছয় লাখের বেশি দর্শনার্থী হতে পারে।”
বিরক্ত দর্শক
তবে উৎসবের এই আনন্দে কিছু অসন্তোষও মিশে রয়েছে। হকারদের ঘিরে তৈরি হওয়া ভিড় অনেক দর্শনার্থীকেই বিরক্ত করছে। সরকারি চাকরিজীবী করিম উদ্দিন বলেন, “বাচ্চাদের নিয়ে এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচায় যেতেই হকাররা বারবার কিছু কিনতে বলছে। এতে বিরক্ত হচ্ছি।”
বিকেলে ভিড় বাড়ে
চিড়িয়াখানর একজন কর্মচারী শাহ আলম বলেন, “শনিবারের তুলনায় আজ দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি।”
পান বিক্রেতা আলম বলেন, “রোদ একটু কম হলে ভেতরে থাকত আরো লোক। তবে যারা ঢুকছেন, তারা বেশি সময় থাকছেন না। বিক্রিও কম।”
বেসরকারি চাকরিজীবী আহমেদ বলেন, “গ্রাম থেকে মা ও বাবা এসেছেন। সবাইকে নিয়ে বের হলাম। শিশুরা খুব উপভোগ করছে।”
টিকিট লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বাছির জামান বললেন, “ছেলে-মেয়েসহ ১৬ জন এসেছি কেরাণীগঞ্জ থেকে। ভেবেছিলাম খুব ভিড় হবে। কিন্তু সহজেই টিকিট পেয়েছি, এটা ভালো লেগেছে।”
চিড়িয়াখানার ১০টি টিকিট কাউন্টারের মধ্যে চালু রয়েছে চারটি। ফলে কিছুটা অসুবিধা হলেও দর্শনার্থীরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন। বাঁশ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী গেট দিয়েও প্রবেশ করতে দেখা গেছে অনেককে।
দর্শনার্থী বশির হোসেন বললেন, “ছুটির দিনে নাগরিক জীবনের রুটিন ভেঙে পরিবার নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় সময় কাটানো এখন এক ধরনের শহুরে সংস্কৃতি। গরম, ভিড়, হকারদের হট্টগোল সব পেরিয়ে মানুষ খুঁজছে কিছু স্বস্তি, কিছু আনন্দ। আর সেই আনন্দেই প্রাণ জেগে ওঠে পশুপাখির ঘেরা এই ছোট্ট জগতে। মিরপুরের এই সবুজ পরিসরে ছুটির দিন যেন হয়ে ওঠে এক অন্যরকম ঈদ।”
ঢাকা/এএএম/এসবি